হত্যাচেষ্টা মামলায় জিয়াউদ্দিনের নাম কীভাবে, প্রশ্ন পরিবারের


 

ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে গত ১৯ জুলাই ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে সন্ত্রাসীদের গুলিতে আহত হন মো. বশির উদ্দিন। এ ঘটনায় দীর্ঘদিন হাসপাতালে ছিলেন তিনি। এরপর সুস্থ হয়ে সেই হামলা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে গত ১০ ডিসেম্বর কাফরুল থানায় একটি মামলা করেন বশির। এরপর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে একটি অভিযোগও দায়ের করেন। মামলা এবং অভিযোগ দুই জায়গায়ই প্রধান আসামি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার জিয়াউদ্দিন রিপন।

বশির উদ্দিনের মামলায় গত ১৯ ডিসেম্বর রাতে জিয়াউদ্দিনকে গ্রেফতার করে কাফরুল থানা পুলিশ। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন।

মামলার বাদী বশিরের দাবি, এ ঘটনায় জিয়াউদ্দিন দায়ী। তিনি বেশ শক্তভাবে দাবি করেন ফ্যাসিস্ট সরকারের পক্ষে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনের সময় তিনি আসামিকে দেখেছেন এবং তাকে তিনি ভালোভাবেই চেনেন।

অন্যদিকে আসামিপক্ষের দাবি, এ ঘটনার সঙ্গে তার বিন্দুমাত্র সংশ্লিষ্টতা নেই। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি দুপুরে ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই দাবি করেন আসামি জিয়াউদ্দিন রিপনের স্ত্রী শারমিন জাহান।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, বাড়ি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে বাড়ি দখল করতে না পেরে একটি পক্ষ কৌশলে বাদীকে দিয়ে এ মামলাটি করিয়েছে। এর সঙ্গে তিনি দেওয়ানবাগী পীরের সাবেক ক্যাশিয়ারের সংশ্লিষ্টতা আছে বলে উল্লেখ করেন।

শারমিন জাহান জাগো নিউজকে বলেন, আমার স্বামী একটি স্বনামধন্য ইলেকট্রনিক কোম্পানিতে সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত। তিনি কখনো কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল না। বাড়ি দখল করার পাঁয়তারা থেকে এই মামলা হয়ে থাকতে পারে বলে জানান শারমিন।

আরও পড়ুন

তাদের দাবি, পৈতৃক বাড়ির দুটি ফ্ল্যাট বিক্রির জন্য একজনের সঙ্গে চুক্তি হয়। কিন্তু চুক্তির মেয়াদ শেষ হলেও টাকা পরিশোধ না করে ফ্ল্যাট দখলে নেন ওই ব্যক্তি। এরপর তিনি টাকা না দিয়ে পুরো বাড়ি দখলের পাঁয়তারা করছেন।

শারমিন জাহান বলেন, মামলা ও গ্রেফতারের বেশকিছু দিন আগে পীরের ১৫-২০ জন লোক এসে আমার স্বামীকে বাড়ির নিচে ডেকে নেয় এবং ১০ কোটি টাকা দাবি করে তা না হলে বাড়ি ছাড়তে হবে বলে হুমকি দেয়। তারাই এই মামলা করিয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই সবাই টের পেয়েছে যে নাশকতার অভিযোগে মামলা হলে জামিন পাওয়া যায় না। তখন অতিউৎসাহী একশ্রেণি নাশকতার মামলা দিতে শুরু করলো। এখন হয়ে গেছে বৈষম্যবিরোধী! আমার বিবেচনায় মামলা করার ক্ষেত্রে প্রাইমারি স্ক্যানিং না করে, টাচ না করে কাজ করা উচিত নয়। একজন মানুষ যদি ভিকটিমাইজ হয় তাহলে তার জীবন, পরিবার ও সমাজের ওপর যে প্রভাব পড়ে এটা শত ন্যায়বিচারের বাণী শুনিয়েও পূরণ করা যায় না।

 

কারাগারে থাকা স্বামী সম্পর্কে তিনি বলেন, তার দুই বছরের কন্যাসন্তান এখনো জানে তার বাবা অফিসে। আন্দোলনের সময় গত ১৯ জুলাই শুক্রবার বিকেলে বাসায় ছিলেন রিপন। কিন্তু মামলায় বলা হয়েছে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ওইদিন বিকেলে হামলা চালিয়েছে আন্দোলনকারীদের ওপর। আমার স্বামীকে গ্রেফতারের পর বলা হচ্ছে যে জজকোর্ট এবং অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে তাদের লোকজন আছে। জামিন হলেও আপিল করে তা থামানোর ব্যবস্থা করা হবে।

