বইমেলাকে কেন্দ্র করে বাড়তি বেচাকেনা অনলাইন প্লাটফর্মে

মাসব্যাপী চলা অমর একুশে বই মেলায় প্রর্দশনী ও বিক্রির জন্য স্টলে সাজানো থাকে বিশ্ব ও বাংলা সাহিত্যের নানা বই। বইমেলাকে কেন্দ্র করে সময়ের সাথে সাথে ডিজিটাল ব্যবস্থা অনলাইনে বাড়ছে বই বিক্রি ও সহজলভ্যতা। একুশে বই মেলায় যেমন বই কিনেন সব শ্রেণির পাঠক তেমনি অনলাইনে পাঠক ও ক্রেতার একটি সংখ্যা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তরুণ ও শিক্ষিত সমাজের একটি বড় বাজার হয়ে উঠেছে অনলাইন প্লাটফর্ম। সাধারণত লেখকরা অনলাইনে বই আগে সাবমিট করেন এবং তারপরদিন মেলার নির্ধারিত স্টলে বই পাওয়া যায়। জুলাই অভ্যুত্থানের পর এবারের বই মেলা ছিল পূর্বের তুলনায় ব্যতিক্রম। সম্প্রতি চাহিদা নিয়ে বইমেলায় আসছেন পাঠকরা যার অধিকাংশই তরুণ যুবক। দেশের রাজনৈতিক কারণে দীর্ঘদিন যেসকল বই মেলায় বিক্রির জন্য বাধা নিষেধ ছিল এবার সেগুলোর চাহিদা ছিল আকাশচুম্বি। যেসকল প্রকাশনা মেলায় প্যাভিলিয়ন ও স্টল দেয়ার জন্য অনুমতি পায় নি তাদের স্টলগুলো ছিল আয়তনে বড় ও দর্শকদের কেন্দ্রবিন্দু। বই বিক্রিও হয়েছে প্রচুর। তবে বই মেলায় আসার আগে অনলাইনে প্রি অর্ডারে বই বিক্রি করেছে দেশের কয়েকটি অনলাইন প্রতিষ্ঠান।অনলাইনে নতুন করে চাহিদা বাড়িয়েছিল ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের ইতিহাস বিষয়ক বই। দেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও বিশ্লেষকদের বইয়ের চাহিদাও ছিল তুলনামূলক বেশি। ধর্মীয় ও ইসলামিক বইয়ের চাহিদা ছিল প্রত্যাশার তুলনায় অধিক ।
এবারের মেলায় প্রেক্ষিত চাহিদার সাথে সাথে অনলাইনে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে নানা ক্যাটাগরির বই । জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে লেখা কয়েকটি জনপ্রিয় বই হলো Ñ ছাত্র জনতার অভ্যুত্থান ; নতুন পথে বাংলাদেশ বইটি লিখেছেন আল মাসুদ হাসান উজ জামান , আয়নাঘর বইটি লিখেছেন ড. মুহাম্ম্দ নজরুল ইসলাম , জুলাই বিপ্লব লিখেছেন মতিউর রহমান ,চব্বিশের বাংলাদেশ লিখেছেন মেসবাহ য়াযাদ, ২৪ র গণ অভ্যুত্থান লিখেছেন আব্দুল্লাহ আল মাসউদ। বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে লেখা জনপ্রিয় বই কয়েকটি লাল রাজনীতি লিখেছেন সরদার আবদুর রহমান ,যেমন দেখেছি ওয়ান ইলেভেন লিেেখছেন আহমেদ মূসা , বাংলাদেশের রাজনীতির ৫০ বছর লিখেছেন ড. তারেক শামসুর রেহমান । নাটকের বই হাউ মাউ খাউ লিখেছেন জনপ্রিয় অভিনেতা ও নাট্যকার ফারুক আহমেদ , তরঙ্গ ভঙ্গ লিখেছেন আধুনিক বাংলা সাহিত্যের লেখক সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ রক্তাক্ত স্বাধিনতা লিখেছেন ড. চঞ্চল সৈকত ,পরিচয় লিখেছেন ড.মুকিত চৌধুরী। গল্প ও কবিতার বইয়ের মধ্যে বিক্রি হয়েছে বলাকার দেশে লিখেছেন বদিউল আলম , জেগে ওঠো লিখেছেন মুহাম্মদ সামসুজ্জামান , অস্তি¡তের কথা লিখেছেন নাদিউজ্জামান রিজভী ,রক্তেভেজা যায়নামাজ লিখেছেন মাওলানা মনিরুল ইসলাম । ধর্মীয় ও ইসলামি সাহিত্যের বই আমৃত্যু ভালোবাসি তকেÑ সালমা চৌধুরী, মাহে রমাদানের ২৭ আমল বই লিখেছেন শায়খ আহমাদুল্লাহ, উমরাহ সফরের গল্প লিখেছেন আরিফ আজাদ , দ্যা গ্রোথ কোড লিখেছেন মার্ক অনুপম মল্লিক , কথা বলো যয়তুন বৃক্ষ লিখেছেন আরিফ আজাদ। এছাড়াও জনপ্রিয় কয়েকটি বই । ইসরায়েলের বন্দিনী উপন্যাসটি লিখেছেন সায়ীদ উসমান , কুহেলিকা লিখেছেন নাজিম উদ দৌল্লা, দি স্পাই লিখেছেন পাওলো কুয়েলহো, ব্রেইন ব্যালেন্স ইকুয়াল ব্যাংক ব্যালেন্স লিখেছেন মু. ইলিয়াস কাঞ্চন, এক নজরে কোরআন লিখেছেন ড. মিজানুর রহমান আজহারি , যুবক ইউ আ দ্যা গেম চেঞ্জার লিখেছেন মাসুদ রানা সাগর , রমাদান প্রিপারেশন শাইখুল ইসলাম তাকি উসমানি ।
