Status

জাটকায় বাজার সয়লাব

জাটকা আহরণ, পরিবহন ও বিক্রি পুরোপুরি নিষিদ্ধ হলেও রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের বাজারগুলোতে তা দেদারসে বিক্রি হচ্ছে। জাটকা আহরণ করলে জেল-জরিমানার বিধান থাকলে তা মানা হচ্ছে না। প্রশাসনের নাকের ডগায় অবাধে চলছে জাটকা আহরণ ও বিক্রি। ১০ ইঞ্চি বা ২৫ সেন্টিমিটারের কম আকারের ইলিশকে ‘জাটকা’ হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। এ আকারের ইলিশ অর্থাৎ জাটকায় রাজধানীর বাজারগুলো এখন সয়লাব।

রাজধানীর প্রতিটি মাছবাজারেই প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে দুই থেকে চার ইঞ্চি আকারের জাটকা। গত প্রায় এক মাস ধরে রাজধানীর বিভিন্ন মাছবাজারে এবং পাড়া-মহল্লায় ফেরি করে জাটকা বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতাদের অভিযোগ, জাটকা বিক্রি বন্ধে বাজারগুলোতে মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়সহ অন্য প্রশাসনের কোনো তদারকি নেই। তাই জেলেরা যেভাবে অবাধে শিকার করছে সে রকম প্রকাশেই এসব জাটকা বাজারে এনে বিক্রি করছে।

ইলিশ উৎপাদনে ১১ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। ওয়ার্ল্ড ফিশের পরিসংখ্যান মতে, ৮৬ শতাংশ ইলিশ বাংলাদেশে উৎপাদিত হয়, কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশে ইলিশের উৎপাদন ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে। এর পেছনে দায়ী নদী দখল-দূষণ, বালি উত্তোলন, নাব্য সংকট, জাটকা নিধন, অবৈধ জালের ব্যবহারসহ নানা কারণ। আশঙ্কা আছে, উল্লিখিত সমস্যাগুলোর সমাধান করা না গেলে আগামীতে ইলিশের উৎপাদন ও প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াবে শূন্যের কোটায়। অবিলম্বে ইলিশের উৎপাদন হ্রাস রোধ ও উৎপাদন বৃদ্ধি করতে সংশ্লিষ্ট সমস্যাগুলোকে খতিয়ে দেখা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সর্বশেষ গত দুই অর্থবছরে দেশে ইলিশ উৎপাদনে প্রবৃদ্ধির হার ১ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধির গতি শ্লথ হয়ে আসার পেছনে নদ-নদী দখল, দূষণ, নদীতে পানির প্রবাহ হ্রাস এবং অপরিকল্পিত নৌ-অবকাঠামোকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, ইলিশ ডিম পাড়তে নদীর মোহনায় চলে আসে, কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে নদীতে দখল-দূষণ, ডুবোচর ও বাঁধ-সেতুসহ নানা অবকাঠামোর প্রভাবে নদীতে বিচরণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে মাছটির। ক্রমেই হুমকির মুখে পড়ছে ইলিশের প্রজনন। এছাড়া ছোট ছোট জাটকা অবাধে আহরণের ফলেও ইলিশের উৎপাদন অনেক কমে যাচ্ছে। প্রতি বছর যে পরিমাণ জাটকা শিকার করা হচ্ছে তাতে কমপক্ষে আরো ১ থেকে দেড় লাখ টন ইলিশ উৎপাদন আরো বেশি হতো। ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিতে জাটকাকে ইলিশে পরিণত করা সর্বাধিক জরুরি। এক্ষেত্রে সরাসরি নিয়োজিত জেলেদের জন্য বিকল্প কর্মের সুযোগ ও ভাতা সুফল বয়ে আনতে পারে। সম্প্রতি সরকার ৩ লাখ ৬১ হাজার ৭১টি জেলে পরিবারকে দুই মাসে (ফেব্রুয়ারি-মার্চ) ৪০ কেজি চাল প্রদানের প্রকল্প হাতে নিয়েছে। যদিও আগে উল্লিখিত পাঁচ লাখ লোকের মধ্যে উক্ত সংখ্যক লোককে ভাতার আওতায় আনা কতটা ফলপ্রসূ হবে তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েই যায়।

শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বায়োলজি ও জেনেটিকস ডিপার্টমেন্টের প্রফেসর ড. কাজী আহসান হাবিব বলেন, বর্তমানে ইলিশ উৎপাদনের যে খারাপ পরিস্থিতি তার কয়েকটি কারণ রয়েছে। এর মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব যেমন রয়েছে, তেমনি জাটকা নিধনও রয়েছে। প্রতি বছর যে হারে জাটকা নিধন হচ্ছে তাতে কমপক্ষে দেড় লাখ টন ইলিশ উৎপাদন কম হচ্ছে। সরকার এ ব্যাপারে যে উদ্যোগ গ্রহণ করে তা মাঠপর্যায়ে যথাযথ প্রয়োগ না হওয়ায় এর সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।

দেশীয় অর্থনীতির বিরাট সম্ভাবনাময় খাত ইলিশ। দেশের মোট মৎস্য উৎপাদনে ইলিশের অবদান ১১ এবং জিডিপিতে ১ শতাংশ। কালক্রমে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের তালিকায়ও জায়গা করে নিয়েছে ইলিশ। সামনের দিনগুলোয় ইলিশের উৎপাদন ও প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধি করতে জাটকা নিধনবন্ধসহ সংশ্লিষ্ট সমস্যাগুলোর আশু সমাধান প্রয়োজন।

এদিকে ইলিশের অন্যতম অভয়াশ্রম চাঁদপুরের পদ্মা ও মেঘনায় জাটকা সংরক্ষণে ২ মাসের নিষেধাজ্ঞা শুরু হচ্ছে আগামী ১ মার্চ থেকে। এ নিষেধাজ্ঞা থাকবে আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত। এ সময় সব ধরনের মাছ ধরা বন্ধ থাকবে। এ নিষেধাজ্ঞার কারণে পেশা হারিয়ে সাময়িকভাবে বেকার হচ্ছেন অর্ধলক্ষ জেলে। এ জন্য জাটকা সংরক্ষণের সময় ২ মাসের জন্য বেকার জেলেদের খাদ্য প্রণোদনা দেয়া হবে। অভয়াশ্রমে কেউ যেন জাটকা নিধন করতে না পারে সেজন্য তৎপর থাকবে প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। জেলে এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

Source link

Leave a Reply

Back to top button