শেরপুরে গৃহহীন জামাল উদ্দিন ২০ বছর ধরে রাত কাটাচ্ছেন মসজিদ- মক্তবে!

শেরপুরের নকলার জামাল উদ্দিন (৮৬) গৃহহীন দীর্ঘ ২০ বছর যাবৎ রাত কাটাচ্ছেন মসজিদ-মক্তবে। তিনি উপজেলার গণপদ্দী ইউনিয়নের বড়ইতার গ্রামের মৃত আছিম উদ্দিনের ছেলে।
সম্প্রতি তাকে দেখা গেছে, মাথায় পাগড়ি পরিহিত লাঠি হাতে বড়ইতার গ্রামের হাজীবাড়ী মসজিদ ও তা’লিমুল কুরআন মক্তব থেকে বের হচ্ছেন। তিনি জানান, ২০ বছর আগে তার স্ত্রী মারা গেছেন। মারা যাওয়ার আগে ৪ মেয়ে ও স্ত্রীসহ বসবাসের জন্য একটি ভাঙা ঘর ছিল। ছিল ১০ শতক বাড়িভিটা। স্ত্রী মারা যাওয়ার আগের বছর ঘরটি সম্পূর্ণভাবে ভেঙে যায়। তিনি হয়ে যান গৃহহীন। মেয়েরা স্বামীর বাড়ি চলে যাওয়ায় এবং স্ত্রী মারা যাওয়ায় একা হয়ে যান তিনি। একাকিত্ব সইতে না পেরে এবং কর্মক্ষমতা না থাকায় শেষ সম্বল ১০ শতক জমি বিক্রি করে পবিত্র উমরাহ পালন করেন।
পরে এলাকাবাসীর অর্থায়নে পরিচালিত হাজীবাড়ী ওয়াক্তিয়া মসজিদ ও তা’লিমুল কুরআন মক্তবে বসবাসের মনস্থির করেন। এলাকাবাসীর অনুমতিক্রমে ওই মসজিদ-মক্তবের কোণায় স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন তিনি। এলাকাবাসী একেক দিন, একেকজন মক্তবে খাবার দেন। যে যা দেন, তা খেয়েই দিনাতিপাত করছেন বৃদ্ধ জামাল। স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে না পারায় খাবার ও ওষুধ কিনতে পারেন না। দীর্ঘ ২০ বছর তার এভাবেই চলা। তিনি কাঁপা কণ্ঠে বলেন, কয়েকজন শিক্ষিত লোকের সহযোগিতায় সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দকৃত সমাজসেবার বয়স্ক ভাতা পাচ্ছি। আল্লাহর রহমত আর এলাকাবাসীর সহায়তা ছাড়া তার কোনো সম্বল নেই। তবে মাঝেমধ্যে মেয়ে ও মেয়েজামাই খোঁজখবর নেন।
গণপদ্দী ইউপি চেয়ারম্যান জানান, বৃদ্ধ চাচাকে সরকারি ঘর দিতে চাইলে তিনি বলেন, জন্ম নিয়েছি আল্লাহর ইশারায়। মৃত্যুও হবে তার ইশারাতেই। তাই স্ত্রী মারা যাওয়ার পরে বাবার রেখে যাওয়া ১০ শতক জমি বিক্রি করে পবিত্র উমরাহ পালন করেছি। আল্লাহর ঘর তাওয়াফ করার সুযোগ হয়েছে। নবীজির রওজা মোবারক জিয়ারত করেছি। ঘরবাড়ি দিয়ে কি হবে? তবে বয়স্ক ভাতার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি আগে জানা ছিল না। এখন থেকে অফিসিয়ালি খোঁজখবর নেওয়ার পাশাপাশি ব্যক্তিগত ভাবেও বৃদ্ধ চাচার খোঁজ রাখব। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, জামাল উদ্দিনের স্ত্রী মারা যাওয়ার পরে তিনি সম্পূর্ণভাবে একা হয়ে পড়েন। এলাকাবাসীর অনুমতিক্রমে ২০ বছর ধরে বড়ইতার গ্রামের হাজীবাড়ী ওয়াক্তিয়া মসজিদ ও তা’লিমুল কুরআন মক্তবের কোণায় কাপড়ের বেড়া দিয়ে তিনি বসবাস করছেন। মেয়ে ও জামাই নিতে চাইলেও তিনি যান না। জামাল উদ্দিন আল্লাহ ছাড়া কারো ভরসা করেন না।
নকলা উপজেলার কবুতরমারী গ্রামের আলহাজ্ব জাকির হোসেন চঞ্চল ইনকিলাবকে বলেন, ওই মসজিদ ও তা’লিমুল কুরআন মক্তবের পাশে ছোট্ট ঘর তৈরি করে দিলে সেখানে নিরাপদে বসবাস করতে পারবেন তিনি।