Facebook Bio Status

হাইকোর্টে ১০ নারী বিচারপতি, আপিল বিভাগে নেই কেউ


কর্মক্ষেত্রে নারীদের পদযাত্রা বহু আগেই। চিকিৎসা আর ইঞ্জিনিয়ারিং পেশার বাইরেও এখন অর্থনীতির প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীদের অবদান অসামান্য। আইন সংশ্লিষ্ট পেশায়ও ভালো করছেন নারীরা।

বর্তমানে সারাদেশে বিচারকাজের গুরুদায়িত্ব পালন করছেন ৬৩৫ জন নারী। এর মধ্যে অধস্তন আদালতে আছেন ৬২৫ জন আর সুপ্রিম কোর্টে ১০ জন। তবে আপিল বিভাগে কোনো নারী বিচারপতি নেই, যেখানে নাজমুন আরা সুলতানা, জিনাত আরা আর কৃষ্ণা দেবনাথের মতো বিচারপতিরা ভালো কাজের স্বাক্ষর রেখে অবসরে গেছেন।

সুপ্রিম কোর্ট ও আইন মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, দেশের অধস্তন এবং সুপ্রিম কোর্টে (আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগ) মোট বিচারকের সংখ্যা এখন দুই হাজার ১৮৩ জন। সে হিসেবে বিচারকের এক তৃতীয়াংশ হলেন নারী।

দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতির সংখ্যা ১০১ জন। এর মধ্যে আপিল বিভাগে চারজন বিচারপতি রয়েছেন কিন্তু কোনো নারী বিচারপতি নেই। উচ্চ আদালতের হাইকোর্ট বিভাগে বিচারপতির সংখ্যা ৯৭ জন, এর মধ্যে নারী বিচারপতি ১০ জন। এর বাইরে আরও দুইজন নারী বিচারপতি রয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন, আরেকজন বিচারিক কাজ থেকে বিরত। বিচারকাজে জটিলতা থাকা সত্ত্বেও নারী বিচারপতির সংখ্যা নগন্য।

বাংলাদেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে প্রথম নারী বিচারক হলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ থেকে অবসরে যাওয়া বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা। এরপরে যিনি বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি হলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি জিনাত আরা। আর সর্বশেষ তৃতীয় নারী বিচারক হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ থেকে অবসরে গেছেন বিচারপতি কৃঞ্চাদেব নাথ। মূলত সুপ্রিম কোর্টের ইতিহাসে তারাই হলেন প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় নারী বিচারপতি।

হাইকোর্ট বিভাগে কর্মরত নারী বিচারপতিদের মধ্যে রয়েছেন নাইমা হায়দার, ফারাহ মাহবুব, ফাতেমা নজীব, বিচারপতি কাজী জিনাত হক, ফাহমিদা কাদের, মুবিনা আসাফ, নাসরিন আক্তার, আইনুন নাহার সিদ্দিকা, তামান্না রহমান খালিদী ও সাথিকা হোসেন।

অধস্তন আদালতে নারী বিচারকের সংখ্যা ৬২৫ জন। এর মধ্যে জেলা জজ ৬১ জন, অতিরিক্ত জেলা জজ ৮৭ জন, যুগ্ম জেলা জজ ১১২ জন, সিনিয়র সহকারী জজ ৯৬ জন এবং সহকারী জজ ২৬৯ জন।

হাইকোর্টে ১০ নারী বিচারপতি, আপিল বিভাগে নেই কেউ

বাংলাদেশের প্রথম নারী বিচারক ও বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা জাগো নিউজকে বলেন, উচ্চ আদালত ও নিম্ন আদালতে নারী বিচারকের সংখ্যা দিন দিন বেড়েছে। নারীরা দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। তবে, হাইকোর্টে আরও বেশি নারী বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া দরকার। বিচারপতি হওয়ার যোগ্যতা রাখেন, এমন অনেক নারী বিচারক অধস্তন আদালতে কর্মরত আছেন। আছেন যোগ্য নারী আইনজীবীও। নারী বিচারকের সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি বিচারকাজেও নারীরা ভালো করছেন।

বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা বলেন, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে এখন কোনো নারী বিচারপতি না থাকলেও আশা করছি অচিরেই একজন নারী বিচারপতি নিয়োগ পাবেন। কিন্তু আমি চাই না যে আপিল বিভাগের নিয়োগে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন হোক, অতীতে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে আপিল বিভাগে বিচারপতি নিয়োগ হয়েছে। এখন নিয়োগ হলে এমনিতেই একজন নারী বিচারপতি জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে নিয়োগ পাবেন।

বাংলাদেশের প্রথম নারী বিচারক নাজমুন আরা সুলতানা ১৯৭৫ সালে বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান। ২০০০ সালে তিনি হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। ২০১১ সালে আপিল বিভাগে নিযুক্ত হন। ২০১৭ সালের ৬ জুলাই তিনি অবসরে যান।

বিচারপতি নাজমুন আরার পর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ থেকে ২০২০ সালে ১৪ মার্চ অবসরে যান বিচারপতি জিনাত আরা। ২০২২ সালের ১ সেপ্টেম্বর অবসরে যান বিচারপতি কৃঞ্চা দেবনাথ।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আপিল বিভাগ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন বিচারপতি কাশেফা হোসেন। এ ছাড়াও স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী।

মানবাধিকারকর্মী ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ জাগো নিউজকে বলেন, বিচার বিভাগের পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সুযোগ পেয়ে অধস্তন আদালতে নারী বিচারকের সংখ্যা মোট বিচারকের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। এটা তাদের যোগ্যতা ও দক্ষতার স্পষ্ট প্রমাণ। কিন্তু উচ্চ আদালতে তুলনামূলকভাবে এত স্বল্প নারী বিচারপতির সংখ্যা নারীদের প্রতি বৈষম্যের প্রবণতা বলে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়।

ফাওজিয়া করিমের মতে, অধস্তন আদালতের মতো সুনির্দিষ্ট যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি নিয়োগের আইন হলে দলীয় ভিত্তিতে নিয়োগ এবং লিঙ্গ বৈষম্যের আশঙ্কা দূর হবে। আর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগেও নারী বিচারপতি নিয়োগ দেবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আব্দুল জব্বার ভূইয়াঁ জাগো নিউজকে বলেন, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা প্রথম বিচারক হিসেবে কাজ করে গেছেন। এখন নিম্ন আদালতে নারী বিচারকের সংখ্যা বাড়লেও উচ্চ আদালতে নারী বিচারপতির সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। উচ্চ আদালতে নারী বিচারপতির সংখ্যা বাড়ানো উচিত। আশা করছি, আগামীতে হাইকোর্টের পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগেও নারী বিচারপতি নিয়োগ দেবেন রাষ্ট্রপতি।

এফএইচ/এসএনআর/এমএমএআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।



Source link

Back to top button