Status

৯৬ বছর ধরে ২৪ ঘণ্টা কোরআন তেলাওয়াত চলছে ধনবাড়ী নওয়াব শাহী জামে মসজিদে

টাঙ্গাইল জেলা সংবাদদাতা : প্রায় ৯৬ বছর ধরে ২৪ ঘণ্টাই কোরআন তেলাওয়াত চলছে মসজিদে। শুনে আশ্চর্য মনে হলেও এমনটিই হচ্ছে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার ৭০০ বছরের পুরনো নওয়াব শাহী জামে মসজিদে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় ব্যতীত প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়েও থেমে থাকেনি কোরআন তেলাওয়াত। পাঁচজন হাফেজ পালাক্রমে চালিয়ে যাচ্ছেন এ কার্যক্রম।

জানা যায়, সেলজুক তুর্কি বংশের ইসপিঞ্জার খাঁ ও মনোয়ার খাঁ নামে দুই ভাই ১৬ শতাব্দীতে এক কক্ষবিশিষ্ট এ মসজিদটি নির্মাণ করেন। পরে নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী ১১৫ বছর আগে মসজিদটি সম্প্রসারণ করে এর আধুনিক রূপ দেন। সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী ১৮৬৩ সনের ডিসেম্বরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৭ এপ্রিল ১৯২৯ সনে মৃত্যুবরণ করেন। সংস্কারের আগে মসজিদটির দৈর্ঘ্য ছিল ১৩.৭২ মিটার এবং প্রস্থ ৪.৫৭ মিটার। সংস্কারের পর মসজিদটি বর্গাকৃতির ও তিন গম্বুজবিশিষ্ট মোগল স্থাপত্যের বৈশিষ্টপূর্ণ করা হয়। মসজিদের মেঝে আর দেয়াল কাচের টুকরো দিয়ে নকশাদার মোজাইক করা। মেঝেতে মার্বেল পাথরে খোদাই করা নিপুণ কারুকার্য অসাধারণ। ভেতরের সব জায়গাতেই চীনামাটির টুকরো দিয়ে মোজাইক নকশায় অলংকৃত, যার অধিকাংশ ফুলেল নকশা। মসজিদের ভেতরে ঢোকার জন্য পূর্ব দিকের বহু খাঁজে চিত্রিত খিলানযুক্ত তিনটি প্রবেশপথ, উত্তর ও দক্ষিণে আরো একটি করে মোট ৫টি প্রবেশপথ রয়েছে। প্রায় ১০ কাঠা জায়গার ওপর নির্মিত মসজিদটির চারদিক থেকে চারটি প্রবেশপথ এবং ৯টি জানালা এবং ৩৪টি ছোট ও বড় গম্বুজ রয়েছে। বড় ১০টি মিনারের প্রতিটির উচ্চতা ছাদ থেকে প্রায় ৩০ ফুট। মসজিদের দোতলার মিনারটির উচ্চতা প্রায় ১৫ ফুট। ৫ ফুট উচ্চতা এবং ৩ ফুট প্রস্থের মিহরাবটি দেখতে বেশ আকর্ষণীয় এবং দৃষ্টিনন্দন। পূর্ব দিকের তিনটি প্রবেশপথ বরাবর পশ্চিমের দেয়ালে তিনটি মিহরাব রয়েছে। ৩০ ফুট উচ্চতার মিনারের মাথায় স্থাপিত ১০টি তামার চাঁদ মিনারের সৌন্দর্য বাড়িয়েছে। মসজিদে সংরক্ষিত রয়েছে ১৮টি হাড়িবাতি, যেগুলো শুরুর দিকে নারিকেল তেলের মাধ্যমে আলো জ্বালানোর কাজে ব্যবহার করা হতো।

নামাজের সময় ছাড়া এক মিনিটের জন্যও কোরআন তেলাওয়াত বন্ধ হয় না বলে জানালেন মসজিদের খতিব ও ইমাম হাফেজ মাওলানা ইদ্রিস হুসাইন। এ মসজিদে একজন খতিব, একজন ইমাম, একজন মোয়াজ্জিন, ৮ জন খাদেম, কুরআন তেলাওয়াতের জন্য রয়েছে ৫ জন হাফেজ।

পীরের নির্দেশনায় কবরের আজাব থেকে মুক্তি পেতে ১৯২৭ সালে সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী এ মসজিদে সার্বক্ষণিক কোরআন তেলাওয়াতের ব্যবস্থা করেন। ১৯২৯ সালের ১৭ এপ্রিল মারা যান এই নবাব বাহাদুর। মসজিদের একপাশে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। তার মৃত্যুর পরও চলছে এ কোরআন তেলাওয়াত।

Source link

Leave a Reply

Back to top button