Status

রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে দীর্ঘ অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নিয়ে যাওয়ার ষড়যন্ত্র : সালাহ উদ্দিন

বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের গঠিত নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির ‘সেকেন্ড রিপাবলিক এবং গণপরিষদ নির্বাচন’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, গণপরিষদ কেনো হবে? এর মধ্যে তো আরও একটি উদ্দেশ্য আছে? যারা গণপরিষদের বিষয় সামনে আনছে, যারা সেকেন্ড রিপাবলিকের বিষয় সামনে আনছে হয় তারা বুঝে না অথবা বুঝে আমাদের এই রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে আরো দীর্ঘায়িত অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় মধ্যে নিয়ে যাওয়ার ষড়যন্ত্র আছে।
গতকাল শনিবার রাজধানীর কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটের মুক্তিযোদ্ধা মিলনায়তনে ‘ন্যাশনালিস্ট রিসার্চ ফাউন্ডেশন(এনআরএফ)’ এর উদ্যোগে ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার সংগ্রামে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের ত্যাগ ও নেতৃত্ব’ শীর্ষক আলোচনা সভা এবং সৈয়দ আবদাল আহমেদ সম্পাদিত ‘নন্দিত নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন উপলক্ষে অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টির অন্যতম লক্ষ্য সেকেন্ড রিপাবলিক প্রতিষ্ঠা, গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সংবিধান প্রণয়ন। আমি সমালোচনা করতে চাই না। প্রত্যেক রাজনৈতিক দলেরই তার নিজস্ব কর্মপন্থা থাকবে, আদর্শ থাকবে, গঠনতন্ত্র এবং ঘোষনাপত্রে এরকম ঘোষণা থাকে। কেউ সমাজতন্ত্র চায়, কেউ অন্য কিছু চায়, কেউ হয়ত ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়, এরকম অনেক কিছু থাকে বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক ঘোষণাপত্রে। কিন্তু আমি নতুন বন্ধুদের বলতে চাই, সেকেন্ড রিপাবলিক, আমাদের বর্তমান রিপাবলিক কি অসুস্থ হয়ে গেছে? সেকেন্ড রিপাবলিক কখন হয়? রিপাবলিকের লিটারেল মানে কি? রিপাবলিক হচ্ছে যেখানে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা রাষ্ট্র পরিচালনা করবে তাদের একটা নমিন্যাল অথবা ইলেক্টেড হেড দি স্টেট থাকবে। সেটা কি আমাদের নেই?
তিনি বলেন, সব সময় শুনি মাঠে-ঘাটে সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের কথা বলছে। এটা যারা বলছে তাদের একটি মতলব আছে। কারণ ৫ আগস্টের ছাত্র গণঅভ্যুত্থান কি মেম্বার-চেয়ারম্যান ইলেকশনের জন্য হয়েছিলো? দেশের পৌরসভা, উপজেলা চেয়ারম্যানদের নির্বাচনের জন্য কি ৫ আগস্ট হয়েছিলো? তাহলে তারা কেনো শুধু মেম্বার-চেয়ারম্যান ইলেকশনের দাবি তুলেছে। একটা বিষয় আছে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার উত্তরণের পথটা যত দীর্ঘায়িত হওয়া যায় ততই বোধহয় তাদের লাভ। কারো ক্ষমতা দীর্ঘায়িত হবে, আর কারো কারো মনবাসনা পূর্ণ হবে।
নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার জন্য এক মাসের আল্টিমেটাম দিয়ে সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা পরিস্কার শুনে রাখুন, আপনাকে অতি শিগগিরই জাতীয় সংসদের নির্বাচনী রোডম্যাপ প্রদান করতে হবে। যদি আপনি কোনো বাহানায় এই মাসের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রদান না করেন তাহলে সেটা আমরা রাজনৈতিকভাবে গণতান্ত্রিক শক্তিগুলো বসে আমাদেরকে পুনরায় নির্ধারণ করতে হবে আমরা কোন প্রক্রিয়া গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এগুব।
এনসিপির নবযাত্রাকে স্বাগতম জানিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, একটি রাজনৈতিক দলের শুভ সূচনা হয়েছে, আমাদের দলের পক্ষ থেকে রিজভী সাহেব (রুহুল কবির রিজভী আহমেদ) গিয়েছিলেন, আমরা স্বাগতম জানিয়েছি। কারণ বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা তো আমাদেরই দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। গণতন্ত্রের মাঠে শত ফুল ফুটবে সেটাকে আমরা সব সময় স্বাগত জানাব।
গণপরিষদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আপনারা (এনসিপি) নতুন সংবিধানের কথা বলছেন, নতুন সংবিধান যেটা হবে সেটা সংশোধনের মাধ্যমে ব্যাপক সংশোধনী প্রস্তাব আপনারা তো সংস্কার কমিশনে দিয়েছেন, আমরাও দিয়েছি। প্রয়োজনীয় গণতান্ত্রিক সংস্কার বর্তমান জনআকাক্সক্ষা এবং ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের যে প্রত্যাশা ও গণআকাক্সক্ষা নিয়ে আমাদের সন্তানরা রক্ত দিয়েছে, সেই আকাক্সক্ষাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরে তাদের চাহিদাকে, প্রত্যাশাকে তুলে ধরে সেই সংশোধনীগুলো আমরা সাজিয়েছি। নতুন স্বাধীনতা এবং নতুন বাংলাদেশের যে তরুণদের চাহিদা সেটাকে সামনে রেখে গুরুত্ব দিয়ে। সেই সংবিধানের নাম যদি আপনারা নতুন সংবিধান দেন ঠিক আছে। কিন্তু গণপরিষদ কেনো বললেন আমরা বুঝলাম না। এটা অলওয়েজ ফর ইনসেপশন অফ এ এ্যানি ইন্ডিপেন্ডেন্ট কান্ট্রি, যে সময়ে দেশে কোনো সংবিধান রচিত থাকে না, মানে একটা নতুন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার পর গণপরিষদের প্রয়োজন হয়। গণপরিষদের সদস্যরা সংবিধান প্রণয়ন করেন যে সংবিধানের ভিত্তিতে পরে পার্লামেন্ট ইলেকশন হয়। আমাদের এখানে গণপরিষদ নির্বাচনের জন্য আমরা কি নতুনভাবে একটা স্বাধীন রাষ্ট্র পেয়েছি। রাষ্ট্র তো স্বাধীন আছে। আমরা একটি স্বাধীন সার্বভৌম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। আমাদের যেভাবেই হোক একটা সংবিধান আছে যে সংবিধানটাকে এখনো পুরোপুরি ওন করি না বলে ব্যাপক সংস্কারের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। যে সংবিধানোকে শেখ হাসিনা দলীয়করণ করে গণতন্ত্রের বিপক্ষে নিজেদের পক্ষে সাজিয়েছিলেন সেজন্য সেটার সংস্কার দরকার।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গঠিত সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন প্রসঙ্গ টেনে সালাহ উদ্দিন বলেন, আমাদের সংস্কার প্রস্তাবের সাথে আপনাদের সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের বেশি অমিল নেই। কিন্তু যে সমস্ত বিষয় অমিল আছে সেগুলো নিয়ে কথা বলব। কিন্তু তাতে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার জন্য অপেক্ষা করতে হবে সেটা তো মনে হয় না। যদি আপনারা কাউকে সময় দিতে চান, কাউকে অর্গানাইজ হতে দিতে চান বা অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকে সেটা অন্য কথা।
ফ্যাসিবাদ বিরোধী ঐক্যকে টিকিয়ে রাখতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, যারা সেকেন্ড রিপাবলিকের ঘোষণাপত্র তাদের দলীয় ঘোষণাপত্রে রেখেছেন সেটা ওখানে থাক। যারা গণপরিষদের মধ্যে দিয়ে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে চান সেটা আপনারা যখন পারবেন করবেন। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় উত্তরণে আর যাতে কোনো বিলম্ব না হয় সেজন্য আমরা যাতে সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখি এটাই আমাদের আহ্বান। যেকোনো মূল্যে রাজপথে গড়ে উঠা ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যকে আমাদের টিকিয়ে রাখতে হবে। ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যে যদি কোনো রকমের ফাটল সৃষ্টি হয় তাহলে লাভবান হবে পতিত ফ্যাসিবাদ ও তার দোসরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং এনআরএফ এর সদস্য সচিব ফরিদ উদ্দিন আহমেদের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর তাজমেরী এস এ ইসলাম, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, কেন্দ্রীয় নেতা ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন, বিথীকা বিনতে হোসাইন, সাংবাদিক সৈয়দ আবদাল আহমেদ প্রমুখ।###

Source link

Back to top button