লিচুর রাজ্যে মুকুলের সুবাস

লিচুর রাজ্য হিসেবে পরিচিত দিনাজপুরের পথেঘাটে এখন মুকুলের সুবাস। বসন্তের বাতাসে দোলা লিচু গাছের পাতার ওপর দিয়ে দেখা যাচ্ছে সোনালি মুকুল। বাগানের গাছগুলোতে থোকায় থোকায় মুকুল আসতে শুরু করেছে। উপযোগী আবহাওয়ায় এবার লিচুর বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখছেন চাষি ও কৃষি কর্মকর্তারা।
লিচু চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দিনাজপুরের লিচু দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় সরবরাহ করা হয়ে থাকে। লাভজনক হওয়ায় প্রতিবছরই জেলায় লিচুর চাষ বাড়ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবং প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না এলে এবারও দিনাজপুরে রেকর্ড পরিমাণ লিচুর ফলন হবে।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র মতে, জেলায় পাঁচ হাজার ৪১৮টি লিচু বাগান রয়েছে। গত মৌসুমে জেলায় পাঁচ হাজার ৭৮৭ হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ হয়েছিল। এতে প্রায় ৩৫ হাজার মেট্রিক টন লিচু উৎপাদন হয়েছিল। এসব লিচুর বিক্রি হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। এবার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের কাজ চলমান রয়েছে।
জানা যায়, দিনাজপুরের লিচুর মধ্যে চায়না থ্রি, বেদানা, বোম্বাই, মাদ্রাজি ও কাঁঠালি উল্লেখযোগ্য। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার এসব প্রজাতির লিচুর বাম্পার ফলনের আশা করছেন চাষিরা।
জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বাগান ও প্রতিটি বসতভিটার লিচুগাছে মুকুল আসতে শুরু করেছে। মুকুলের সঙ্গে মৌমাছির গুঞ্জন আর ঝিঁঝি পোকার শব্দে এলাকা মুখরিত হতে শুরু করেছে। গাছে মুকুল আসার সঙ্গে সঙ্গেই তা টিকিয়ে রাখতে লিচু চাষি ও ব্যবসায়ীরা স্প্রে করছেন। এ ছাড়া মুকুল যাতে ঝরে না পড়ে সে জন্য গাছের গোড়ায় নিয়মিত পানি ও সার দিচ্ছেন চাষিরা। জেলার সদর, বিরল, বোচাগঞ্জ, কাহারোল, চিরিরবন্দর, বীরগঞ্জ, খানসামা উপজেলা লিচু চাষের জন্য বিখ্যাত।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসার অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নুরুজ্জামান বলেন, এরই মধ্যে লিচুগাছে মুকুল আসতে শুরু করেছে। আশা করা হচ্ছে, আগের বছরগুলোর চেয়ে এবার ফলন ভালো হবে। কৃষি কর্মকর্তারা চাষিদের নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে আসছেন। কোন সময় কোন কীটনাশক, বালাইনাশক ব্যবহার করা উচিত সে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
লিচু চাষি জুয়েল ইসলাম জানান, ফুল আসার আগেই গাছের পরিচর্যা করতে হয়। নিয়মিত স্প্রে ও সেচ দেওয়া শুরু হয়েছে। গাছগুলোতে ফুল আসতেই রাজশাহী, রংপুর, চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে লিচু ব্যবসায়ীরা আসতে শুরু করেছেন। তাদের অনেকে লিচুবাগান আগাম কিনে নিচ্ছেন।
তৈয়বা মজুমদার রেড ক্রিসেন্ট ব্লাড ব্যাংকের তত্ত্বাবধায়ক হাবিবুল্লাহ বলেন, ক্যাম্পাসে ৩৩টি বিভিন্ন জাতের লিচুর গাছ রয়েছে। প্রচুর মুকুর এসেছে। এবারের আবহাওয়া লিচুর মুকুলের জন্য উপযোগী। আশা করি ফলন অনেক ভালো হবে।
জানা যায়, দিনাজপুরের লিচু সুস্বাদু ও মিষ্টি হওয়ায় দেশব্যাপী ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। অনেক আগে একবার মধ্যপ্রাচ্যে লিচু রপ্তানি করা হয়েছিল। যদিও পরে আর তা সম্ভব হয়নি। দ্রুত পচনশীল পণ্য হওয়ায় অল্প সময়ে রপ্তানি করা কঠিন। লিচুর মান ও উৎপাদনের পরিমাণসহ নানা দিক বিবেচনা করে লিচু সংরক্ষণাগার, প্রক্রিয়াকরণ এবং লিচু গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। এর ফলে লিচু দিয়ে বিভিন্ন ধরনের খাবার তৈরি করে দেশ-বিদেশে পাঠানো যাবে।
এমদাদুল হক মিলন/এমএন/জিকেএস