হিজবুত তাহরীর কর্মসূচিতে পুলিশের টিয়ারশেল-সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ

বায়তুল মোকাররমের সামনে নিষিদ্ধ হিযবুত তাহরীর মিছিলে পুলিশের লাঠি চার্জ, টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক নিরাপত্তা প্রস্তুতির মধ্যেও নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীর পূর্ব নির্ধারিত ‘মার্চ ফর খিলাফত’ কর্মসূচি উপলক্ষে গতকাল রাজধানীতে স্বল্প সময়ের মিছিল করেছে। তবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় নিষিদ্ধ সংগঠনটির কর্মসূচি শেষ পর্যন্ত প- হয়।
হিযবুত তাহরীর নামে এ সংগঠন পোস্টার ছাপিয়ে আগেই ঘোষণা দিয়েছিলো রাজধানীতে তারা ৭ মার্চ ‘মার্চ ফর খিলাফত’ কর্মসূচি পালন করবে। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল জুম্মার নামাজের দুই ঘণ্টা আগে থেকেই বায়তুল মোকাররমের ফটকগুলোতে অবস্থান নেয় র্যাব, পুলিশ ও সেনা সদস্যরা। বায়তুল মোকাররমে নামাজ পড়তে আসা মুসল্লিদের মধ্যে যারা ব্যাগ হাতে আসেন, তাদের তল্লাশি করে পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা। কারো কারো কাছে পরিচয় ও আরো কিছু তথ্য জানতে চায় তারা। র্যাব-পুলিশের সদস্যদের হাতে গ্যাস গান, শটগানসহ দাঙা দমনের সরঞ্জাম দেখা যায়। আশপাশে পুলিশের সাঁজোয়া যান এবং গরম পানির গাড়িও মোতায়েন করা হয়। কয়েকটি জায়গায় পুলিশের সঙ্গে সেনাবাহিনীকে অবস্থান করতে দেখা গেছে। কিন্তু এতো নিরাপত্তার মধ্যেও মিছিল করে হিযবুত তাহরীর।
গতকাল জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকারমে জুমার নামাজ শেষ হতে না হতেই ‘মার্চ ফর খিলাফত’ লেখা ব্যানার নিয়ে মসজিদের গেট এলাকা থেকে মিছিল বের করে সংগঠনটি। তারা খিলাফত ভিত্তিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার পক্ষে সেøাগান দিতে থাকেন। ওই এলাকায় আগে থেকেই পুলিশ সদস্যদের সতর্ক উপস্থিতি ছিলো। এরপরেও পুলিশের বাধা অতিক্রম করে পল্টন মোড় হয়ে নাইটিঙ্গেল মোড়ের দিকে এগোতে থাকে মিছিলটি। এ সময় পুলিশ আবার তাদের থামানোর চেষ্টা করে। একপর্যায়ে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। ছোড়া হয় সাউন্ডগ্রেনেড। মিছিলে লাঠিচার্জও করা হয়। পুলিশের তৎপরতায় ছত্রভঙ্গ হয়ে বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়ে মিছিলকারীরা। অনেকে আশপাশের গলিতে আশ্রয় নেয়। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে কয়েকজনকে আটক করতে দেখা যায়। এ সময় হিযবুত তাহরীরের সদস্যদেরও পুলিশের দিকে ইটপাটকেল ছুড়তে দেখা যায়।
এদিকে হিযবুত তাহরীর সাথে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়াকালে আশপাশের সড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় যানজট সৃষ্টি হয়। প্রায় ঘণ্টাখানেক পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এরপরে যান চলাচল শুরু হয়। সংঘর্ষকালে মসজিদে আসা মুসল্লী ও স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়।
পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার শাহরিয়ার আলী বলেন, হিযবুতের মিছিল ছত্রভঙ্গে পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে, টিয়ারশেল ছুঁড়েছে। কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে।
