Facebook Bio Status

লিচুগাছে মুকুল নেই, ভয়াবহ ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কা


ফাল্গুন মাস এলেই লিচুর মুকুলের মৌ মৌ গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে ঈশ্বরদীর প্রতিটি গ্রামে। থোকায় থোকায় হলুদ রঙের মুকুলে ছেয়ে যায় শত শত লিচু বাগান। কিন্তু এবারের চিত্র পুরোপুরি ভিন্ন। লিচুগাছে মুকুল নেই বললেই চলে।

চিরাচরিত মুকুলের গন্ধও নেই। উল্টো কচিপাতা গজাচ্ছে। মুকুল কম আসায় ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কায় রয়েছেন বাগানমালিক, চাষি ও ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, লিচুর মুকুলের এমন করুণ দশা গত পাঁচ দশকে কেউ দেখেনি।

এবার লিচুর মুকুল কম আসার জন্য আবহাওয়াকে দায়ী করছেন কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষকরা। তবে উপজেলা কৃষি বিভাগ বলছে, এখনো সময় আছে লিচুর মুকুল আসার। এরই মধ্যে কিছু গাছে লিচুর মুকুল আসা শুরু হয়েছে।

ঈশ্বরদী, লিচুগাছে মুকুল নেই, ভয়াবহ ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কা

লিচু ঈশ্বরদী এলাকার প্রধান অর্থকরী ফসল। প্রতিবছর এ উপজেলায় ৪৫০-৫০০ কোটি টাকার লিচু উৎপাদন হয়। লিচু চাষের ওপর নির্ভর করে এ অঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষের জীবন-জীবিকা।

উপজেলার ‘লিচু গ্রাম’ হিসেবে পরিচিত মানিকনগর, মিরকামারী, চরমিরকামারী, কদিমপাড়া ও আওতাপাড়া গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, শত শত বাগানের লিচুগাছে মুকুলের পরিবর্তে নতুন পাতা গজিয়েছে। গাছে নতুন পাতা গজালে মুকুল আসে না। এজন্য লিচু উৎপাদন নিয়ে নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন চাষিরা। দেখা গেলো, ফাল্গুন মাসের ১৭ দিন অতিক্রম হতে চললেও চাষিরা লিচু বাগান পরিচর্যা করছেন না। বাগানে সার, কীটনাশক ও মুকুলের জন্য ব্যবহৃত ওষুধ ব্যবহার করছেন না। অন্যান্য বছর এসময় যেখানে বাগানগুলোতে পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করেন চাষিরা, এবার যেন বাগানগুলোতে সুনসান নীরবতা।

ঈশ্বরদী, লিচুগাছে মুকুল নেই, ভয়াবহ ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কা

লিচু চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাগানে ১০০ লিচু গাছ থাকলে সেখানে মাত্র ১০-২০টি গাছে মুকুল এসেছে। মুকুলের পরিমাণও বেশ কম। অতীতে এত কম মুকুল কখনো দেখা যায়নি। হঠাৎ এ বছর কেন এমন হলো তারা বুঝে উঠতে পারছেন না। তবে তাদের ধারণা, আবহাওয়ার কারণে এবছর মুকুলের বিপর্যয় হতে পারে।

লিচু চাষে জাতীয় পদকপ্রাপ্ত কৃষক উপজেলার মিরকামারী গ্রামের আব্দুল জলিল কিতাব ওরফে লিচু কিতাব জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি ৪৫ বছর ধরে লিচুর আবাদ করছি। এমন বিপর্যয় কখনো হয়নি। শুধু আমার নয়, পুরো দেশে লিচু চাষের এ অবস্থা। এজন্য দায়ী করতে হলে প্রথমে পরিবর্তিত আবহাওয়াকে দায়ী করতে হবে। পরিবর্তিত আবহাওয়ার সঙ্গে সমন্বয় করে আগামীতে লিচুর ভালো আবাদ আর হবে কি না সন্দেহ আছে। এবছর ১০ শতাংশ লিচুর ফলন পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না।’

তিনি আরও বলেন, ‘লিচু আবাদের সঙ্গে লাখ লাখ মানুষ পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। এসব মানুষ এবার সবচেয়ে বেশি বিপদের সম্মুখীন হবেন। আমার মনে হয় সরকারের এ বিষয়ে এখনই পদক্ষেপ নেওয়া উচিত, যাতে পরিবর্তিত আবহাওয়ায় লিচুর ফলন ভালো করা যায়। তা নাহলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে লিচু আবাদ বিলুপ্তির দিকে চলে যাবে।’

ঈশ্বরদী, লিচুগাছে মুকুল নেই, ভয়াবহ ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কা

মানিকনগর গ্রামের বাগানমালিক নায়েব মুন্সি বলেন, ‘এ অঞ্চলে এবার লিচুর মুকুল নেই বললেই চলে। দুই একটা গাছে মুকুল দেখা যাচ্ছে। এছাড়া প্রায় সব গাছেই নতুন পাতা গজিয়েছে।’

একই অবস্থার কথা জানালেন মানিকনগর পূর্বপাড়া গ্রামের লিচুচাষি লিটন বিশ্বাস। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার বয়সে এত কম লিচুর ফলন দেখেনি। এখানকার মানুষজন লিচুর ওপর নির্ভরশীল। আমাদের চলাচল এবার খুবই কষ্ট হয়ে যাবে। ১০ থেকে ২০ শতাংশ গাছে মুকুল এসেছে। বাকি সব গাছে মুকুল নেই।’

ঈশ্বরদী, লিচুগাছে মুকুল নেই, ভয়াবহ ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কা

একই গ্রামের লিচু চাষি মোস্তাফা জামান। তিনি বলেন, ‘বিগত ৫০ বছরে লিচুর এমন বেহাল দশা দেখিনি। এবার আমাদের কী অবস্থা হবে তা বুঝে উঠতে পারছি না।’

এ বিষয়ে উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা এখলাছুর রহমান বলেন, ‘প্রতিবছর সমানভাবে লিচুগাছে মুকুল আসে না। কোনোবার কম আবার কোনোবার বেশি আসে। তবে এবার তুলনামূলকভাবে অন্যান্য বছরের তুলনায় গাছে মুকুল কম এসেছে। এটা জেনেটিক কারণেই হতে পারে। আশা করি আগামী বছর গাছের মুকুলের পরিমাণ সব গাছেই বেশি হবে এবং ভালো হবে।’

ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার জাগো নিউজকে বলেন, ‘লিচু চাষের জন্য ঈশ্বরদী বিখ্যাত। এ উপজেলার ৩১০০ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। এবছরও গাছে মুকুল এসেছে। তবে অন্য বছরের তুলনায় মুকুলের পরিমাণ কম। এর কারণ হিসেবে আমরা অনুমান করছি, বৈরী আবহাওয়ার কারণে এমনটা হয়েছে।

এসআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।



Source link

Back to top button