
পবিত্র রমজান মাস। ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে অন্যতম মাস এটি একটি। রমজান মাস উপলক্ষে এবার আলোকসজ্জায় সেজেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ হল। শিক্ষার্থীদের উদ্যোগেই এই আয়োজন।
তারা বলছেন, গত ১৭ বছরে রমজানকে ঘিরে নানান পরিকল্পনা শিক্ষার্থীরা নিলেও ফ্যাসিবাদীরা ইসলামের যেকোনো আয়োজনকে বিভিন্ন ট্যাগ দিয়ে পণ্ড করেছে। ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মন খুলেই ইসলামের ঐতিহ্য আয়োজন করতে পারছে। ইফতার মাহফিল, আলোকসজ্জার কাজ, নারীদের হলেও হচ্ছে আযান। এ যেনো অন্যরকম পরিবেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে।
সোমবার (৩ মার্চ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন, বিজয় ৭১, জিয়াউর রহমান, রোকেয়া হলসহ আশেপাশের প্রায় ৭টি হল ঘুরে দেখা যায় প্রতিটি হলের গেট এবং গেটের ভেতরে পবিত্র মাহে রমজানকে উপলক্ষে করা হয়েছে আলোকসজ্জা। গেটগুলোতে শুভেচ্ছা বার্তা দেওয়া হয়েছে।
এ আয়োজন নিয়ে কথা বলতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মোসাদ্দেক আলম জাগো নিউজকে বলেন, গত বছর এবং এর আগে গণইফতার কর্মসূচি, সাজসজ্জার মতো আয়োজনকে মৌলবাদি, জঙ্গিসহ, শিবিরের কার্যক্রম বলে অবিহিত করে হামলা চালায় ছাত্রলীগ। গত বছর রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আমাদের ইফতার কর্মসূচি করতে হয়েছিল। আজ আমরা শহীদদের রক্তের বিনিময়ে সুন্দরভাবে রমজানকে উদযাপন করতে পারছি। আমরা আশা করবো সামনের বছরগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসন নিজ উদ্যোগে হলগুলোকে সাজিয়ে দেবে।
ইসলামী স্টাডিজ বিভাগের মাজহারুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, আমরা দেখলাম রমজানকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উৎসবের আমেজ চলছে। যা পূর্বে সম্ভব হতো না। এবছর প্রথম আমরা জসীমউদ্দিন হলকে শিক্ষকদের অনুমতি নিয়ে সাজাই। রমজানের একদিন আগেই আমরা যখন হলগুলোকে সাজিয়ে গ্রুপগুলোতে দেই তখন তা খুব সাড়া ফেলে। এরপর শিক্ষার্থীদের নিজস্ব উদ্যোগে সেজেছে হলগুলো। বাকি যেসব হল রয়েছে তারাও নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে হল সাজাবে।
আইন বিভাগের শিক্ষার্থী পাভেল আহমেদ বলেন, গত বছরও আমরা আয়োজন করেছিলাম। সেসময় সেখানে হামলা করে ছাত্রলীগ। শিবির করে না এমন ছাত্রদের ওপরও হামলা করে তারা। পূর্বে ইসলামের যেকোনো অনুষ্ঠান আয়োজন করলেই তারা তা বিভিন্ন ট্যাগ দিয়ে পণ্ড করেছে।
মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহ-সমন্বয়ক নাফিসা ইসলাম সাকাফি জাগো নিউজকে বলেন, রমজানের জন্য এক বছর অপেক্ষা করতে হয়। এ নিয়ে আমাদের আবেগ রয়েছে। ২৪ এর পূর্বে আমরা রমজানে সুন্দরভাবে আয়োজন করতে পারিনি। ফ্যাসিবাদের দোসর ও শিক্ষকরা আমাদের ইফতার অনুষ্ঠান, কোরআনের অনুষ্ঠান করতে দিতো না। কিন্তু এবছর আমরা শিক্ষার্থীদের নিজস্ব উদ্যোগে টাকা দিয়ে এই আয়োজন করি। আমাদের মেয়েদের সব হলকেই সাজানো হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ২০২২ সালে মেয়েদের জন্য আমরা টিএসসিতে নামাজের ব্যবস্থা করে কয়েক ঘণ্টা রাখতে পারিনি। ছাত্রলীগ এসে সেটা হতে দেয়নি। আবার টিএসসিতে নামাজের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর এতে অনেক মেয়ে উপকৃত হয়েছেন।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রনেতা সাদেক কাইয়ুম জাগো নিউজকে বলেন, বিগত ফ্যাসিবাদী শাসনামলে সবচেয়ে বেশি টার্গেট করেছে ইসলামকে। ইসলামের উৎসবকে তারা আদারিং করার চেষ্টা করে। তারা দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রমজানের আয়োজনকে বাধাগ্রস্ত করেছিল। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইফতার মাহফিল নিষিদ্ধ করেছিল। এর প্রতিবাদে গণইফতারের কর্মসূচি দিলেও তারা নানা হুমকি ধামকি দিচ্ছিল। টিএসসিভিত্তিক দলগুলো ও নানারকম ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল। প্রোডাক্টিভ রমজান শীর্ষক সেমিনারে তারা নির্লজ্জের মতো হামলা করেছিল। যা এদেশের আপামর জনসাধারণকে ব্যথিত করে।
তিনি বলেন, বর্তমানে এই ফ্যাসিবাদের পতনের পর এখন শিক্ষার্থীরা নিজেদের উদ্যোগে রমজানকে উদযাপন করছে। আমরা আশা করি ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিজ উদ্যোগে রমজানকেন্দ্রীক এ ধরনের ব্যবস্থা নেবে।
এএএম/এসএনআর/জিকেএস