১৬ বছর পর মুখোমুখি দ.আফ্রিকা-নিউজিল্যান্ড

আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির নবম আসরের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে আজ শক্তিশালী দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হচ্ছে আত্মবিশ্বাসী নিউজিল্যান্ড। পাকিস্তানের লাহোরে বাংলাদেশ সময় বেলা ৩টায় শুরু হবে ম্যাচটি। দীর্ঘ ১৬ বছর পর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ফের মুখোমুখি হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ড। এ টুর্নামেন্টে দু’দল সবশেষ মুখোমুখি হয়েছিল ২০০৯ সালে। আজকের ম্যাচ জিতে ২৭ বছর পর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে ওঠার সুযোগ দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে। অন্যদিকে প্রোটিয়াদের হারিয়ে তৃতীয়বারের মত ফাইনাল খেলার স্বপ্ন নিউজিল্যান্ডের।
এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে গ্রুপ পর্বে তিন ম্যাচে ৫ পয়েন্ট পেয়ে ‘বি’ গ্রুপ সেরা হয়ে সেমিফাইনালের টিকিট পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। গ্রুপ পর্বে আফগানিস্তান ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয় পায় প্রোটিয়ারা। আর নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পয়েন্ট ভাগাভাগি করে তারা। এই নিয়ে ষষ্ঠবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনাল খেলছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ১৯৯৮ সালে প্রথম আসরেই সেমির স্বাদ নিয়ে টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল দলটি। এরপর ২০০০, ২০০২, ২০০৬ ও ২০১৩ সালে শেষ চার থেকে বিদায় নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে ২৭ বছর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে খেলতে না পারার বন্ধ্যাত্ব ঘোচাতে চায় তেম্বা বাভুমার দল।
তাই তো দ্বিতীয় সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক তেম্বা বাভুমা বলেন, ‘এই টুর্নামেন্টের প্রথম আসরের ফাইনাল খেলেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এরপর আর কখনও সেমিফাইনাল বাঁধা টপকাতে পারেনি প্রোটিয়ারা। এবার আমাদের সামনে ফাইনালে ওঠার সেরা সুযোগ। আমরা এ সুযোগ হাতছাড়া করতে চাই না।’ নিউজিল্যান্ডকে সমীহ করে বাভুমা বলেন, ‘টুর্নামেন্টে সবচেয়ে ভারসাম্যপূর্ণ দল নিউজিল্যান্ড। তাদের হারানো কঠিন। গ্রুপ পর্বে ভালো ক্রিকেট খেলেছে তারা। তাদের বিপক্ষে জিততে হলে আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলতে হবে এবং মাঠে নিজেদের সেরা পারফরমেন্স দেখাতে হবে।’
অন্যদিকে এবারের আসরে সেমির আগে তিন ম্যাচে ৪ পয়েন্ট পেয়ে ‘এ’ গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে শেষ চারে নাম লেখায় নিউজিল্যান্ড। প্রথম দুই ম্যাচে পাকিস্তান ও বাংলাদেশকে হারালেও, শেষ ম্যাচে ভারতের কাছে হেরে যায় কিউইরা। এই নিয়ে চতুর্থবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনাল খেলছে নিউজিল্যান্ড। ২০০০ সালে দ্বিতীয় আসরে প্রথমবার সেমিতে উঠেই শিরোপা জিতে নেয় তারা। এরপর ২০০৬ সালে সেমিফাইনাল এবং ২০০৯ সালে ফাইনাল খেলে রানার্সআপ হয় ব্ল্যাকক্যাপসরা। ১৬ বছর পর ফের ফাইনালে খেলার হাতছানি নিউজিল্যান্ডের সামনে। এবার ফাইনাল খেলার ব্যাপারে আশাবাদি কিউইরা। দ্বিতীয় সেমিফাইনালে প্রোটিয়াদের মোকাবেলার আগে গতকাল নিউজিল্যান্ডের উইকেটরক্ষক ব্যাটার টম লাথাম বলেন,‘আইসিসি ইভেন্টের ফাইনালে ওঠার সেরা সুযোগ আমাদের সামনে। আমরা জানি এই পর্যায়ে পৌঁছানোর জন্য কতটা কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে। আমরা জানি দক্ষিণ আফ্রিকা কতটা শক্তিশালী দল। ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিংয়ে দারুণ পারফরমেন্স করে সেমিতে এসেছে তারা। আমি নিশ্চিত, দ্বিতীয় সেমিফাইনালে জমজমাট লড়াই হবে।’
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগেই পাকিস্তানের মাটিতে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলেছে দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ড। সিরিজে লিগ পর্বে দেখা হয়েছিল দু’দলের। লাহোরে অনুষ্ঠিত ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার ছুঁড়ে দেওয়া ৩০৫ রানের লক্ষ্য স্পর্শ করে ৬ উইকেটে জয় পেয়েছিল নিউজিল্যান্ড। ঐ জয় থেকে আত্মবিশ্বাস পাচ্ছে কিউইরা। সেই স্মৃতি স্মরণ করে লাথাম বলেন,‘আমরা ভাগ্যবান চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে পাকিস্তান এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলেছি। ঐ টুর্নামেন্টের অভিজ্ঞতা এবার সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচে সহায়ক হবে। আমরা ঐ ম্যাচ থেকে বিভিন্ন তথ্য নিয়ে পরিকল্পনা সাজাতে পারবো।’
এখন পর্যন্ত ওয়ানডে ক্রিকেটে ৭৩বার মুখোমুখি হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ড। জয়ের পাল্লা ভারী প্রোটিয়াদেরই। ৪২ ম্যাচ জিতেছে তারা। ২৬ ম্যাচে জয় আছে নিউজিল্যান্ডের। ৫ ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মঞ্চে এই নিয়ে তৃতীয়বার মুখোমুখি হবে দক্ষিণ আফ্রিকা-নিউজিল্যান্ড। এর আগে ২০০৬ ও ২০০৯ সালে দু’বারের মোকাবেলায় একবার করে জিতেছে দু’দল। ২০০৬ সালে ভারতের অনুষ্ঠিত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির গ্রুপ পর্বে দেখা হয় দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ডের। প্রথম দেখায় প্রোটিয়াদের ৮৭ রানে হারায় কিউইরা। ২০০৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার সেঞ্চুরিয়নে দ্বিতীয়বারের মতো দেখা হয় তাদের। গ্রুপ পর্বের ঐ ম্যাচে ৫ উইকেটে জয় পায় প্রোটিয়ারা। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে মুখোমুখি লড়াইয়ে সমান-সমান থাকলেও এবার এগিয়ে যাবার পালা দু’দলেরই।