Facebook Bio Status

সংঘর্ষের ঘটনায় হল থেকে বহিষ্কার ৫ শিক্ষার্থী, ১৪ জনকে শোকজ


ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজে হলের সিট বরাদ্দের নবায়ন ইস্যুতে সংঘর্ষের ঘটনায় পাঁচ শিক্ষার্থীকে হল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। একইসঙ্গে ১৪ শিক্ষার্থীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়াসহ আরও চারজনকে সতর্ক করা হয়েছে।

বহিষ্কৃতরা হলেন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী জহিরুল ইসলাম জনি, ইতিহাস বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আকরাম হোসেন অপু, একই বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মুকুল, ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী খায়রুল ইসলাম এবং মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আলী আকবর।

কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়েছে রুমন, মোস্তাক, তন্ময়, হৃদয় খান, রিয়াদ, রবিন, ফরহাদ, মুস্তাফিজুর রহমান, শাহিন, হুমায়ুন, পিয়াস, নাঈম, রাফি ও আল আমিনকে। তারা বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থী। পাশাপাশি সংঘর্ষের জড়ানোয় শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান, বাঁধন, দেলোয়ার ও রামিমকে সতর্ক করা হয়েছে।

শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় জাগো নিউজকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন কলেজের হল সুপার অধ্যাপক মো. শাহজাহান করিম সাজু।

তিনি বলেন, সম্প্রতি তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বহিষ্কৃত পাঁচজনের সংঘর্ষের ঘটনায় সরাসরি জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। তাদের হামলার দৃশ্য সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়েছে।

হল সুপার আরও বলেন, ‘গত ৫ আগস্টের আগে অন্তত ৩৫ জন শিক্ষার্থী অবৈধভাবে বিভিন্ন হলের সিট দখল করে থেকেছে। তাদের পড়াশোনা শেষ হলেও সিট ছাড়েনি। এরা ৫ আগস্টের পর হল ছেড়েছে। গত ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে হলের সিট নবায়ন শুরু হয়ে এখনো চলছে। এখন থেকে বৈধ শিক্ষার্থীরাই হলে থাকতে পারবে।’

এদিকে সম্প্রতি তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেও শিক্ষার্থীরা সেটি এখনো জানেন না। আশিকুর রহমান ও বাধন নামের যে দুজনের নাম তদন্ত প্রতিবেদনে এসেছে, তারা হলের শিক্ষার্থী না বলে জানিয়েছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। তাদের রাজনৈতিক অথবা ছাত্রসংগঠনের পদবি আছে কিনা তা খোলাসা করছেন না কোনো অধ্যাপক।

কলেজের একটি সূত্র জাগো নিউজকে জানায়, কলেজে ছেলেদের পল্লীকবি জসীম উদ্দীন হল, কবি নজরুল হল, ভাষাসৈনিক আহমেদ সালেক হল নামের তিনটি হল রয়েছে। এসব হলে ৩৭৫টি সিট রয়েছে। এছাড়া সুকান্ত হল নামের আরও একটি হল নির্মাণাধীন। আগে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাদের শেল্টারে ছাত্র নয় এমন শতাধিক ছেলে হলে থেকেছেন। এরইমধ্যে অন্তত ৩৫ জন হল ছেড়ে চলে গেছেন। ছাত্র নয় এমন আরও ৭৫ জনের সিট হারানোর আশঙ্কা রয়েছে।

সূত্রটি আরও জানায়, তদন্ত প্রতিবেদনে যে চারজনকে সতর্ক করা হয়েছে তাদের মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ময়মনসিংহের অন্যতম সমন্নয়ক আশিকুর রহমানের নাম রয়েছে। আশিকুর রহমান ও বাধন নামের দুজন ছাড়া তদন্ত প্রতিবেদনে নাম আসা অন্য সবাই হলে থাকতেন। আশিকুর রহমান কলেজে অনার্স শেষ করেছেন। তিনি মাস্টার্সে ভর্তি হবেন।

