প্রিয়জনের সঙ্গে ইফতার করতে সড়কে যুদ্ধে নগরবাসী

আবিহা নামের আট বছরের শিশু সন্তানের সঙ্গে প্রতিদিন ইফতার করেন বেসরকারি চাকরিজীবী মাহফুজ আবির। ছোট্ট মেয়েটি বাবার জন্য রোজ ইফতারের আগে অপেক্ষা করতে থাকে। সারাদিন সময় কেটে গেলেও ইফতারের কয়েক ঘণ্টা আগে যেন বাবার জন্য অপেক্ষার পালা ফুরায় না আবিহার।
এই শহরে আবিহার মতো হাজার হাজার শিশু অপেক্ষা করতে থাকে ইফতারের আগে কখন পোঁছাবে তাদের মা-বাবা। কর্মস্থল থেকে ফেরার সময় তাই প্রিয় সন্তানের সঙ্গে ইফতার করার জন্য সড়কে এক প্রকার যুদ্ধ করেন এই মা-বাবারা।
মাহফুজ আবির জানান, প্রতিদিন অফিস শেষ করে যেভাবেই হোক ইফতারের আগে বাসায় পৌঁছাই। মেয়েটি অপেক্ষা করে। আমার যেতে দেরি হলে মেয়েটি ইফতার করতে চায় না।
বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে রাজধানীতে তীব্র যানজট দেখা যাচ্ছে। সকাল থেকেই শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ত এলাকাগুলোতে যানজট লক্ষ্য করা যায়। তবে বিকেলে অফিস-আদালত একসঙ্গে বন্ধ হওয়ায় ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়ছেন বাসায় ফেরার উদ্দেশ্যে বের হওয়া মানুষজন।
বিকেলে বনানী, মহাখালী, উত্তরা, গুলশান, বাড্ডা-রামপুরা, আসাদ অ্যাভিনিউ, মিরপুর রোড, কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউ, বিজয় সরণী, মতিঝিলসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় যানজট দেখা যায়।
এসব সড়কে চলাচলরত যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অনেককেই বাস থেকে নেমে অটোরিকশা কিংবা রাইড শেয়ারিং মোটরসাইকেল নিয়ে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা হতে দেখা গেছে। কাউকে আবার বাস থেকে নেমে পায়ে হেঁটেও যেতে দেখা গেছে।
পল্টন থেকে উত্তরায় যাবেন চাকরিজীবী নয়ন আহমেদ। তিনি বলেন, বাসে ওঠার পর থেকেই জ্যাম শুরু। থেমে থেমে মহাখালী পর্যন্ত আসছি। এখন বাকি রাস্তা যেতে কতক্ষণ লাগবে কে জানে।
আরেক চাকরিজীবী ইহসানুল করিম বলেন, রোজা রেখে যানজটেরর মধ্যে বসে থাকা কষ্টকর। তাই হেঁটেই রওনা দিয়েছি।
শিক্ষার্থী মেজবাহ যাবেন ফার্মগেটে। তিনি বলেন, বনানী থেকে বাসে চড়েছি। প্রায় ঘণ্টাখানেক হয়ে যাবে, এখনো পৌঁছাতে পারিনি। রোজা রেখে এমন ভোগান্তি বেশ কষ্টকর।
জানতে চাইলে ট্রাফিক-গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. মফিজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, গত কয়েকদিনের চাইতে আজকে সড়কে গাড়ির চাপ তুলনামূলক বেশি। তবে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে ইফতারের আগে যেন সবাই নির্দিষ্ট গৌন্তব্যে পৌঁছাতে পারে। এই মুহূর্তে বাড্ডা-রামপুরা সড়কে তীব্র যানজট দেখা দিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা মেট্রোপণিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. সরওয়ার বলেন, আজ বৃহস্পতিবার সপ্তাহের শেষ দিন বেশকিছু সড়কে বিকেলের দিকে যানজট রয়েছে। ইফতারের আগে যানজটের মূল কারণ সবাই একসঙ্গে ফিরতে চান। তবে আমরা ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা সবাই একসঙ্গে সড়কে রয়েছি। সবাই যেন নিরাপদে পৌঁছে ইফতার করতে পারেন সেজন্য পরিশ্রম করে যাচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ। যানজট নিরসনে ট্রাফিকের এসি, এডিসি, ডিসি, যুগ্ম কমিশনারসহ সবাই রাস্তায় আছে। ইফতারও সবাই রাস্তায় করছে। আশা করি ইফতারের আগেই মানুষ বাসায় ফিরতে পারবে।
টিটি/এএমএ/জেআইএম