পিরোজপুরে উন্নয়ন প্রকল্পের কয়েক হাজার কোটি টাকা জড়িত স্বৈরাচারের মন্ত্রী-এমপিদের তথ্য চাওয়ায় সাংবাদিককে উপজেলা প্রকৌশলীর হুমকি

পিরোজপুরে পতিত আওয়ামী সরকারের সময়ে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির শত পত্র বেরিয়ে আশা শুরু হয়েছে। যা এখন পিরোজপুর ছাড়িয়ে জাতীয় পর্যায়ে আলোচনার বিষয় হতে দেখা গেছে। শুধু ২০২০ সাল থেকে ২০২৪ সালেই ১৭টি প্রকল্পে ১৬শ কোটি টাকার দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে আওয়ামী সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া, সাবেক মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ.ম রেজাউল করিম, সাবেক সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন মহারাজ এবং সাবেক ২ জন উপজেলা চেয়ারম্যান মিরাজুল ইসলাম মিরাজ ও নুরে আলম শাহীন। এদের সহায়তার অভিযোগ আছে পিরোজপুর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীসহ ১১ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
জানা যায়, ২০২০ সাল থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে নেয়া মোট ১৭টি উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ছিল সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি। এসব কাজের তালিকায় ছিল সড়কের অবকাঠামো উন্নয়ন, ব্রিজ নির্মাণ থেকে শুরু করে বড় বড় প্রকল্প। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়ই ওঠে নানা অনিয়মের অভিযোগ। তখনকার রাঘববোয়ালরা সব ম্যানেজ করে চালিয়ে যান তাদের অপকর্ম। ছোট ছোট খালেও নেয়া হয় বৃহদাকারের ব্রিজ কালভার্ট। একই রাস্তার প্রকল্প দেখানো হয়েছে দুই এর অধিক এমনকি চার বার। সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ, কোন কাজ না করেই তুলে নেয়া হয় হাজারো কোটি টাকা। প্রকল্পের চুক্তি মূল্য থেকেও বেশী বিল উত্তোলন করে নেয়া হয়েছে। স্কিমের শতভাগ কাজ না করে সম্পূর্ণ বিল উত্তোলন করে নেয়া হয়েছে। চুক্তি বদ্ধ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তে অন্য ঠিকাদার কে বিল প্রদান করেছে এলজিইডির কর্মকর্তাগণ। বিনিময়ে তারাও হয়েছেন শত কোটি টাকার মালিক। ১৭টি প্রকল্পের মোট স্কিমের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৮১০টি। যার ৩৭০টি স্কিমের নথি গায়েব এবং প্রমাণ মেলে ১৬৪৭ কোটি টাকা লোপাটের।
এ সবই মন্ত্রণালয়ের তদন্তে বেরিয়ে আসে। যার কারনে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এলজিইডির তৎকালীন পিরোজপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সত্তারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের সহ আদালত তার বিদেশ যাবার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সত্তারের সাথে সহযোগীতা করে তার প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী ও কর্মকর্তাগণ। অভিযোগ আছে নাজিরপুরের প্রকৌশলী জাকির হোসেনের বিরুদ্ধেও। এ সকল ব্যক্তিদের দুর্নীতির অভিযোগে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন হয়েছে।
এদিকে পিরোজপুর এলজিইডির দুর্নীতির তদন্তে গত ২৬ ফেব্রুয়ারী দুদক ইন্দুরকানীতে তদন্তে যায়। এ বিষয়ে এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী লায়লা মিথুনের কাছে এক সাংবাদিক তথ্য জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের ডান্ডারবারি দেওয়ার হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ইন্দুরকানী উপজেলার সাংবাদিকরা মানববন্ধন করে প্রকৌশলীর বিচার দাবী করেন।
মন্ত্রনালয়ের তদন্তে আরও বেরিয়ে আসে জেলার বিভিন্ন প্রকল্পের কোন নির্মাণ কাজ না করেও তুলে নেয়া হয় সম্পূর্ণ বিল। কোন কোন প্রকল্প শুরু করেই উঠিয়ে নেয়া হয় সম্পূর্ণ বিল এবং এতে সহায়তা করে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীরা। ফলে দুর্নীতি সুস্পষ্ট অভিযোগে এর প্রমাণ পাওয়ায় পিরোজপুর স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী বিভাগের ৩ প্রকৌশলী সহ ৫ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়। বরখাস্তকৃতরা হলেন হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা একে এম মোজাম্মেল হক খান, পিরোজপুর সদর উপজেলা সাবেক প্রকৌশলী মোঃ মোরশেদ সরদার, নাজিরপুর উপজেলা সাবেক প্রকৌশলী মোঃ জাকির হোসেন, ভান্ডারিয়া উপজেলার সাবেক প্রকৌশলী মোঃ বদরুল আলম ও নেছারাবাদ উপজেলা প্রকৌশল অফিসের সার্ভেয়ার মোঃ রিপন হাওলাদার। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা সহ সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গুলোকে কালো তালিকা ভুক্ত করা হয়েছে। এদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়াসহ লুটপাটের অর্থ উদ্ধারের দাবী পিরোজপুর বাসীর।