Facebook Bio Status

হুথিদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিষেধাজ্ঞা


পুনরায় ইয়েমেন-ভিত্তিক হুথি গোষ্ঠীটিকে বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে আখ্যা দেওয়ার একদিন পর এবার যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব বিভাগ এই গোষ্ঠীর সাত জ্যেষ্ঠ সদস্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। খবর আল জাজিরার।

মার্কিন রাজস্ব বিভাগ জানিয়েছে, ইয়েমেনের হুথি নিয়ন্ত্রিত এলাকায় সামরিক-গ্রেডের জিনিসপত্র এবং অস্ত্র ব্যবস্থা পরিচালনায় নিয়োজিত রয়েছেন এমন ব্যক্তিরাই নতুন নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েছেন।

রাজস্ব বিভাগের প্রধান বেসেন্ট জানিয়েছেন, গাজায় ইসরায়েলি হামলার সময় হুথিরা ইসরায়েল এবং লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজগুলোতে ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। কিন্তু গাজায় যুদ্ধবিরতির পর জানুয়ারিতে এই গোষ্ঠী তাদের আক্রমণ স্থগিত করেছে।

এর আগে গত জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের আবারও ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগ নেন। গত ২২ জানুয়ারি সই করা এক নির্বাহী আদেশে তিনি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওকে নির্দেশ দেন, পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এবং রাজস্ব মন্ত্রী সঙ্গে পরামর্শ করে এই বিষয়ে একটি প্রতিবেদন জমা দিতে।

সে সময় হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বাইডেন প্রশাসনের ‘দুর্বল নীতি’ হুথিদের সাহস বাড়িয়েছে। এর ফলে তারা যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজে ডজনখানেক এবং লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে শতাধিক হামলা চালিয়েছে।

ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র এখন তার আঞ্চলিক অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করে হুথিদের কার্যক্রম ও সম্পদের উৎস বন্ধ করার নীতি গ্রহণ করেছে। এর ফলে হুথিদের হামলা বন্ধ করে দেওয়া এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।

ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম মেয়াদের শেষদিকে হুথিদের ‘বিশেষভাবে মনোনীত বৈশ্বিক সন্ত্রাসী’ (এসডিজিটি) এবং ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল। তবে, জো বাইডেন প্রশাসন দায়িত্ব গ্রহণের কয়েক সপ্তাহ পরেই এই সিদ্ধান্ত বাতিল করে। তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন মানবিক সংকটের কথা উল্লেখ করে এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন।

বাইডেন প্রশাসন ২০২৪ সালে লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজ ও নৌবহরে বারবার হামলার জন্য হুথিদের আবারও এসডিজিটি হিসেবে তালিকাভুক্ত করে।

মূলত হুথি মুভমেন্ট প্রথম শুরু হয় উত্তর ইয়েমেন থেকে। সেখানের অধিকাংশ মানুষই জায়েদিজম অনুসরণ করেন, যা শিয়া মুসলিমদের একটি শাখা। কয়েক শতাব্দী ধরে জায়েদি ইমামরা ওই অঞ্চলে নিজেদের আদর্শ বাস্তবায়নের চেষ্টা চালায়। ১৯১৮ সালে তারা এক সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে। এই ইমামরা ১৯৬২ সাল পর্যন্ত শাসন ক্ষমতায় ছিলেন। সেসময় একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ইয়েমেন আরব রিপাবলিক প্রতিষ্ঠা হয়। পরে সুন্নি অধ্যুষিত এলাকার চেয়ে জায়েদি এলাকা তুলনামূলকভাবে গরিব হয়ে পড়ে। ১৯৮০ সালের দিকে সৌদি ও ইয়েমেনের সরকার উত্তরাঞ্চলে সুন্নি মতবাদকে প্রোমট করে। এমন পরিস্থিতিতে জোয়েদি মুভমেন্টের আবির্ভাব হয়।