জসীম উদ্দীন হলের শিক্ষার্থী সোহেল রানা বলেন, ‘হল খোলার পর থেকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে আমরা থাকছি। আগে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কলেজ শাখার নেতারা অনেককে তাদের মিছিলে যেতে বাধ্য করেছেন। এখন সেই পরিবেশ নেই। সবাই শান্তিতে পড়ালেখা করছে। তবে তদন্ত প্রতিবেদনে কোন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা আমরা এখনো জানি না।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হলের আরেকজন শিক্ষার্থী বলেন, সিট বরাদ্দের নবায়ন ফি সাত হাজার থেকে কমিয়ে ছয় হাজার ৫০০ টাকা করেছিল কলেজ কর্তৃপক্ষ। পরে নবায়ন ফি এর চেয়ে আর কমানো হয়নি। কলেজ শান্তিপূর্ণ রাখার স্বার্থে সাধারণ ছাত্ররা আর আন্দোলনে নামবেন না। তবে সংঘর্ষের ঘটনায় কোনো শিক্ষার্থী বহিষ্কার হয়েছে কিনা তা আমাদের জানা নেই।

সংঘর্ষের ঘটনায় হল থেকে বহিষ্কার ৫ শিক্ষার্থী, ১৪ জনকে শোকজ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ময়মনসিংহের অন্যতম সমন্নয়ক আশিকুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘সংঘর্ষের ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে আমাকে সতর্ক করা হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। তবে আমার বক্তব্য স্পষ্ট—সবসময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশে ছিলাম, আগামীতেও থাকবো।’

এ বিষয়ে আনন্দ মোহন কলেজের অধ্যক্ষ মো. আমান উল্লাহ জাগো নিউজকে বলেন, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পড়ালেখা করছে। আর কখনো এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটবে না, শিক্ষার্থীদের কাছে এমনটাই প্রত্যাশা করি।

এরআগে গত ১২ জানুয়ারি বিকেল ৫টার দিকে হলের সিট বরাদ্দের নবায়ন ইস্যুতে গণ্ডগোলের সূত্রপাত হয়। পরে ময়মনসিংহের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্নয়ক আশিকুর রহমানসহ অন্যরা এলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে দুই পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হন। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

এ ঘটনায় ওইদিন রাত ৮টার দিকে কলেজ ও হল বন্ধ ঘোষণা করে কলেজ প্রশাসন। বলা হয়, পরদিন ১৩ জানুয়ারি সকাল ৮টার মধ্যে ছেলেদের হল ছাড়তে হবে। তবে মেয়েরা হলে থাকতে পারবে।

ওইদিন দুপুর পর্যন্ত গুটিকয়েক ছাত্র হল ছাড়লেও বেশিরভাগই হলে অবস্থান নেন। তাদের দাবি না মানা পর্যন্ত হল না ছাড়ার ঘোষণা দেওয়া হয়।

তাদের দাবিগুলো ছিল হামলাকারীদের পরিচয় প্রকাশসহ তাদের গ্রেফতার করতে হবে; আহতদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে; হলে থাকা সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে; বহিরাগত সন্ত্রাসীদের কলেজ ক্যাম্পাসে প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে হবে; নতুন সিট নবায়নে বর্তমান বৈধ সিটধারীদের সিট স্ব স্ব অবস্থানে নিশ্চিত করতে হবে এবং সিট নবায়নের ফি কমাতে হবে।

পরে দুপুর দেড়টার দিকে কলেজের আইনশৃঙ্খলা কমিটি ও হল পরিচালনা কমিটির আহ্বায়কসহ অন্যান্য সদস্যরা হলে থাকা ছাত্রদের সঙ্গে আলোচনা করেন। এসময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে বিকেল ৪টায় হল ত্যাগ করতে রাজি হন শিক্ষার্থীরা। পরে বিকেল ৫টার দিকে হলের সব শিক্ষার্থী বের হয়ে যান।

এ ঘটনায় ১৪ জানুয়ারি কলেজের একাডেমিক কাউন্সিলের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সেদিনের ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করতে ব্যবস্থাপনা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান খন্দকার রেজাউর রহমানকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্যরা হলেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রশিদুল আলম, রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শাহীন কবির ও অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক সাইফুল ইসলাম।

সংঘর্ষের ঘটনার তিন দিন পর ১৬ জানুয়ারি সকালে প্রতিষ্ঠানটির একাডেমিক কার্যক্রম আবার চালু হয়। পরে ১০ ফেব্রুয়ারি বন্ধ থাকা হলগুলো খুলে দেয় কলেজ প্রশাসন।

কামরুজ্জামান মিন্টু/এসআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।



Source link

Leave a Reply

Back to top button