Status

রমজানে খোলা খাবারের মান নিয়ে প্রশ্ন, তবুও জমজমাট বিক্রি

রমজানে চাহিদা বাড়ে বিশেষ কিছু খাবারের। দোকানে দোকানে লেগে থাকে ক্রেতাদের ভিড়। এসব মুখরোচক খাবারের চাহিদা মেটাতে খোলা আকাশের নিচে ও ফুটপাথে দোকান নিয়ে বসেন দোকানিরা। বাহারি নানা খাবারের দাম সহনীয় হলেও খাবারে মান নিয়ে নানা প্রশ্ন তোলেন এক শ্রেণির ক্রেতা। তবে খাবার বিক্রেতাদের হাতে ও মাথায় গ্লাভস থাকলেও খাবার থাকে খোলা অথবা পলিথিনে মোড়ানো। এসবের মধ্যেও বিকেল থেকে জমাটজমাট হয়ে ওঠে রাজধানীর ইফতারের বাজারগুলো, দোকানিদের ব্যস্ততা চলে ইফতারের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত।
পুরান ঢাকার নাজিরা বাজারে বিকাল থেকেই লেগে ছিল প্রচ- যানজট। রিকশার সাথে রিকশা লেগে স্থবির হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল মানুষ। চারদিকে হইচই পড়ে গেছে ইফতারি পণ্য বিক্রির। শাহবাগ থেকে ইফতার কিনতে এসেছেন অনুপম। হাতে ঝুলানো ব্যাগ তিনি বলেন, এই রমজানে আমি আজকেই প্রথম এলাম নাজিরা বাজার। এখানে নানা রকম খাবার পাওয়া যায়, কিন্তু খাবারের যে মান তা রুচিতে বাধেÑ এভাবে খোলা না রাখাটাই উচিত। খাবারের মান নিয়েও দোকানিদের সচেতন হওয়াটা জরুরি বা সরকারিভাবে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
আরমানিটোলা স্কুলের সিদ্দিক কাইয়ুম এসেছেন ইফতারি কিনতে। তিনি বলেন, দোকান থেকে বেরিয়ে ফুটপাথ পযর্šÍ জায়গা নিয়ে শুরু হয়েছে বেচাকেনা। পথচারীরাও অভিযোগ করছেন রাস্তায় যানজটের অন্যতম কারণ রাস্তার আয়তন কমিয়ে আনা হয়েছে এসব দোকানপাট দিয়ে। খাবারে উপর শুধু পলিথিন বা অনেক খাবারে উপর কিছুই নেইÑ একদম খোলা যেগুলো দেখতে অস্বাস্থ্যকর।
রমজানে বাজারে খাবারের মধ্যে রয়েছে আলুর চপ, বেগুনি, পেঁয়াজু, ডিম চপ, চিকেন বল, চিকেন কাকোজ, চিকেন শর্মা, চিকেন ফ্রাই, সাসলিক, অনথন, মাল পোয়া পিঠা, মুরগির রোস্ট, কোয়েল পাখির রোস্ট, গরুর কারি, আস্ত গ্রিল, টিকা কাবাব, ভেজিটেবল রোল, চিকেন রোল, প্যাটিস, চিকেন প্যাটিস, চিকেন শর্মা, চিকেন ললিপপ, চিকেন রেশমি কাবাব, মিনি পিৎজা, চিকেন টিক্কা, মুরগির কাঠি, বিফ জালি কাবাব, চিকেন তন্দুরি, চিকেন কারি, শাহী পরোটা, স্পেশাল পরোটা, টানা পরোটা, চিকেন নাগেট, তন্দুরি চিকেন, পাকিস্তানি মুরগির আস্ত রোস্ট, চিকেন লেগ, দই বড়া, শাহী জিলাপি, মাঠা এবং হালিমসহ নানা রকমের তেলে ভাজা ও সুস্বাদু খাবারে চাহিদা।
এসব খাবার প্রস্তুতে প্রাথমিক নানা পণ্যের চাহিদা বাড়তে থাকে বাজারে। অসাধু ব্যবসায়ীদের মনোবাসনায় যোগান কমতে থাকে বাজারে, শুরু হয় দাম বৃদ্ধির নানা সিন্ডিকেট। ভোক্তাদের এসব জটিলতা নিরসনে বাজারে সরকারিভাবে বিশেষ নজরদারি রাখে ভোক্তা অধিকার পরিষদ। তবুও মানুষের কাছে দ্রব্যমূল্য নিয়ে থাকে অভিযোগ। সমাজের নি¤œবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষের চাহিদা মেটাতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে টিসিবি (ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ) পণ্য সরবরাহকারী ট্রাকে থাকে ভিড়। ঠেলাঠেলির মাঝেই শেষ হয়ে যায় পণ্য বিক্রির সময়। নির্ধারিত কার্ডধারীদের পণ্যের চাহিদাও মেটে না অনেকাংশে। ফলে খালি হাতেই বাড়ি ফেরেন অনেকে।
গতকাল পুরান ঢাকার কোটকাচারি এলাকার সামনে টিসিবি পণ্য ক্রয়ের জন্য হাতে ব্যাগ ও টাকা নিয়ে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় অনেককে। সেখানে কথা হয় রোজিনা আক্তার (৪৫) নামে এক মহিলার সাথে। তিনি বলেন, প্রতিদিন এখানে লম্বা লাইন থাকে কিছু করার নাই। বাজারে চেয়ে দামে একটু পাই বলে সবাই দাঁড়াই। রমজান মাসে জিনিসপত্রের দাম যে হারে বাড়ে আমাদের মতো মানুষের এখানে ছাড়া উপায় নাই। আমাদের তো সেই সামর্থ্য নাই যে, বাজারে গিয়ে ব্যাগ ভরে কিনতে পারব। এ জন্য রোজা রেখে কষ্ট হলেও এখানে দাঁড়াই। টিসিবি সূত্রে জানা যায়, নি¤œআয়ের উপকারভোগী কার্ডধারী পরিবারের মাঝে ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য ভোজ্যতেল ও ডাল সাশ্রয়ী মূল্যে বিক্রির কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়া যেকোনো ভোক্তা লাইনে দাঁড়িয়ে ট্রাক থেকে পণ্য কিনতে পারবেন। ঢাকা মহানগরের ৫০টি স্থানে টিসিবির ট্রাক থেকে এসব পণ্য বিক্রি করা হয়। টিসিবি সূত্রে আরো জানা গেছে, পণ্য বিক্রির আওতা বাড়িয়েছে টিসিবি। কিন্তু ট্রাকপ্রতি পণ্যের বরাদ্দ কমানো হয়েছে। এতদিন টিসিবির একটি ট্রাকে ২৫০ জনের পণ্য বিক্রি করা হতো। তবে গত তিন দিন ধরে প্রতিটি ট্রাকে ২০০ জনের জন্য পণ্য বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। আগে ঢাকায় ৫০ ট্রাক থেকে পণ্য কিনতে পারতেন সাড়ে ১২ হাজার মানুষ। এখন সেটি কমে ১০ হাজারে নেমেছে। অর্থাৎ, শুধু ঢাকাতেই আড়াই হাজার মানুষের বরাদ্দ কমিয়েছে টিসিবি।

Source link

Back to top button