রিপনের স্ত্রী শারমিন জানান, তার স্বামী বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন। এমনকি বিজয়ের পর আনন্দ মিছিলও করেছেন। যদি তিনি এমন ন্যক্কারজনক ঘটনায় জড়িত থাকতেন তাহলে তো জুলাই থেকে ডিসেম্বর এত দিনে এলাকার মানুষ তাকে ধরতো।

পরিবারের সঙ্গে জিয়াউদ্দিন-সংগৃহীত ছবি

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার বাদী মো. বশির উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ১৩-১৪ দিন হলো মিরপুর-১৩ নম্বরে সরকারবাড়ি মোড়ে আমার চায়ের দোকানে বসছি। আন্দোলনের সময় ১৯ জুলাই গুলিতে আমার নাড়িভুড়ি ছিদ্র হয়ে গেছে। তখন হাসপাতালে ছিলাম; এরপরে আবার আটদিন হাসপাতালে ছিলাম, গরিব মানুষ চিকিৎসা ঠিকমতো করাতে পারছি না।

আরও পড়ুন

হামলা ও আহতের ঘটনা কবে ঘটলো, কখন, কবে কোথায় কোথায় মামলা করেছেন জানতে চাইলে বশির উদ্দিন বলেন, ‘আমি থানায় একটি মামলা করেছি। কিন্তু আসামি করেছি সাত-আট জনকে। আরও অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে কি না সেটা আমি জানি না, তাদের তো আমি চিনি না। অজ্ঞাত আসামি না দিলে নাকি এসব মামলা হয় না।’

তিনি জানান, গত মাসে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ জমা দিয়েছি। কবে দিয়েছেন জানতে চাইলে বলেন তারিখ মনে নেই।

আপনার আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ কিন্তু আদালতে আপনার পক্ষে এত আইনজীবী কীভাবে নিয়োগ দিলেন। এমন প্রশ্নের জবাবে বশির উদ্দিন বলেন, আমার আইনজীবী আঁখি আপা আগে থেকেই পরিচিত। দূর সম্পর্কের আত্মীয় হন তিনি। মামলার শুনানির সময় আইনজীবী নিয়ে আসেন তিনি নিজেই, কীভাবে আনেন সেটা আমার জানা নেই।

আপনার করা মামলার প্রধান আসামিকে কীভাবে চেনেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তার (জিয়াউদ্দিন) বাসার অপর পাশে, এক বছর বা দেড় বছর আগে একদিন প্রস্রাব করতে বসেছিলাম, তখন আসামি আমাকে বকাঝকা করেছিল। তখন থেকে তাকে আমি চিনি, তখন আমি গাড়ি (প্রাইভেটকার) চালাতাম।’

আপনার আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ কিন্তু আদালতে আপনার পক্ষে এত আইনজীবী কীভাবে নিয়োগ দিলেন। এমন প্রশ্নের জবাবে বশির উদ্দিন বলেন, আমার আইনজীবী আঁখি আপা আগে থেকেই পরিচিত। দূর সম্পর্কের আত্মীয় হন তিনি। মামলা শুনানির সময় আইনজীবী নিয়ে আসেন তিনি নিজেই, কীভাবে আনেন সেটা আমার জানা নেই।

আরও পড়ুন

‘রিপনের পরিবারের অভিযোগ, আপনি আহত হয়েছেন ঠিকই, কিন্তু অন্যের মদতে সুপরিকল্পিতভাবে আসামি রিপনের অফিস বন্ধের দিনে ১৯ জুলাইয়ের মামলায় তাকে আসামি করেছেন। আর এর নেপথ্যে একজন পীর আছেন।’

জবাবে বশির বলেন, আমি কোনো পীর-টির পছন্দ করি না। যদি কেউ বলে তার ইমান নেই।

ঘটনা ঘটলো ১৯ জুলাই, ডিসেম্বরে মামলা করেছেন কেন জানতে চাইলে বশির উদ্দিন বলেন, দুই মাস ১২ দিন হাসপাতালে ছিলাম। তাই দেরি হয়েছে, ডিসেম্বরের ৯ বা ১০ তারিখ মামলা করেছি।

আন্দোলনের সময় সম্ভবত কাজ করতে গেলে সংঘর্ষে নিহত হন এক ব্যক্তি। কিন্তু ১৭২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও দেড়শ আসামি উল্লেখ করে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। সেখানে আমার নাম ১৬৯ নম্বরে। কিন্তু আমরা বাদীর সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি, তিনি মানুষের কাছে শুনে মামলা করতে গেলে স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতারা এসব নাম যুক্ত করেন। এখন আর বাদীর কোনো খোঁজখবর নেই। তিনি গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন। কিন্তু পুলিশ হয়রানি করছে।

