কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শেষ সুলভ মূল্যের মাংস, ডিম, দুধ; সরবরাহ বাড়ানোর দাবি

পবিত্র রমজান উপলক্ষে ঢাকা শহরের ২৫টি স্থানে গতকাল (৩ মার্চ) সুলভ মূল্যে গরুর পাস্তুরিত দুধ, ফার্মের মুরগির ডিম, ব্রয়লার মুরগি ও গরুর মাংস বিক্রি করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
সকাল সাড়ে ৯টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে পিক-আপ ভ্যানে করে বিক্রি শুরু হলেও অধিকাংশ স্থানে মাত্র দেড় থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যেই বিক্রি শেষ হয়ে গেছে। অনেকে পণ্য না পেয়ে ফিরে গেছেন খালি হাতে। ফলে পণ্যের সরবরাহ আরও বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন ক্রেতারা।
সোমবার কয়েকটি স্পট ঘুরে দেখা যায়, প্রতিকেজি গরুর মাংস ৬৫০ টাকা, চামড়া ছাড়ানো ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ২৫০ টাকা, পাস্তুরিত দুধ প্রতি লিটার ৮০ টাকা এবং ডিম প্রতি ডজন ১১৪ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে।
শাহজাদপুরে সকাল সাড়ে ১০টায় বিক্রি কার্যক্রম শুরু হয়। এই পয়েন্টের জন্য গরু ৬০ কেজি, মুরগি ৬০ কেজি, ডিম ১২০০ পিস এবং দুধ ৮০ লিটার বরাদ্দ ছিল। বেলা সাড়ে ১২ টার মধ্যেই এখানে সব ধরনের পণ্য বিক্রি শেষ হয়ে যায়। এরমধ্যে গরুর মাংসের চাহিদা বেশি থাকায় তা শেষ হয়ে যায় ১২টার মধ্যে।
বাজারে দাম বেশি হওয়ায় এখন অনেক মানুষ ভ্যান থেকেই মাংস, ডিম ও দুধ কিনছেন।
শাহজাদপুরের ভ্যানের দায়িত্বে থাকা শাহাদাত হোসেন বলেন, “মানুষের চাহিদা বেশি। কালকের চেয়ে আজ ভিড় বেশি ছিল। আমাদের যতটুকু বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তা বিক্রি করেছি।”
শাহজাদপুরে পণ্য কিনতে আসা জাহিদুল ইসলাম বলেন, “বাজারে দাম বেশি। এখানে দাম কিছুটা কম থাকায় কিনতে এসেছি। সিরিয়াল আছে। পণ্য সরবরাহ আরও বাড়ালে ভালো হতো।”
একই চিত্র দেখা গিয়েছে রাজধানীর খামারবাড়িতেও। সকাল সাড়ে ৯টায় শুরু হলেও বেলা ১২টার মধ্যেই বিক্রি শেষ হয়ে যায়। এই স্পটে ৬০ কেজি গরুর মাংস, ৮৮ কেজি মুরগির মাংস, ২০২০টি ডিম এবং ২১১ লিটার দুধ বরাদ্দ ছিল।
দুপুরে এখানে মাংস কিনতে এসে ফিরে গেছেন মো. জামালুদ্দিন। তিনি বলেন, “শুনেছিলাম এখানে কম দামে মাংস বিক্রি হয়। কিন্তু এসে পাইনি। বিক্রি নাকি শেষ।”
এ পয়েন্টের দায়িত্বে থাকা মো. মোকাদ্দাস ইসলাম মিতু বলেন, “মানুষের চাহিদা অনেক বেশি। অনেক মানুষ আসছেন। কিন্তু ১২টার দিকেই আমাদের পণ্য শেষ হয়ে গেছে।”
যদিও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা প্রতিদিন ৬০ হাজার পিস ডিম, ৬ হাজার লিটার পাস্তুরিত দুধ, ২ হাজার কেজি চামড়া ছাড়ানো ব্রয়লার মুরগি এবং ২ থেকে ২.৫ হাজার কেজি গরুর মাংস বিক্রি করবে—তবে পয়েন্টগুলোতে আরও কম বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এই কার্যক্রমে বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি), বাংলাদেশ ডেইরি অ্যান্ড ফ্যাটেনিং ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিডিএফএফএ), দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাত প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য অংশীজন এবং প্রান্তিক খামারিরা সহযোগিতা করছেন।
রাজধানীর খুচরা বাজারে বর্তমানে প্রতিকেজি গরুর মাংস ৭৫০-৮০০ টাকা, তরল দুধ প্রতি লিটার ১০০-১১০ টাকা ও প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৩৫ টাকায়। অর্থাৎ, সুলভ মূল্যের বিক্রয় কার্যক্রমে এরচেয়ে কম দামে কিনতে পারছেন ভোক্তারা। যদিও চাহিদার চেয়ে পণ্য কম থাকায় অনেকে ফিরে যাচ্ছেন।
ঢাকার যেসব স্থানে সুলভ মূল্যে পণ্য বিক্রি হচ্ছে- সচিবালয়ের পাশে (আব্দুল গণি রোড), খামারবাড়ী (ফার্মগেট), ষাটফুট রোড (মিরপুর), আজিমপুর মাতৃসদন (আজিমপুর), নয়াবাজার (পুরান ঢাকা), বনশ্রী, হাজারীবাগ (সেকশন), আরামবাগ (মতিঝিল), মোহাম্মদপুর (বাবর রোড), কালশী (মিরপুর), যাত্রাবাড়ী (মানিক নগর গলির মুখে), শাহাজাদপুর (বাড্ডা), কড়াইল বস্তি- বনানী, কামরাঙ্গীর চর, খিলগাঁও (রেল ক্রসিং দক্ষিণে), নাখাল পাড়া (লুকাস মোড়), সেগুন বাগিচা (কাঁচা বাজার), বসিলা (মোহাম্মদপুর), উত্তরা (হাউজ বিল্ডিং), রামপুরা (বাজার), মিরপুর ১০, কল্যাণপুর (ঝিলপাড়), তেজগাঁও, পুরান ঢাকা (বঙ্গবাজার) ও কাকরাইল।