রাকাত হারানোর শঙ্কায় তাড়াহুড়ো, যা বলেছেন নবিজি (সা.)

ফরজ নামাজ জামাতে আদায় করার জন্য জামাত শুরু হওয়ার আগে যত দ্রুত সম্ভব মসজিদে উপস্থিত হওয়া অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ আমল। নবিজি (সা.) এ ফজিলত লাভের চেষ্টা করতে উৎসাহ দিয়েছেন। আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
لَوْ يَعْلَمُ النَّاسُ مَا فِي النِّدَاءِ وَالصَّفِّ الأَوَّلِ، ثُمَّ لَمْ يَجِدُوا إِلاَّ أَنْ يَسْتَهِمُوا عَلَيْهِ لاَسْتَهَمُوا، وَلَوْ يَعْلَمُونَ مَا فِي التَّهْجِيرِ لاَسْتَبَقُوا إِلَيْهِ، وَلَوْ يَعْلَمُونَ مَا فِي الْعَتَمَةِ وَالصُّبْحِ لأَتَوْهُمَا وَلَوْ حَبْوًا
মানুষ যদি আজান ও প্রথম কাতারের সাওয়াবের কথা জানতো এবং লটারি ছাড়া তা লাভের কোন উপায় না থাকতো তবে তারা এর জন্য লটারি করতো। যদি নামাজে দ্রুত মসজিদে উপস্থিত হওয়ার ফজিলত মানুষ জানতো, তবে তারা এর জন্য প্রতিযোগিতা করতো। ইশা ও ফজরের সওয়াব যদি তারা জানতো, তবে তারা এ দুই নামাজের জন্য হামাগুড়ি দিয়ে হলেও মসজিদে আসতো। (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)
মসজিদে আগে উপস্থিত হলে প্রথম কাতারে বসা, জামাতে প্রথম থেকেই শরিক থাকা, নফল আদায় করা যায়, কুরআন তেলাওয়াত করাসহ অনেক আমল ও সওয়াবের কাজের সুযোগও পাওয়া যায়। এ ছাড়া মুমিন ব্যক্তি যতোক্ষণ নামাজের অপেক্ষায় বসে থাকে, তা নামাজের ভেতরে থাকাই গণ্য হয় এবং সওয়াব লেখা হতে থাকে। তাই মসজিদে নামাজের জন্য আগে আগে উপস্থিত হওয়ার চেষ্টা সবারই করা উচিত।
কিন্তু কেউ যদি জামাত শুরু হওয়ার আগে মসজিদে উপস্থিত হতে না পারে, সে মসজিদে পৌঁছার আগেই নামাজ শুরু হয়ে যায়, তাহলে রাকাত ধরার জন্য তাড়াহুড়ো করা, ছুটতে ছুটতে মসজিদের দিকে যাওয়া ঠিক নয়। নবিজি (সা.) এ রকম তাড়াহুড়ো, ছোটাছুটি করতে নিষেধ করেছেন। আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
إِذَا أُقِيمَتِ الصّلاَةُ فَلاَ تَأْتُوهَا تَسْعَوْنَ وَأْتُوهَا تَمْشُونَ عَلَيْكُمُ السّكِينَةُ فَمَا أَدْرَكْتُمْ فَصَلّوا وَمَا فَاتَكُمْ فَأَتِمّوا.
জামাত শুরু হয়ে গেলে আপনারা তাড়াহুড়া করে আসবেন না। বরং স্বাভাবিকভাবে হেঁটে আসুন, শান্ত থাকুন। স্বাভাবিকভাবে এসে যত রাকাত পাবেন তা পড়ে নেবেন আর যা ছুটে যাবে তা পূর্ণ করে নেবেন। (সহিহ বুখারি: ৯০৮)
প্রখ্যাত তাবেঈ হাসান বসরি (রহ.) থেকে বর্ণিত রয়েছে, একদিন হজরত আবু বকরা (রা.) মসজিদে এসে আল্লাহর রাসুলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রুকুতে পেলেন। রুকু ধরার জন্য তিনি কাতারে না পৌঁছেই রুকু করলেন, তারপর আগে বেড়ে কাতারে শামিল হলেন। নবিজি (সা.) নামাজ শেষ করে বললেন, আপনাদের মধ্যে কে কাতারে পৌঁছার আগেই রুকু করেছেন এবং পরে আগে বেড়ে কাতারে শামিল হয়েছেন? আবু বকরা (রা.) বললেন, আমি। নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন,
زَادَكَ اللهُ حِرْصًا وَلَا تَعُدْ
আল্লাহ আপনার আগ্রহ আরও বাড়িয়ে দিন। তবে সামনে থেকে এ রকম আর করবেন না। (সুনানে আবু দাউদ: ৬৮৪)
তাই নামাজের জামাত শুরু হওয়ার আগেই যেন মসজিদে উপস্থিত হওয়া যায়, সেই চেষ্টা থাকা সবার উচিত। কিন্তু কোনো কারণে সেটা যদি সম্ভব না হয়, তাহলে শেষ মূহূর্তে জামাত বা রাকাত ধরার জন্য ছোটাছুটি করা, তাড়াহুড়ো করা ঠিক নয়। স্বাভাবিকভাবে এসে যত রাকাত পাবেন তা পড়ে নেবেন আর যা ছুটে যাবে তা পূর্ণ করে নেবেন।
ওএফএফ/জিকেএস