 

রিপনের পরিবার থেকে বলছে আন্দোলনকারীদের পানি বিতরণ করেছিল রিপন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের হামলার প্রশ্নই আসে না, এর জবাবে বশির উদ্দিন বলেন, না রিপন যদি পানি বিতরণ করে থাকে তা হলে সেটা পুলিশের সঙ্গে যারা গুলি চালিয়েছিল তাদের পানি খাওয়াতে পারে, আন্দোলনকারীদের না। বরং আমি গাড়ি চালানো বাদ দিয়ে গত ১২ এবং ১৩ জুলাই আন্দোলনকারীদের মাঝে শরবত বিতরণ করেছিলাম। এর পরে ১৯ জুলাই বিকেলে গুলিবিদ্ধ হই।

অন্যের প্ররোচণায় রিপনকে আসামি করেছেন বলে তার পরিবারের দাবি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘না আমি তাকে চিনি। রিপন আমাকে গুলি না করলেও পুলিশের সঙ্গে ছিল।’

গত ১৯ জুলাই বিকেলে আপনার স্বামী কোথায় ছিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে রিপনের স্ত্রী বলেন, ‘আমরা সারাদিনই বাসায় ছিলাম। ওইদিন অফিস ছুটি। বিকেলে সে পুলিশের সঙ্গে ছিল এটা কখনো হতে পারে না। সম্পূর্ণ বানানো কথা।’ এ কথা বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

তবে শুধু জিয়াউদ্দিনের ঘটনাই নয়। এমন উদাহরণ আরও আছে। গাজীপুর সদরের গাছা থানার জুলাই আন্দোলনের সময় আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা মামলার আসামি রকিবুল হাসান। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, আন্দোলনের সময় সম্ভবত কাজ করতে গেলে সংঘর্ষে নিহত হন এক ব্যক্তি। কিন্তু ১৭২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও দেড়শ আসামি উল্লেখ করে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। সেখানে আমার নাম ১৬৯ নম্বরে। কিন্তু আমরা বাদীর সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি, তিনি মানুষের কাছে শুনে মামলা করতে গেলে স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতারা এসব নাম যুক্ত করেন। এখন আর বাদীর কোনো খোঁজখবর নেই। তিনি গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন। কিন্তু পুলিশ হয়রানি করছে।

সংবাদ সম্মেলনে জিয়াউদ্দিনের পরিবার-ছবি জাগো নিউজ

ওই মামলায় ১৭২ জনের নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়েছে। কিন্তু মামলার বাদী জানেন না এত আসামি কোথা থেকে আসলো। গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিতে কর্মরত ওই নারী মামলা করতে কয়েকজনের নাম দিয়েছিলেন। কিন্তু পরে এত আসামি কীভাবে হলো জানেন না তিনি।

সরকারের উদ্যোগ

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, কারও নামে হয়রানিমূলক মামলা করা হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর আগে তার মন্ত্রণালয় থেকেও এ রকম সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কে শোনে কার কথা। ঢালাও মামলার পর হয়রানি মামলাও হচ্ছে।

এর আগে গত ৩০ ডিসেম্বর আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘মামলা-বাণিজ্য শুরু হয়েছে। মানবতাবিরোধী অপরাধ, হত্যার বিচারের দাবিতে ব্যবসা শুরু হয়েছে আমাদের সমাজে। তাদের আমরা চিহ্নিত করবো। অবশ্যই তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।’

আরও পড়ুন

আইনজ্ঞদের মতামত

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন জাগো নিউজক বলেন, আগের সরকারের সময়ে মিথ্যা, ভুয়া ও হয়রানিমূলক মামলা ছিল। ঘটনা না ঘটলেও মামলা হতো। আমরা আগেও বলেছি, এখনো বলছি অনেক হয়রানিমূলক মামলা হচ্ছে।

তিনি বলেন, আমি মনে করি কোনো মিথ্যা মামলা হওয়া উচিত নয়। এমনিতেই আমাদের পর্যাপ্ত মামলা আছে, মিথ্যা মামলা মানে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা। আমরা চাই যে সব মামলা আছে সেগুলো শেষ করতে। এসব হয়রানিমূলক মামলায় নিরপরাধীরা যেন আক্রান্ত না হন আমরা সেটা চাই।