অনলাইন প্লাটফর্মের বিক্রির জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান রকমারি ডটকমে বিভিন্ন বিভাগে বেস্টসেলার লেখক ২০২৪ পুরস্কার পেয়েছেন দেশের চারজন উদীয়মান জনপ্রিয় লেখক । ফিকশন বিভাগে ইলমা বেহরোজের লেখা উপন্যাস আমি পদ্মজা প্রকাশ করেছে অন্য প্রকাশ । নন ফিকশন বিভাগে অর্থনীতি ও বিনিয়োগ নিয়ে লেখা মুহাম্মদ ইলিয়াস কাঞ্চনের ক্যাশ মেশিন প্রকাশ করেছে হিয়া প্রকাশন, ধর্মীয় বিভাগে শায়খ আহমাদুল্লাহর তারাবীহর সালাতে কুরআনের বার্তা প্রকাশ করেছে আস সুন্নাহ ফাউ.। রাজনৈতিক বিশ্লেষক মল্লিক হাসান সম্পাদিত ‘বিএনপির ৩১ দফা; উন্নয়ন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি পর্যালোচনা’ বইটি জনপ্রিয়তার শীর্ষে। বইটিতে ভূমিকায় তারেক রহমান লিখেছেন, রাষ্ট্র-সরকার-রাজনীতি-রাজনৈতিক দল মেরামতে বিএনপিসহ গণতন্ত্রের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে ৩১ দফা সংস্কার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত সংস্কার কর্মসূচি নিয়ে এখন সারা দেশে জনগণের সঙ্গে সংলাপ চলছে। সংস্কারের দফা ৩১টি হলেও চূড়ান্ত লক্ষ্য ‘একটি বৈষম্যহীন নিরাপদ মানবিক বাংলাদেশ বিনির্মাণ’। উদ্দেশ্যও একটি, ‘রাষ্ট্র ও সমাজে জনগণের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা’। জনগণের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা না গেলে স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধি কোনোটাই টেকসই হয় না। রাষ্ট্রের স্বাধীনতা এবং নিরাপত্তার জন্য জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের বিকল্প নেই। বইমেলায় এসেছে বিশিষ্ট ফটো সাংবাদিক নাইম আহমেদ জুলহাসের লেখা আলোকচিত্রে শৈল্পিকতা প্রকাশ করেছে মিজান পাবলিশার্স। তিনি তার পেশাগত জীবনে নানা চিত্র তুলে ধরেছেন এই বইয়ে।
গতকাল বৃহস্পতিবার একুশে বইমেলার ২৭তম দিনে নতুন বই এসেছে ১৭৬টি। বিকেলে বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘একটি অভ্যুত্থানের জন্ম ও আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রেজাউল করিম রনি। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন সৈয়দ নিজার। সভাপতিত্ব করেন কাজী মারুফ। প্রাবন্ধিক বলেন, ইতিহাসে অনেক আন্দোলনকেই খুব গৌরবের সঙ্গে স্মরণ করা হয়। তেমনি আমাদের দেশের সাম্প্রতিক জুলাই গণ-অভ্যুত্থান গোটা জাতির জন্য নতুন অভিজ্ঞতার জন্ম দিয়েছে। একটি প্রজন্মের ঐতিহাসিক কর্তাসত্ত্বা হিসেবে আত্মপ্রকাশের অভ্যুত্থান ছিল এটা। অত্যাচার, লুটপাট ও অনাচার সমাজের সব শ্রেণির মানুষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষোভ তৈরি করে আসছিল। যার ফলে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন পরিণত হয় রাজনৈতিক মুক্তির সংগ্রামে। নাগরিক অধিকার ভিত্তিক একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া এই আন্দোলনের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের আর কোনো পথ আমাদের সামনে খোলা নেই।
সভাপতির বক্তব্যে কাজী মারুফ বলেন, চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের একটি বহুত্ববাদী রূপ রয়েছে। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ তাদের ভিন্ন আকাক্সক্ষা, ভিন্ন স্বপ্ন নিয়ে এই অভ্যুত্থানে সামিল হয়েছিলেন। ফলে মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টাকে ছাপিয়ে চব্বিশের আন্দোলন নিজেই একটি আলাদা সত্ত্বা হয়ে উঠেছে। লেখক বলছি মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেনÑ কবি সায়ীদ আবুবকর, কবি মিতা আলী এবং কবি, সম্পাদক ও শিশুসাহিত্যিক জামসেদ ওয়াজেদ।