নান্দাইলে বিএনপির কমিটি নিয়ে তৃণমূলে ক্ষোভ, চলছে লাগাতার বিক্ষোভ

নান্দাইল উপজেলা ও পৌর বিএনপির নতুন কমিটি ঘোষণার পরপরই ক্ষোভে ফেটে পড়ে তৃণমূল নেতাকর্মীরা। কমিটি ঘোষণার ১৫ দিন পার হলেও নেতাকর্মীদের ক্ষোভ প্রশমিত হয়নি। কমিটি বাতিলের দাবিতে লাগাতার প্রতিবাদ মিছিল ও বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। কখনও পায়ে হেঁটে, কখনও মোটরসাইকেল বহরে, আবার কখনও কাফনের কাপড় পরে কমিটি বাতিলের দাবি জানাচ্ছেন তারা। নতুন কমিটির নেতাদের সঙ্গে পদবঞ্চিত নেতাদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। আন্দোলনের মুখে উপজেলায় ভিড়তে পারছেন না নতুন কমিটির নেতাকর্মীরা। কমিটি ঘোষণার ১৫ দিন পরও এলাকায় অবস্থান করতে পারেননি উপজেলা বিএনপির নতুন আহ্বায়ক ইয়াসির খান। দলীয় কর্মসূচিও পালন করতে পারছেন না তারা।
জানা গেছে, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ইয়াসের খান চৌধুরীকে আহ্বায়ক ও বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল কাদিরকে সদস্য সচিব করে নান্দাইল উপজেলা বিএনপির ১১২ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। এছাড়া উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য ও সাবেক মেয়র আজিজুল ইসলাম পিকুলকে আহ্বায়ক ও সাবেক কাউন্সিলর রফিকুজ্জামান মনিরকে সদস্য সচিব করে নান্দাইল পৌর বিএনপির কমিটি ঘোষণা করা হয়। পরদিন থেকেই শুরু হয় লাগাতার আন্দোলন। ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের নান্দাইল উপজেলার কানারামপুর থেকে নান্দাইল চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কি.মি. রাস্তায় পায়ে হেঁটে বিক্ষোভ করেন পদবঞ্চিত নেতারা।
পদবঞ্চিত নেতারা অভিযোগ করেন, নতুন কমিটিতে দলের দুর্দিনে মাঠে থাকা, প্রাণ বাজি রেখে দলের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করা ও হামলা-মামলার শিকার ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করা হয়নি। রাজপথে দেখা যায়নি এমন ব্যাক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ পদ দেয়া হয়েছে। এমনকি পার্শ্ববর্তী কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার নজরুল ইসলামকে আহ্বায়ক কমিটির ১১০ নম্বর সদস্য করা হয়েছে। স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের পুরো আমলেই লন্ডনে ছিলেন উপজেলা বিএনপির নতুন আহ্বায়ক ইয়াসির খান। আন্দোলন-সংগ্রামে নিষ্ক্রিয় ছিলেন সদস্য সচিব এনামুল কাদিরও।
এছাড়া দলের দুঃসময়ে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে চলা নেতাকর্মীরা নবগঠিত কমিটিতে পদ পেয়েছেন। গত ১৭ বছর সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছেন এমন নেতারা কমিটিতে স্থান পাওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করছেন নবগঠিত পৌর বিএনপির আহ্বায়ক এএফএম আজিজুল ইসলাম পিকুল। বিএনপির পৌর শাখার ২নং ওয়ার্ড সভাপতি তাজুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের আমলে তৎকালীন সংসদ সদস্যের আনুকূল্যে একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতির পদসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন উপজেলা আহবায়ক। আওয়ামী দোসরযুক্ত কমিটি বিলুপ্ত করা না হলে নান্দাইলে লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাবে বলে কঠোর হুশিয়ারি দেন বিএনপি নেতা কামরুজ্জামান খোকন। নান্দাইল উপজেলায় কমিটি নিয়ে বড় ধরনের সংঘাতের আশঙ্কা কথা জানান দলের ত্যাগী নেতাকর্মী ও বিএনপি সমর্থকরা।
নান্দাইল উপজেলা বিএনপির এক নেতা জানান, নান্দাইলে দলের মনোনয়নকে ঘিরে চারটি বলয়ে বিভক্ত ছিল বিএনপি নেতাকর্মীরা। কিন্তু সদস্য ঘোষিত উপজেলা বিএনপিতে একটি বলয়ের নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ পদ দেয়া হয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে বাকি তিনটি বলয়ের নেতাকর্মীরা একজোট হয়ে নতুন কমিটির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।
নান্দাইল বিএনপির অপর এক নেতা জানান, ইয়াসের খান চৌধুরীকে আহ্বায়ক করায় তার চাচাতো ভাই সাবেক এমপি খুররম খান চৌধুরীর ছেলে নাছির খান চৌধুরী বাড়িতে ঢুকতে দিচ্ছেন না। এতদিন চাচার বাড়িতে অবস্থান করতেন তিনি। গ্রামের বাড়িতে ঘর না থাকায় ঢাকায় অবস্থান করছেন ইয়াসের খান।
এসব অভিযোগের বিষয়ে নান্দাইল উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব এনামুল কাদির বলেন, যারা আন্দোলন সংগ্রামে মাঠে ছিল তারাই পদ পেয়েছে। কমিটি নিয়ে লাগাতার আন্দোলন যারা করছে তারা বলতে পারবে। আর যারা বলছে আমি নিষ্ক্রিয় ছিলাম তাদেরকে জিজ্ঞেস করতে চাই আন্দোলন-সংগ্রামে নিষ্ক্রিয় থাকলে কেন আমাকে ১৩টি মামলায় আসামি করা হলো, তিন বার গ্রেপ্তার করা হলো। পার্শ্ববর্তী জেলার এক নেতাকে পদ দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, কমিটি তো আর আমি দেইনি। কিছু ভুল ত্রুটি হতে পারে।