এখন পুলিশ ছাড়াও ভিকটিমের পরিবার থেকে মামলা করা হচ্ছে। সেগুলো কিন্তু চিহ্নিত করার সুযোগ থাকে যেমন আমার ভাই, বাবা বা কেউ মারা গেছে অথবা আহত হয়েছে, আমি বাদী হয়ে মামলা করেছি। কিন্তু আমার সাথে যার শত্রুতা তাদের সবাইকে আসামি করছি। এক্ষেত্রে কিন্তু পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করছে না। আদালত তদন্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলছে।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের বিভিন্ন এলাকায় হওয়া মামলা ও হয়রানির বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আব্দুল জব্বার ভূইয়া জাগো নিউজকে বলেন, আগেও ভুয়া ও গায়েবি মামলা হতো। মামলার কোনো ঘটনাই ঘটেনি মামলা হয়ে গেছে। আপনারা জানেন ২৮ অক্টোবর প্রধান বিচারপতির বাড়িতে ঢিল মারা হলো, মামলা হলো। কে বা কারা হামলা করলো আসামি হলো বিএনপি নেতারা! এই হলো অবস্থা।

তিনি আরও বলেন, এখনো মামলা হচ্ছে। তবে, এ সংক্রান্ত মামলার বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের সাথে আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং এসব মামলায় কোর্ট থেকে জামিন হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

উদাহরণ টেনে তিনি জানান, এখন পুলিশ ছাড়াও কিন্তু ভিকটিমের পরিবার থেকে মামলা করা হচ্ছে। সেগুলো কিন্তু চিহ্নিত করার সুযোগ থাকে যেমন আমার ভাই, বাবা বা কেউ মারা গেছে অথবা আহত হয়েছে, আমি বাদী হয়ে মামলা করেছি। কিন্তু আমার সাথে যার শত্রুতা তাদের সবাইকে আসামি করছি। এক্ষেত্রে কিন্তু পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করছে না। আদালত তদন্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলছে।

মামলা দিয়ে হয়রানি করার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার জাগো নিউজকে বলেন, আগে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকতে যেমন বিভিন্নভাবে হয়রানি ও গায়েবি মামলা হতো। বর্তমানেও বৈষম্যবিরোধী ও হত্যা মামলা হচ্ছে। কিন্তু এর সঠিক কোনো সুরাহা নেই। যেমন আমার কাছে বেশ কয়েকটি মামলা আছে রাজধানীসহ আশপাশেল জেলায়ও যেখানে শুধু বাদী পরিবর্তন করে সেইম আসামি। আমরা এটার প্রতিকার চাই। চাই না কোনো মামলায় নিরীহ মানুষ হয়রানির শিকার হোক।

আরও পড়ুন

মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) চেয়ারম্যান সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ জাগো নিউজকে বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিষয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পরিবারের সদস্যদের পক্ষ থেকে দায়ের করা মামলায় হয়রানির জন্যে কোন কোন ঘটনায় দেড় থেকে দুই এমনকি তিনশ আসামি করা হচ্ছে। এটা ঠিক নয়। কারণ সরকার থেকে বলা হচ্ছে যে সব মামলায় আসামির সংখ্যা বেশি এগুলো হয়রানির উদ্দেশ্যে করা, যেসব মামলায় আসামির সংখ্যা বেশি ওইসব মামলায় গ্রেফতার করা হলে জামিন পাবে।

তিনি আরও বলেন, আদালতে গেলে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র। হাইকোর্ট জামিন দিলেও জজকোর্ট আটকে দিচ্ছে। তাতে মনে হচ্ছে, পাবলিক প্রসিকিউটর সরকারের কথা শুনছে না বা পিপি, জিপিদের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই। তাই ব্যক্তিগত ও পারিবারিক এবং ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের জেরে যেসব রাজনৈতিক মামলা হচ্ছে সেসব বন্ধ হওয়া উচিত।

মামলা দিয়ে হয়রানির বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির জাগো নিউজকে বলেন, আগে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সবাই টের পেয়ে গেল যে নাশকতার অভিযোগে মামলা হলে জামিন পাওয়া যায় না। তখন অতিউৎসাহী একশ্রেণি নাশকতার মামলা দিতে শুরু করলো। এখন হয়ে গেছে কী বৈষম্যবিরোধী! বৈষম্যবিরোধী মামলা হলে কী হবে লাভ কী?

তিনি বলেন, আমার বিবেচনায় মামলা করার ক্ষেত্রে প্রাইমারি স্ক্যানিং না করে টাচ না করে কাজ করা উচিত নয়। একজন মানুষ যদি ভিকটিমাইজ হয় তাহলে তার জীবন, পরিবার ও সমাজের ওপর যে প্রভাব পড়ে এটা শত ন্যায়বিচারের বাণী শুনিয়েও পূরণ করা যায় না।

এফএইচ/এসএইচএস/এমএস



Source link

Exit mobile version