২০২৬ থেকে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের ‘নাটকীয় উন্নতি’ হবে

বাংলাদেশে আগামী বছর থেকেই বিদেশি বিনিয়োগ ব্যাপকভাবে বাড়বে বলে আশা করছেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী। সম্প্রতি জাপান সফরকালে নিক্কেই এশিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা জানিয়েছেন তিনি।
আশিক চৌধুরী জানান, ঢাকা আশা করছে আগামী তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফডিআই) দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় চার শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে। ২০২৩ সালে বাংলাদেশের এফডিআই অনুপাত ছিল মাত্র ০ দশমিক ৩ শতাংশ, যা বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী বৈশ্বিক গড় ০ দশমিক ৮ শতাংশের তুলনায় অনেক কম।
আরও পড়ুন>>
তিনি জানান, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে বেশ কিছু সংস্কার পরিকল্পনা নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে অনুমোদন ও কাস্টমস প্রক্রিয়া সহজতর করা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করা। এ বিষয়ে দেশি-বিদেশি ২০০টির বেশি কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা করেছে বিডা।
আশিক চৌধুরী বলেন, চলতি বছর আমরা সমস্যাগুলো সমাধান করছি। এ বছরই এফডিআই নাটকীয়ভাবে বাড়বে বলে আমি আশা করি না। তবে আগামী বছর থেকে এটি ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হবে।
বাংলাদেশ বর্তমানে একটি রাজনৈতিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত আগস্টে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন দীর্ঘদিনের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকার পরিচালনা করছেন নোবেলজয়ী এবং ক্ষুদ্রঋণ আন্দোলনের পথিকৃৎ মুহাম্মদ ইউনূস। তার নেতৃত্বে আসন্ন নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে।
গার্মেন্টসের বাইরে নতুন সম্ভাবনা খুঁজছে বাংলাদেশ
বাংলাদেশের অর্থনীতি মূলত তৈরি পোশাক শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। দেশের মোট রপ্তানিতে এর অবদান ৮০ শতাংশের বেশি। তবে সরকার এখন ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ, ওষুধ ও চামড়াজাত পণ্যকে সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে চিহ্নিত করছে। আশিক চৌধুরী বলেন, গার্মেন্টস শিল্পের বাইরেও বৈচিত্র্য আনতে হলে চামড়াজাত পণ্য হতে পারে প্রথম পদক্ষেপ।
যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বাণিজ্য সম্পর্ক ও সম্ভাব্য শুল্ক প্রসঙ্গ
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের ৪২০ কোটি মার্কিন ডলারের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত ছিল। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ২০ শতাংশ রপ্তানির গন্তব্য, যা দেশটির জন্য সবচেয়ে বড় বাজার।
বাণিজ্যের ভারসাম্যহীনতা দূর করতে বিভিন্ন দেশের ওপর ‘পাল্টা শুল্ক’ আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ বিষয়ে আশিক চৌধুরী বলেন, আমরা এখনো ট্রাম্পের কাছ থেকে বাংলাদেশ নিয়ে কোনো শুল্ক আরোপের কথা শুনিনি। বরং, চীনের ওপর আরোপিত শুল্ক আমাদের জন্য সুবিধাজনক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।
তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম ও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে।
বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ
আশিক চৌধুরী বলেন, চীনের কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে তাদের উৎপাদন কেন্দ্র স্থানান্তরের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ কারণে বাংলাদেশ সরকার তাদের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছে।
বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগের সম্ভাবনা
জাপান বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহায়তাকারী দেশ। বর্তমানে বাংলাদেশে ৩৫০টির বেশি জাপানি কোম্পানি ব্যবসা করছে, যা গত ১০ বছরে তিনগুণ বেড়েছে। তবে ২০২৪ সালের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে নতুন কোম্পানির আগমন কিছুটা কমেছে।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য প্রথমেই জাপানকে বেছে নিয়েছে। আশিক চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে পারস্পরিক শক্তিশালী সম্পর্ক রয়েছে। আমি চাই জাপানি কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে এসে বাস্তব অভিজ্ঞতা গ্রহণ করুক এবং সচেতন সিদ্ধান্ত নিক।
কেএএ/