Status

সাইফুল আলমের বাসায় ট্রাঙ্কভর্তি টাকা

অল্পের জন্য গ্রেফতার এড়ালেন ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্সের (ডিজিএফআই) সাবেক মহাপরিচালক সাইফুল আলম। তবে তার বাসা থেকে স্যুটকেসভর্তি প্রায় আড়াই কোটি টাকা সরিয়ে নেয়ার সময় আটক করা হয়েছে সেই টাকা। তার স্ত্রী লুবনা আফরোজ জানিয়েছেন, পরিবারের প্রয়োজনে দৈনন্দিন বাজার খরচ মেটানোর জন্য এ টাকা বাসায় রাখা হয়েছিলো। জব্দকৃত টাকা জেলা প্রশাসকের নিয়ন্ত্রণাধীন ট্রেজারিতে জমা দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল সাইফুল আলমের বাসা থেকে ২ কোটি ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা নগদ জব্দের তথ্য জানিয়েছেন সংস্থার মহাপরিচালক মো: আক্তার হোসেন।

গতকাল দুপুরে ব্রিফিংয়ে দুদক জানায়, ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্সের (ডিজিএফআই) সাবেক মহাপরিচালক সাইফুল আলমের বাসা থেকে ২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা উদ্ধার করেছে দুদক। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি দুদকের উপ-পরিচালক তাহসিন মুনাবিল হকের নেতৃত্বে একটি বিশেষ টিম অভিযান চালিয়ে তার ক্যান্টনমেন্টের বাসা থেকে ওই টাকা উদ্ধার করা হয়।

ব্রিফিংয়ে দুদক মহাপরিচালক বলেন, তার (সাইফুল আলম) বিরুদ্ধে দুদকে একটি অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ক্যান্টনমেন্টে তার বাসা থেকে ২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। যা জব্দ করা হয়েছে। অভিযানে আমাদের অনুসন্ধান কর্মকর্তা, যৌথ বাহিনীর উপস্থিতিতে টাকা জব্দ করা হয়েছে। সেই টাকা আদালতে দাখিল করা হবে।

এদিকে দুদক থেকে জানা যায়, সাইফুল আলমের ক্যান্টনমেন্টের বাসায় গত বৃহস্পতিবার রাত ১১টা থেকে ভোর ৩টা পর্যন্ত ওই অভিযান চালিয়ে নগদ টাকা জব্দ করা হয়।
তবে নির্ভরযোগ্য আরেকটি সূত্র জানায়, জুলাই-আগস্ট মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার আসামী সাইফুল আলম। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাকে গ্রেফতার করে হাজির করার নির্দেশ দেন। এ নির্দেশনার আলোকে যৌথবাহিনী তাকে গ্রেফতারে অভিযান চালায়। তবে বৃহস্পতিবার রাত ১১টার কিছুক্ষণ আগে গ্রেফতার অভিযানের প্রস্তুতি টের পেয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে যান সাইফুল আলম। আশাপাশে গোয়েন্দা তৎপরতায় নিযুক্ত যৌথবাহিনীর সদস্যরা দেখতে পান সাইফুল আলমের বাসা থেকে দু’টি ব্রিফকেস হাতে নিয়ে বেরিয়ে এসেছেন এক ব্যক্তি। তবে তিনি সাইফুল আলম নন। গোয়েন্দা সদস্যদের সন্দেহ হলে তারা ওই ব্যক্তিকে চ্যালেঞ্জ করেন এবং স্যুটকেস খুলে দেখতে চান। তখনই আড়াই কোটি নগদ টাকা ভর্তি স্যুটকেস আটক করে যৌথবাহিনী। সাইফুল আলম যেহেতু সরকারি কর্মকর্তা, তাই বিষয়টি দুদকের এখতিয়ারভুক্ত। এ কারণে ওই রাতেই দুদকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়। তখন কমিশনের অনুমোদনক্রমে উপ-পরিচালক তাহসিন মুনাবিল হকের নেতৃত্বে একটি টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে টাকা ভর্তি স্যুটকেস জব্দ করে নিয়ে আসে। পরবর্তীতে নিরাপত্তার স্বার্থে সেই টাকা ‘ইনভেন্ট্রি’ করে ট্রাঙ্কে রাখা হয়। সেই ট্রাঙ্ক ট্রেজারিতে পাঠিয়ে দেয়া হয় গতকাল দুপুরের দিকে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সাইফুল আলমের বিরুদ্ধে মামলা রুজুর প্রস্তুতি নিচ্ছিলো দুদক।

প্রসঙ্গত, শেখ হাসিনার দীর্ঘ মাফিয়াতন্ত্রের দোসর হিসেবে চিহ্নিত এই সাইফুল আলম। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো: সাইফুল আলমকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়। এর আগে তিনি ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের কমান্ড্যান্ট ছিলেন। এ ছাড়া তিনি সেনাবাহিনীর কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদফতরের (ডিজিএফআই) মহাপরিচালক এবং ১১ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। গত ১১ সেপ্টেম্বর লেফটেন্যান্ট জেনারেল সাইফুল আলমকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠায় সেনাবাহিনী। এর আগে ৪ সেপ্টেম্বর সাইফুল আলম ও তার স্ত্রী লুবনা আফরোজের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। একইসঙ্গে তাদের সন্তান ও মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবও স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।

Source link

Back to top button