সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা আশুলিয়ার ওসি নিয়োগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড়

সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতাকে ঢাকা জেলার আশুলিয়া থাকার ওসি নিয়োগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় শুরু হয়েছে। ঢাকা জেলার গুরুত্বপূর্ণ আশুলিয়া থানার ওসি হিসেবে নিয়োগ পেলেন নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা পুলিশ পরিদর্শক মনিরুল হক ডাবলু। এর আগে তিনি ডিএমপির নিউ মার্কেট থানায় ওসি অপারেশন হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় ফ্যাসিবাদী সরকারের সাবেক এমপি নজরুল ইসলাম বাবু তার নামে ডিও লেটার দিয়েছিলেন।
বিগত জুলাই আন্দোলনে পতিত শেখ হাসিনার নির্দেশে তিনি ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলির নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে অভিযোগও রয়েছে। অন্তর্বতী সরকারের আমলে ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ পাওয়ায় পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন ও পুলিশ সদস্যদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তাকে অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানায় পুলিশের অনেক সদস্য। তার নিয়োগের পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ নজরুল ইসলাম বাবুর প্রত্যয়ন পত্র। প্রত্যয়ন পত্র মনিরুল হক ডাবলুকে দুর্দিনে ছাত্রলীগের লিয়াকত বাবু কমিটিতে কেন্দ্রীয় সদস্য হিসেবে ভূমিকা রাখার কথা উল্লেখ করা হয়। প্রত্যয়ন পত্র তাকে ব্যক্তিগতভাবে একজন মুজিব সৈনিক ও শেখ হাসিনার নির্ভীক কর্মী হিসেবে দাবি করেন নজরুল ইসলাম বাবু।
এদিকে ২ মার্চ ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আনিসুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে ঢাকা রেঞ্জ থেকে যোগদান কৃত পুলিশ পরিদর্শক মো. মনিরুল হক তাবলুকে আশুলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ হিসাবে নিয়োগ দেন। এই নিয়োগের পরেই পুলিশ পরিদর্শকদের মাঝে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে উঠে ডাবলুন নামে দেওয়া নজরুল ইসলাম বাবুর প্রত্যয়ন পত্র। এমনকি বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের ছাত্র নেতাদের কাছেও পৌঁছে দেয়া হয় আশুলিয়া থানার ওসি নিয়োগের বিষয়টি।
পুলিশ সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পুলিশ পরিদর্শক মনিরুল হক ডাবলু দীর্ঘ স্বৈরাচারী শাসনামলে ঢাকা মেট্রোপলিটন সহ পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট গুলিতে কর্মরত ছিল। তার যোগাযোগ ছিল পাঁচ আগস্টের পর পালিয়ে যাওয়া পুলিশের তৎকালীন নেতাদের দপ্তর বাসায়। সে নিজেকে ছাত্রলীগ নেতা হিসেবেই দাবি করত। ২০২৪ সালের নির্বাচনের পরও নিজেকে ছাত্রলীগ বলেই দাবি করত। ৫ আগস্ট এর পর কর্মস্থল ফেলে সকল পুলিশ সদস্য পালিয়ে যায়। ৬ আগস্ট থেকে সাবেক পুলিশ কর্মকর্তাদের সহায়তায় বঞ্চিত পুলিশ কর্মকর্তারা পুলিশকে পুনর্গঠনে উদ্যোগ নেয়। এর সুযোগে মনিরুল হক ডাবলু নিজেকে বঞ্চিত দাবি করে পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের মাঝে একটি কমিটি গঠন করে। কিছু অনুসারী নিয়ে নিজেকে স্বঘোষিত সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করে বলে অভিযোগ আছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মনিরুল হক ডাবলু সবসময়েই গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত ছিল। ১/ ১১ র পর মনিরুল হক তাবলু ঢাকা মেট্রো পলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগে এসআই হিসেবে কর্মরত ছিল। সে সময় ডিবির ডাবলু দারোগা নামে অনেক বিএনপি ও জামায়াত নেতা কর্মীদের হয়রানি ও নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। মনিরুল হক ডাবলু কে আশুলিয়া থানার ওসি নিয়োগের বিষয়ে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি আওলাদ হোসেন বলেন, তার সম্পর্কে আমার কিছুই জানা নাই। থানার ওসি নিয়োগ করে জেলার পুলিশ সুপার। এ বিষয়ে ঢাকা জেলার এসপিকে জিজ্ঞেস করুন। আমার কাছে কোন তথ্য নেই।
তবে আশুলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ নিয়োগকে ঢাকার পুলিশ সুপার আনিসুজ্জামানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ইনকিলাবকে বলেন, একজন পেশাদার কর্মকর্তা হিসেবে গোয়েন্দা তথ্যের যাচাই-বাছাই করে তাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কোন টাকার বিনিয়ে বা অন্য কোন কারণে তাকে নিয়োগ দেয়া হয়নি।