রামগতিতে স্কুল মাঠ দখল করে ওয়াকওয়ে নির্মাণে বেপরোয়া দুর্নীতি

লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার আলেকজান্ডার সরকারি মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ দখল করে “প্রশাসন পার্ক” নামে একটি সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেওয়া হয়। বাস্তবে গিয়ে স্কুলের মাঠে কোন ধরনের পার্কের চিহ্নও দেখা যায়নি। রামগতি পৌরসভার পক্ষ থেকে ২৮ লাখ ৫৩ হাজার ৯০০ টাকা ব্যায়ে একটি ওয়াকওয়ে (হাঁটাপথ) নির্মাণ করা হয়। তাতেও করা হয় বেপরোয়া অনিয়ম ও দুর্নীতি। এতে স্কুল মাঠের চারপাশে ওয়াকওয়ে নির্মাণে নয় ছয় দেখিয়ে সরকারি টাকা লুটপাটের আয়োজন সম্পুর্ন করা হয়েছে। ২০২৩ সালের জুন মাসে কাজের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে। এতে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ বরাদ্দ দেন ২৮ লাখ ৫৩ হাজার ৯০০ টাকা। কাজটি পান মেসার্স জোবায়দা ট্রেডার্স নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। উপজেলা সদর আলেকজান্ডার মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার জন্য ব্যবহার করা হলেও এখন পার্ক বানানোর নামে সরকারি প্রকল্প দেখিয়ে টাকা তোলা হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ-অসন্তোষ দেখা গেছে।
জানা যায়, রামগতি পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের লক্ষ্মীপুর-রামগতি আঞ্চলিক সড়কের দক্ষিণ পাশে আলকজান্ডার মডেল সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠটি শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার জন্য ব্যবহারিত হয়ে আসছে। এতে স্কুলের মাঠে রামগতি পৌরসভার পক্ষ থেকে ওয়াকওয়ে (হাঁটাপথ) নির্মাণ করা শেষ হতে না হতেই রামগতি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্কুলের গেইটে একটি সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেওয়া হয়। তাতে লিখা রয়েছে উপজেলা প্রশাসন পার্ক।
কাজ পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির স্বত্তাধিকারী সাবেক পৌর মেয়র এম.মেজবাহ উদ্দিন মেজুর ভাই মোঃ সাইফ উদ্দিন বাবু। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যূত্থানের পর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্তাধিকারী মোঃ সাইফ উদ্দিন বাবু পলাতক থাকলেও হুট কর প্রকল্পটির কাজ শুরু করা হয়। যেন মনে হয়,সরকার কা মাল,দরিয়া মে ডাল দে অবস্থা। সম্পুর্ন গোপনীয়তা রক্ষা করে নয় ছয় দেখিয়ে প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত করে টাকা উত্তোলনের আয়োজন সম্পন্ন করা হচ্ছে।
এসব অনিয়মের সাথে সরাসরি জড়িত রামগতির ইউএনও সৈয়দ আমজাদ হোসেন নিজেই। এমনটাই জানিয়েন পৌরসভার তিনজন বাসিন্দা। নাম প্রকাশ না করা শর্তে ওই তিনজন বাসিন্দা এ প্রতিবেদককে বলেন,ইউএনও রামগতি পৌরসভার প্রশাসকও বটে। তাই এখন পৌরসভা ও উপজেলা প্রশাসন সব কিছুই তিনি তার মত করে কাজ যাচ্ছেন।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার সকালে সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, নামমাত্র কয়েকজন শ্রমিক কাজ করছেন। বেশিরভাগ সময় খেলার মাঠের প্রধান ফটক তালাবদ্ধ রেখে আড়ালে কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন শ্রমিকরা। কাজ চলমান থাকলেও প্রকল্প এলাকায় দেখা যায়নি তথ্যসংবলিত সাইনবার্ডও।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রায় শত বছরের পুরানো স্কুল মাঠ দখল করে মাঠের চারপাশে দেওয়াল তুলে মাঠটিকে সংকুচিত করা হয়েছে। এখন আবার পার্কের সাইনবোর্ড লাগিয়ে সব সময় তালাবদ্ধ করে রাখা হচ্ছে। এতে পৌরসভার প্রধান এই খেলার মাঠে শিক্ষার্থীরা আর খেলাধুলা করতে পারবেনা। তাদর অভিযোগ, এভাবে খেলার মাঠে সরকারি প্রকল্প দেখিয়ে সংকুচিত করা হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই হারিয়ে যাবে আলেকজান্ডারের ঐতিহ্যবাহী এ খেলার মাঠটি। স্কুল মাঠ দখল করে ওয়াকওয়ে ও পার্কের সাইনবোর্ড লাগানোর বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বদরুল ইসলাম কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না করা এবং নানা অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়ে কথা বলতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্তাধিকারী সাইফ উদ্দিন বাবু পলাতক থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
আলকজান্ডার সরকারি মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বদরুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিদ্যালয়ের মাঠে এসব প্রকল্প কিংবা পার্ক নির্মাণের বিষয়ে তার জানা নেই।
রামগতি পৌরসভার সচিব মাসুদ রেজার সাথে কথা বলতে একাধিকবার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
রামগতি পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ আমজাদ হোসেন প্রকল্পের কাজে নানা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, স্কুলের মাঠে পার্ক হওয়ায় এলাকাবাসী সবাই খুশি। এতে খেলাধুলার কোন সমস্যা হবেনা। সাইনবোর্ড আছে, কিন্তু পার্ক তো নেই? এমন প্রশ্নের জবাব না দিয়ে এড়িয়ে যান তিনি।