হ্যাটট্রিক ফাইনালে ভারত

নিউজিল্যান্ডে বিপক্ষে গ্রুপ সেরার লড়াইয়ের ম্যাচটি যেন জিততেই চায়নি ভারত। নিউজিল্যান্ডও সুযোগ বুঝে ‘হেরে গেছে’ যাতে সেমিফাইনালে মাইটি অস্ট্রেলিয়াকে এড়ানো যায়। নিউজিল্যান্ড সফল। তবে ভারতও ছেড়ে দেবার পাত্র নয়। ছেড়ে কথা বলেনি অজিরাও। তবে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রথম সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে ৪ উইকেটে হারিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করেছে ভারতই। গতকাল দুবাইয়ে আগে ব্যাট করে স্টিভ স্মিথ ও অ্যালেক্স ক্যারির দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ৪৯.৩ ওভারে ২৬৪ রানের লড়াকু পুঁজি পায় সব ক’টি উইকেট হারানো অস্ট্রেলিয়া। বিরাট কোহলি, শ্রেয়াশ আইয়ার ও লোকেশ রাহুলের ব্যাটে সেটিকে ১১ বল আগে টপকে যায় ৬ উইকেট হারানো রোহিত শর্মার দল। ফলে টানা তৃতীয়বারের মতো এই টুর্নামেন্টের ফাইনালে জায়গা করে নিল ভারত।
এদিন দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে রোহিতের ব্যাটে ভালো শুরু মেলে ভারতের। অন্যপ্রান্তে শুবমান গিলকে রেখে অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের ওপর চড়াও হন তিনি। দুবার অবশ্য জীবন মেলে ভারতীয় অধিনায়কের। ন্যাথান এলিসের করা দ্বিতীয় ওভারে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে তার সহজ ক্যাচ ছাড়েন কুপার কনোলি। পরের ওভারে ফের বেঁচে যান রোহিত। এই দফায় ক্যাচটি ছিল দুরূহ। বেন ডোয়ারশিসের ডেলিভারিতে অনেকটা দৌঁড়ে বলে হাত ছোঁয়ালেও রাখতে পারেননি মারনাশ লাবুশেন। পঞ্চম ওভারের শেষ বলে সাফল্য মেলে অজিদের। ডোয়ারশিসের বল থার্ড ম্যানে ঠেলে দিতে গিয়ে স্টাম্প হারান গিল। স্কোরবোর্ডে আর ১৩ রান যোগ হতে বিদায় নেন রোহিতও। তার ক্যাচ ফেলে দেওয়ার প্রায়শ্চিত্ত করেন কনোলি। ইনিংসের অষ্টম ওভারে এলবিডব্লিউ হওয়ার পর রোহিত রিভিউ নিলেও মাঠের আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত পাল্টায়নি। ২৯ বলে ২৮ রান আসে তার ব্যাট থেকে।
দ্রুত ২ উইকেট তুলে নেওয়ার চাপ জারি রাখতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া। বরং প্রতিরোধ লড়াইয়ে দারুণ জুটি গড়ে দলকে সামলে নেন কোহলি ও শ্রেয়াস। স্বাচ্ছন্দ্যে খেলে ৫৩ বলে ফিফটিতে পৌঁছান কোহলি। ওয়ানডেতে এটি তার ৭৪তম হাফসেঞ্চুরি। ব্যক্তিগত মাইলফলক স্পর্শের পরের ওভারে আউট হতে পারতেন তিনি। কিন্তু শর্ট মিডঅফে বল লুফে নিতে ব্যর্থ হন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। লেগ স্পিনার অ্যাডাম জ্যাম্পা পরের ওভারে আনেন ব্রেক থ্রু। ভাঙে ১১১ বলে ৯১ রানের তৃতীয় উইকেট জুটি। শ্রেয়াস বোল্ড হয়ে যান ৬২ বলে ৪৫ রান করে। পরে অবশ্য কোহলির হন্তারক সেই জ্যাম্পাই। ৯৮ বলে ৮৪ রানে থামে ৫ চারে গড়া তার সময়োপযোগী ইনিংসটি।