ঢাকা মেডিকেল সূত্র জানায়, হিযবুত তাহরীর মিছিলের সংবাদ সংগ্রহের কালে সু-অর্পন অর্ক (৩৩) ও মোহাম্মদ সৌরভ (৪০) নামে দুইজন সাংবাদিক গুরুতর আহত হয়। তাদেরকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) কামাল হোসেন জানান, ঢামেক হাসপাতাল এলাকা থেকে ওই নিষিদ্ধ সংগঠনের সাজ্জাদ হোসেন (২৫), রেওদুয়ান হাসান (২১), হাবিবুর রহমান (২৪) ও আব্দুল্লাহ (২০) নামে চারজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
গতকাল দুপুরে পুলিশ সদরদফতরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর এ জানান, হিযবুত তাহরীর একটি নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন। আইন অনুযায়ী এদের সব কার্যক্রম শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার ডিএমপির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জননিরাপত্তার জন্য হুমকি বিবেচনায় নিয়ে ২০০৯ সালের ২২ অক্টোবর বাংলাদেশ সরকার হিযবুত তাহরীরকে নিষিদ্ধ সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করে। সন্ত্রাসবিরোধী আইন-২০০৯ অনুযায়ী, নিষিদ্ধ সংগঠনের যেকোনো ধরনের সমাবেশ, মিছিল, পোস্টার ও লিফলেট বিতরণ বা প্রচারমূলক কার্যক্রম ফৌজদারি অপরাধ। ডিএমপি আরো জানায়, হিযবুত তাহরীরসহ কোনো নিষিদ্ধ সংগঠন যদি সভা-সমাবেশ বা প্রচারমূলক কার্যক্রম পরিচালনার চেষ্টা করে, তবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। গতকাল শুক্রবারও পুলিশসদর থেকে এক বিবৃতিতে হিযবুত তাহরীরকে নিষিদ্ধ সংগঠন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে গোপনে সাংগঠনিক কর্মকা- চালিয়ে আসা সংগঠন হিযবুত তাহরীর গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন থেকে অনেকটা প্রকাশ্যে কার্যক্রম চালাচ্ছে। নানা দাবিতে মিছিলের পাশাপাশি ঢাকায় গোলটেবিল বৈঠকও করেছে সংগঠনটি। চট্টগ্রামেও পালন করেছে নানা কর্মসূচি।
এর আগে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে রাজধানীর উত্তরা ১১ ও ১২ নম্বর সেক্টর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেফতার করে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। এরা হলেন, মনিরুল ইসলাম (৪০), মোহতাসিন বিল্লাহ (৪০) ও মাহমুদুল হাসান (২১)। তাদের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা করা হয়েছে।
পল্টনে আটক ব্যক্তিকে ছাড়ালেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ : নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহরীর সমর্থককে পিটুনি দেয়া এক ব্যক্তি আটক হওয়ার পর তাকে ছাড়িয়েছেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে গিয়ে সেই ব্যক্তিকে ছাড়িয়ে নিজের গাড়িতে করে নিয়ে যান।
গতকাল হিযবুত তাহরীর সাথে পুলিশের সংঘর্ষকালে পুলিশের পাশাপাশি লুঙ্গি পরা এক ব্যক্তিকেও হিযবুত তাহরীর সদস্যকে পেটাতে দেখা যায়। পরে ওই ব্যক্তিকে আটক করে যৌথ বাহিনী। পরে তাকে ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়। ওই ঘটনার ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার ডিবি কার্যালয়ে যান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি পরে ডিবি কার্যালয়ের ফটক দিয়ে হেঁটে বের হয়ে রাস্তায় অপেক্ষমাণ গাড়িতে করে ওই ব্যক্তিকে নিয়ে যান। পরে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ফেইসবুক পোস্টে লেখেন, ছাড়া পাওয়া ওই ব্যক্তি বায়তুল মোকাররম এলাকায় পানি সরবরাহ করে থাকেন।