Status

ঢাকার সড়ক-ফুটপাথ সবই অচল

ঢাকার সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি। এই কাজ চলে সারা বছরজুড়ে। সড়ক মেরামত কাজে ঢাকা হয়ে পড়ে ক্ষতবিক্ষত। শুধু কী ঢাকার সড়কের বেহাল দশা। সড়কের পাশের ফুটপাথ দিয়েও যেন হাঁটার কোনো পরিস্থিতি নেই। রাজধানীর বিভিন্ন সড়কের খোঁড়াখুঁড়ির মধ্যেই নতুনভাবে কাজ শুরু করা হয়েছে ফুটপাথ মেরামত ও ড্রেন সংস্কারের। কিন্তু এসব কাজ চলছে কচ্চপ গতিতে। কবে শেষ হবে এর ঠিক নেই। ঠিকাদাররা এসব কাজ পাওয়ার পর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করার কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছেন না। অনেক এলাকায় মূল সড়কের পাশাপাশি ফুটপাথ ও ড্রেন কেটে ফেলে রাখা হয়েছে দিনের পর দিন। ড্রেনের স্লাব খুলে রাখার কারণে অনেক এলাকায় ঘটছে দুর্ঘটনা। রিকশা উল্টে পড়ে যাচ্ছে এসব ড্রেনে। কোনো কোনো এলাকায় নর্দমা পরিস্কার কারার কাজ ফেলে রাখা হয়েছে। কোনো এলাকায় নর্দমা থেকে ময়লা উঠিয়ে রাস্তার পাশে রাখা হয়েছে। এসব ছড়িয়ে ছিটিয়ে আবর্জনা সৃষ্টি হচ্ছে। ড্রেন থেকে উঠানো ময়লা আবার ড্রেনের মধ্যেই পড়ে যাচ্ছে। এসব দেখার যেন কেউ নেই।

জানা যায়, নিত্যদিনই দুর্ভোগ পোহাতে হয় নগরবাসীর। সেবা সংস্থার ও সড়ক উন্নয়ন কাজে এসেছে স্থবিরতা। মূল সড়ক, অধিকাংশ অলিগলির সড়কের অবস্থাই বেহাল। তীব্র যানজট, দূষণের পাশাপাশি সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি করায় শহরে নাগরিক দুর্ভোগ বেড়েছে কয়েকগুণ। অনেক সড়কে যান চলাচলও বন্ধ। রাজধানীর মতিঝিল গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হলেও এর আশপাশের বিভিন্ন সড়ক ভাঙাচোরা ও গর্তে ভরা। দীর্ঘদিন সড়কে কাজ বন্ধ থাকায় কঠিন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এলাকাবাসীকে। মতিঝিল টিকাটুলির মূলসড়কের দুই পাশের নর্দমা পরিস্কারের নামে কাজ ফেলে রাখা হয়েছে বেশ কিছুদিন ধরে। ড্রেনগুলো খোলা রেখে কাজ ফেলে রাখার জন্য প্রতিদিনই দুর্ভোগ পোহাচ্ছে এলাকার মানুষ। বর্ষাকে সামনে রেখে তড়িঘড়ি করে সড়কের নিচের জট খোলার চেষ্টা করা হচ্ছে। এই কারণে গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। কুড়িল ফ্লাইওভার থেকে নতুনবাজার পর্যন্ত মেট্রোরেলের ইউটিলিটি স্থানান্তরের কাজ চলমান থাকায় এ সড়কটিতেও যানবাহন চলে আস্তে আস্তে। প্রগতি সরণির বিশ্বরোড থেকে নর্দ্দা, বিমানবন্দর, খিলক্ষেত, কুড়িল আর যমুনা ফিউচার পার্ক এলাকার সড়কের দুই পাশে চলছে এমআরটি লাইন-১ প্রকল্পের ইউটিলিটি স্থানান্তরের কাজ। সাদেক হোসেন খোকা কমিউনিটি সেন্টারের সামনের সড়কের কাজ চলছে ধীরগতিতে। যাত্রাবাড়ী মোড় থেকে দয়াগঞ্জ সড়কে ছোট-বড় গর্ত। দয়াগঞ্জ বাজার অংশের অবস্থা ভয়াবহ। জুরাইন রেলগেট থেকে দয়াগঞ্জ সড়কটিও চলাচলের অনুপযোগী। খিলগাঁও থেকে সবুজবাগ, মুগদা, মানিকনগর, গোলাপবাগ হয়ে সায়েদাবাদ পর্যন্ত সড়কে শত শত গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। পুরান ঢাকার নয়াবাজার, বাবুবাজারের প্রধান সড়কগুলোও খুঁড়ে রাখা হয়েছে। মৌচাক, হাজারীবাগ, ধানমন্ডি, আজিমপুর, পলাশী, লালবাগের বিভিন্ন রাস্তার অবস্থাও ভালো নয়। শাহজাদপুরে সড়ক খানাখন্দ অবস্থায় পড়ে আছে। বাড্ডা লিংক রোড থেকে বাঁশতলা পর্যন্ত সড়কটি ছোটবড় গর্তে ভরা। বাড্ডা লিংক রোড থেকে দক্ষিণ বাড্ডা পর্যন্ত লেক পাড়ের সড়কটিতেও খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। তেজগাঁও সাতরাস্তা, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, ইন্দিরা রোড, মিরপুরের বিভিন্ন সড়কসহ নতুন ওয়ার্ডগুলোর বিভিন্ন সড়কে খানাখন্দ। মোহাম্মদপুর এলাকায় কিছু সড়কে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ চলছে। মাদানী এভিনিউ সড়কের মতো আশপাশের এলাকার সড়কের বেহাল দীর্ঘদিনের। ভাটারা-ছোলমাইদ সড়কটি এক যুগের বেশি আগে নির্মাণ করা হয়। এরপর সংস্কার করা হয়নি। ধুলায় ভরপুর ধোলাইখাল সড়কের আইল্যান্ড ভাঙা, যত্রতত্র ময়লার স্তূপ আর যেখানে-সেখানে ইচ্ছামতো ভ্যান, ঠেলাগাড়ি ও বিভিন্ন গাড়ি পার্ক করে রাখা।