১৯৯০ দশকের দিকে জায়েদি ধর্মগুরু হুসেন আল-হুথি সৌদি সমর্থিত গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। যদিও এটি ২০০১ সালের দিকে বিভক্ত হয়ে যায়। কিন্তু তার অনুসারীরাই হুথি নামে পরিচিত হয়।

ধীরে ধীরে হুথিদের বিরুদ্ধে সমর্থন বাড়তে থাকে, যা হুমকি হয়ে দাঁড়াতে শুরু করে ইয়েমেনের সরকারের জন্য। ২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন হামলারও সমর্থন করেছিল ইয়েমেনের নেতারা, যা ভালোভাবে নেয়নি ইরাকের জনগণ। তাদের এই ক্ষোভকে পুঁজি করে সরকারবিরোধী বিক্ষোভের ডাক দেয় হুথি। আল-হুথি ইরানের ইসলামিক বিপ্লব ও লেবনানের হিজবুল্লাহ মুভমেন্টকে মডেল হিসেবে গ্রহণ করেন। গোষ্ঠীটির মূল স্লোগান ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলকে নির্মূল।

ইয়েমেনের উত্তরাঞ্চলে হুথি বিদ্রোহীদের প্রভাব বাড়তে থাকায় দেশটির সরকার দমনপীড়ন শুরু করে। ২০০৪ সালে সরকারি বাহিনী গোষ্ঠীটির প্রতিষ্ঠাতা হুসেন আল-হুথিকে হত্যা করে। হুথি বিদ্রোহীদের অস্ত্রের মূল উৎস কালোবাজার ও কিছু সামরিক বাহিনী।

২০১১ সালে আরব বসন্তের সময় হুথি বিদ্রোহীদের সামরিক শাখা উত্তর ইয়েমেনের সাদা প্রদেশ দখল করে। নাম দেওয়া হয় আনসার আল্লাহ বা আল্লাহর রক্ষক

এরপর ২০১৪ সালে ইরানের সহায়তায় রাজধানী সানা দখলে নেয় হুথি বিদ্রোহীরা, মূলত তারা পশ্চিমাঞ্চলের অধিকাংশ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয়। এরপর দেশটির প্রেসিডেন্ট আবদ রাব্বো মনসুর হাদী সৌদি আরবে পলিয়ে যান। ২০১৫ সালে তার অনুরোধে ইয়েমেনে হুথি বিদ্রোহীদের লক্ষ্য করে হামলা শুরু করে সৌদি আরব। কয়েক বছরে ২৫ হাজারের বেশি হামলা চালানো হয়। নিহত হয় ১৯ হাজারের বেশি বেসামরিক নাগরিক।

২০২২ সালের এপ্রিলে দেশটিতে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়। তারপর থেকে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। যদিও চলতি বছরের শুরুর দিকে জাতিসংঘ জানায়, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মানবিক সংকটের মুখোমুখি ইয়েমেন। তবে রাজধানী দখলে নেওয়ার পর থেকেই ইয়েমেনের বেশ কিছু অঞ্চল দখলে নেয় তারা।

হুথি যোদ্ধারে মূল লক্ষ্য ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের মৃত্যু। কিন্তু ইয়েমেনের বাইরে হামলা করার মতো তাদের তেমন কোনো সক্ষমতা নেই। তবে সম্প্রতি তারা ইসরায়েলে হামলা চালানোর মতো ক্ষেপণাস্ত্র হাতে পেয়েছে। তাদের দীর্ঘ পরিসরের ক্ষেপণাস্ত্রটি এক হাজার কিলোমিটার দূরের লক্ষ্য বস্তুতে আঘাত হানতে পারবে।

আরও পড়ুন:

এই পরিসরের ক্ষেপণাস্ত্র খুব একটা উদ্বেগের না হলেও লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে হামলার বিষয়টি মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইরানের সহায়তা হুথিদেরকে একটি রাগট্যাগ সেনাবাহিনী থেকে একটি বাহিনীতে রূপান্তরিত করেছে। হুথিদের অত্যাধুনিক অস্ত্র ও প্রযুক্তির সরবরাহ করেছে ইরান।

টিটিএন

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।



Source link

Leave a Reply

Back to top button