
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এবং সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন গতকাল শনিবার নগরীর দক্ষিণ আগ্রাবাদের আবিদার পাড়ার ঠান্ডা মিয়া ব্রিজ, ডাইল ব্রিজ ও নয় নম্বর ব্রিজ সংলগ্ন মহেশ খাল খনন কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, খালের পানি যাতে দূষিত না হয়, সে বিষয়ে জনসম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করতে হবে। মেয়র এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রমের মাধ্যমে এই উদ্যোগকে সফল করতে হবে। এছাড়া চট্টগ্রামের পানিবদ্ধতা নিরসনে বিভিন্ন সংস্থার যৌথ প্রচেষ্টা দরকার বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, আগামী মে মাসের মধ্যে পানিবদ্ধতা প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি শেষ হবে না হয়তো, তবে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড, ওয়াসা, সিটি কর্পোরেশন এবং সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার সমন্বয়ে এই সমস্যা সমাধানে কাজ করা হবে।
পানিবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে দুর্নীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পূর্বের প্রকল্পগুলোতে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। দুর্নীতি দমন কমিশন এসব বিষয় দেখবে। আমাদের কাজ হচ্ছে পানিবদ্ধতা নিরসনে সিটি কর্পোরেশন ও অন্যান্য সংস্থাকে সহযোগিতা করা।
গ্রীষ্মকালে লোডশেডিং প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গরমের মাত্রা ও বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থার উপর নির্ভর করে লোডশেডিংয়ের পরিস্থিতি নির্ধারিত হবে। সরকার এলএনজি আমদানি বৃদ্ধি, ট্রান্সফরমার মেরামত এবং বিদ্যুৎ সরবরাহের উন্নয়নে কাজ করছে। বিদ্যুৎ বিতরণের ক্ষেত্রে শহর ও গ্রামের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা হবে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধ করতে হবে। অবৈধ সংযোগ বন্ধ করতে হবে। এয়ার কন্ডিশনার ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার উপরে রাখা উচিত, যা বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সহায়ক হবে।
মহেশ খালসহ চট্টগ্রামের খালের খনন প্রকল্পের জন্য অতিরিক্ত অর্থায়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের পরেও কাক্সিক্ষত ফলাফল পাওয়া যায়নি। তাই প্রথমে দৃশ্যমান উন্নতি নিশ্চিত করতে হবে। সফলতা প্রমাণ হলে প্রয়োজনীয় অর্থায়নে কোনো সমস্যা হবে না।
চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, জনগণের স্বার্থে যেখানে নালা আছে, সেখানে যদি কেউ বিল্ডিং নির্মাণ করে থাকে, তা অপসারণ করতে হবে। আমরা জনগণের স্বার্থে কাজ করছি এবং করব। চট্টগ্রামের খাল পুনরুদ্ধার ও সংস্কারের কার্যক্রম চলছে। এছাড়া, ১৬০০ কিলোমিটার নালার পরিষ্কার কার্যক্রম শুরু হয়েছে এবং এটি চলমান থাকবে। আমরা আশা করছি, সামনের বছর অর্থাৎ মার্চ থেকে জুনের মধ্যে পানিবদ্ধতা নিরসনের কাজ সম্পূর্ণ হবে। এ বছর যাতে পানিবদ্ধতা কমে আসে, সে লক্ষ্যে খাল ও নালা পরিষ্কার কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে আমরা বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। জনগণকে সচেতন করতে প্লাস্টিক ও পলিথিন না ফেলার আহ্বান জানানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে “প্লাস্টিক এক্সচেন্জ” কর্মসূচির আওতায় প্লাস্টিকের পরিবর্তে চাল, ডাল, মুরগি ও পেঁয়াজ বিতরণ করা হচ্ছে। বিভিন্ন এনজিও সংস্থা আমাদের সঙ্গে কাজ করছে। চট্টগ্রামের ৪১টি ওয়ার্ডে এক্সচেঞ্জিং প্রোগ্রাম এবং জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়া, শহরের বিভিন্ন স্থানে সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে, যাতে জনগণ খাল ও নালায় ময়লা না ফেলে। এটি আমাদের একার শহর নয়, সবার শহর। এই শহরে আমাদের পূর্বপুরুষরা চলাফেরা করেছেন, আমরা করছি এবং ভবিষ্যতে আমাদের সন্তানরা করবে। তাই আমাদের সবার স্বার্থে শহরকে পরিষ্কার ও সুন্দর রাখা জরুরি। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. জিয়াউদ্দীন, সিডিএ’র চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল করিম, চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম, চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার ইখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, সিডিএ’র খাল খনন প্রকল্পের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফেরদৌস আহমেদ। উদ্বোধন শেষে উপদেষ্টার নেতৃত্বে বির্জা খাল, চট্টগ্রাম মেডিকেলের পূর্বগেটসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট পরিদর্শন করেন তারা।