শাহজাহানপুরের বাসিন্দা সারোয়ার জাহান বলেন, ঢাকার বিভিন্ন এলাকার রাস্তাঘাট সংস্কারের নামে রাস্তা ও ফুটপাথ কেটে রাখা হয়। এসব কাজ করে শেষ হবে আমরা জানি না। অলিগলির রাস্তাসহ প্রধান রাস্তায় খোঁড়াখুঁড়ি চলার কারণে ভোগান্তি পোহাতে হয় আমাদের। ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন কার্যক্রম স্থবির। এখন শহরের রাস্তা ঘাটে ধুলাবালির কারণে চলাচল করতে কষ্ট হয়।

ডিএসসিসির প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সড়কের উন্নয়ন কাজ করতে গেলে ওয়াসা, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের লাইন থাকে। তাই খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করলে সমন্বয় করে করতে হয়। সংস্থাগুলো নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ না করায় দ্রুত কার্পেটিংয়ের কাজ করা যায় না।

বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রফেসর শামসুল হক বলেন, সারা বছর চলাচলযোগ্য রাখতে হলে মানসম্মত সড়ক বানাতে হবে। পাশাপাশি বর্ষায় পানিবদ্ধতা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে হবে। পিচঢালাই দেওয়া সড়ক যত ভালোভাবেই তৈরি করা হোক না কেন, পানিবদ্ধতা হলে তা টিকিয়ে রাখা কঠিন। বর্ষা হলেই যে পানিবদ্ধতা হয় তা নয়, অনেক সময় ড্রেন উপচে, ম্যানহোল উপচেও সড়কে পানি আসে। গুণগত মান ঠিক না থাকায় অলিগলির রাস্তা টেকে না। তদারকির অভাব কমবেশি থাকেই। সড়কে কিছুদিন পর কাটাকাটির মানে হলো সঠিক পরিকল্পনার অভাব।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ওয়াসা, ডেসকো পানির ও বিদ্যুতের কাজের জন্য রাস্তা কাটার অনুমতি চেয়ে ডিএনসিসির কাছে আবেদন করেছে। আমরা সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি এই বর্ষায় নতুনভাবে সম্পন্ন করা রাস্তা কাটতে দেওয়া হবে না। বর্ষায় যেন জনগণের ভোগান্তি না হয় সেজন্য এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বর্ষা শেষে একটি নির্দিষ্ট সময়ে তাদের কাজের জন্য অনুমতি দেওয়া হবে। নতুনভাবে সংযুক্ত ১৮টি ওয়ার্ডের অন্তর্গত উত্তরখানের প্রধান সড়কের কার্পেটিং ঈদের আগেই শেষ হবে। ###

 

Source link

Leave a Reply

Back to top button