তার আগে ফাইনাল নিশ্চিতের ম্যাচটিতে যে ২৫-৩০ টি রান কম হয়েছে ম্যাচ শেষে অকপটে স্বীকার করে নিয়েছেন অজি দলনেতা স্মিথ। বিশেষ করে আলেক্স ক্যারিকে নিয়ে যখন ব্যাটিং করছিলেন তখন মনে হয়েছিল দুবাইয়ের মন্থর উইকেটেও তিনশ রান পেরিয়ে যাবে অস্ট্রেলিয়া। তবে স্মিথকে ফিরিয়েই বলতে গেলে রানের গতিতে লাগাম দিতে পারে রোহিত এন্ড কোং। যদিও শুরুটা করেন বরুণ চক্রবর্তী, নিজের প্রথম বলেই বিপজ্জনক ট্রাভিস হেডকে আউট করে। লং-অফে ক্যাচ তোলা হেডের ইনিংসে ছিল মিশ্র সাফল্য। প্রথম ১১ বলে মাত্র ১ রান নিলেও পরে গতি বাড়ানোর চেষ্টা করেন। শেষ পর্যন্ত ৩৩ বলে ৩৯ রান করেন।
মোহাম্মদ শামির রাউন্ড দ্য উইকেট লাইন অস্ট্রেলিয়ার দুই ওপেনার- কুপার কনোলি ও ট্রাভিস হেড- দুজনকেই সমস্যায় ফেলেছিল। হেড প্রথম বলেই জীবন পান, নিজের বলে ক্যাচ ধরতে ব্যর্থ হন শামি। তবে ৯ বল খেলেও কোনো রান না করতে পারা কনোলিকে আউট করেন তিনি। এক প্রান্ত আগলে টিকে থাকেন স্মিথ। অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক ছিলেন দারুণ আত্মবিশ্বাসী, প্রথম ওভারেই আকসার প্যাটেলকে লফটেড বাউন্ডারি মেরে বুঝিয়ে দেন তিনি। তবে বেশ কয়েকবার ভাগ্যের সহায়তাও পেয়েছেন- একবার আকসারের বলে ইনসাইড এজ স্টাম্পে লাগলেও বেল পড়েনি। আবার শামি একটি কঠিন রিটার্ন ক্যাচ ফেলেছেন।
এরমধ্যেই স্মিথ ও লাবুশেনের জুটির বিপক্ষে টানা ৫০ বল বাউন্ডারি আটকাতে সক্ষম হয় ভারত। শেষ পর্যন্ত দারুণ এক লেট কাটের মাধ্যমে চাপ ভাঙেন লাবুশেন। লেফট-আর্ম স্পিনারদের বিরুদ্ধে সøগ-সুইপ খেলেও চেষ্টা করেন, তবে জাদেজার এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়লে ৫৬ রানের জুটি ভাঙে। তবে ৬৬ বলে অর্ধশতক পূর্ণ করেন স্মিথ, যা ছিল আইসিসি ওয়ানডে নকআউট ম্যাচে তার সপ্তম ইনিংসে পঞ্চম ফিফটি। তবে অপর প্রান্তে তাকে খুব বেশি সঙ্গ দিতে পারেনি কেউ। জশ ইংলিস ১১ রানে সহজ ক্যাচ দিয়ে আউট হলে অস্ট্রেলিয়া কিছুটা চাপে পড়ে।
এরপর আলেক্স ক্যারি মাঠে নামলে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস আবার গতি পায়। তার ও স্মিথের ৫৪ রানের জুটি প্রায় প্রতি বলে বলে রান করে, যেখানে ভারতীয় স্পিনাররা ধাক্কা খান। এই জুটিতে কেয়ারি ছিলেন আগ্রাসী ব্যাটার এবং ইনিংসের শেষভাগে তিনি একাই দলকে টেনে নিয়ে যান। স্মিথের ইনিংস শেষ হয় ৭৩ রানে, যখন তিনি শামির ফুল টস মিস করে বোল্ড হন। এরপর আকসারকে বাউন্ডারি মারার পরের বলেই গ্লেন ম্যাক্সওয়েল বোল্ড হলে অস্ট্রেলিয়া আরও বিপাকে পড়ে। কিন্তু ক্যারি দায়িত্ব নিয়ে ৪৮ বলে অর্ধশতক তুলে নেন। তার ব্যাটেই শেষ পর্যন্ত লড়াইটা শেষ পর্যন্ত নিতে পারে অজিরা।