
জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি, হুমকি, ভয়ভীতি প্রদর্শন, দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিসহ নীতি ও আদর্শ পরিপন্থী কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ এনে দলের চার নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কারের কথা জানিয়েছে রাঙামাটি জেলা বিএনপি। গত মঙ্গলবার রাতে জেলা বিএনপির সভাপতি দীপন তালুকদার দীপু ও সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশীদ মামুনের সই করা এক চিঠিতে অভিযুক্ত চারজনকে সাময়িক বহিষ্কারের তথ্য জানায় দলটি।
সাময়িক বহিষ্কৃত নেতারা হলেন- রাঙামাটি জেলা বিএনপির সদস্য আনোয়ারুল আজিম (আজম), রাঙামাটি পৌর তাঁতী দলের সভাপতি আলী আজগর বাদশা, পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য অনতোষ দাশ ও জেলা কৃষকদলের ক্ষুদ্র ও সমবায় সম্পাদক সুমন চাকমা ওরফে ডাক্তার।
গত মঙ্গলবার জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সই করা বহিষ্কারাদেশের চিঠিতে জানানো হয়েছে, সাময়িক বহিষ্কৃতদের বিরুদ্ধে দলীয় পদ পরিচয় ব্যবহার করে নিজ স্বার্থে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি, মানুষকে হুমকি, ভয়ভীতি প্রদর্শন, দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিসহ দলের নীতি ও আদর্শ পরিপন্থী অপকর্মে লিপ্ত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগ রয়েছে। এরূপ অপকর্ম থেকে বিরত থাকার জন্য কেন্দ্রীয় ও রাঙামাটি জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে দলের সকল নেতাকর্মীকে বারংবার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু তারা দলের সকল নির্দেশনা অমান্য করে এসকল গঠনতন্ত্র ও শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকা- চালিয়ে দলীয় সুনাম ও শৃঙ্খলা নষ্ট করছেন।
এ সকল কর্মকা- দলীয় গঠনতন্ত্র ও শৃঙ্খলাবিরোধী হওয়ায় দলের গঠনতন্ত্রের ৫ (গ) ধারা মোতাবেক অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষার প্রয়োজনে দলের প্রাথমিক সদস্যপদসহ দলের সকল পর্যায়ের পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান পূর্বক সাময়িক বহিষ্কার করা হলো বলে জানানো হয়েছে ওই চিঠিতে।
অন্যদিকে, পৃথক আরেক চিঠিতে চাঁদাবাজি ও জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টিসহ বিভিন্ন অভিযোগ তদন্তে জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক এস এম শফিউল আজমকে প্রধান করে একটি তদন্ত করে জেলা বিএনপি। তদন্ত কমিটিকে ঘটনার সরেজমিন তদন্ত ও যাচাই-বাছাই করে জেলা বিএনপি বরাবর রিপোর্ট দেওয়ার কথা হলেও কত দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে হবে সে ব্যাপারে জানানো হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২৪ ফেব্রুয়ারি সকাল এগারোটার দিকে রাঙামাটি শহরের রাঙাপানির সুখী নীলগঞ্জ এলাকায় রাঙামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরী অবস্থান করছেন, এমন তথ্যের ভিত্তিতে সেখানে যায় জেলা তাঁতী দলের সাবেক সভাপতি ও জেলা বিএনপির বর্তমান কমিটির সদস্য আনোয়ারুল আজিম আজম। প্রথমে তারা অংসুই প্রু চৌধুরীর ভাই ও বেতবুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অংক্যজ চৌধুরীর বাসায় গিয়ে নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে পরিবারের সদস্যদের কাছে চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরী কোথায় আছে জানতে চায় এবং বাসায় পুলিশের মতো তল্লাশি শুরু করে। এক পর্যায়ে বাসার লোকজন তাদের চেয়ারম্যান অংসু প্রু চৌধুরী বাসা দেখিয়ে দেয়। সেখানে যাওয়ার সময় তারা চেয়ারম্যানের ভাইয়ের কাছ থেকে নগদ ৩ লাখ টাকা, এবং একই বাসায় থাকা আশ্রয় অঙ্গন এনজিও’র কর্মকর্তা উচিং মং মারমা’র কাছে থাকা তার অফিস কর্মচারীদের বেতনের ৪ লাখ ৮৪ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়।
পরে তারা চেয়ারম্যানের বাসায় গিয়ে তার স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং চেয়ারম্যান কোথায় জানতে চায়। তারা নিজেদেরকে ডিবি পুলিশের লোক বলে পরিচয় দেয় বলে অভিযোগ করছেন বাসায় থাকা লোকজন। এক পর্যায়ে চেয়ারম্যানের বউয়ের সাথে বাকবিত-া হয় তাদের। এই সময় তারা চেয়ারম্যানের বউকে তার স্বামীকে ফোন করার জন্য জবরদস্তি করে। কিন্তু তা না করায় তারা ফিরে আসেন। পরে ৪টি মোবাইলের মধ্যে ৩টি মোবাইল ফেরত দেয়া হলেও দামি আরেকটি ফোন এখনো ফেরত দেয়া হয়নি এবং টাকাও ফেরত দেয়া হচ্ছেনা বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগিরা।
বিষয়টি জানাজানি হলে রাঙামাটি জেলা বিএনপি চাঁদাবাজিসহ সামাজিক নানা অপকর্মের অভিযোগ এনে বিএনপি ও তিন সহযোগি সংগঠনের চার নেতাকে বহিষ্কার করেছে। একইসাথে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগসমূহের তদন্তে একটি কমিটিও করেছে দলটি। গত মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে দলটি।
তবে অভিযুক্তদের প্রধান আনোয়ারুল আজিম আজম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমরা মোটেও ডিবি পরিচয়ে সেখানে যাই নাই। তিনি বলেন, আমরা গোপনসূত্রে খবর পেয়েছিলাম যে, জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরী সুখী নীলগঞ্জ এলাকায় নিজের ভাড়া বাড়িতে পলাতক আছেন। সেটা জেনে আমরা সেখানে গেছি, যেনো তাকে পুলিশে ধরিয়ে দিতে পারি। যাওয়ার সময় আমি বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শাকিল ভাইকেও বলে গেছি। সেখানে আমরা গিয়ে প্রথমে চেয়ারম্যানের ভাইয়ের বাসা ও পরে চেয়ারম্যানের বাসায় গিয়েছি সত্য কিন্তু মোবাইল বা টাকা নেয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।
বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, ঘটনার পরপরই বেতবুনিয়ার চেয়ারম্যান অংক্যজ চৌধুরী ও উন্নয়কর্মী উচিং মং রাঙামাটি জেলা বিএনপির নেতাদের কাছে প্রমাণসহ অভিযোগ করেছেন। যার প্রেক্ষিতে নিজেদের জনসভার ব্যস্ততা শেষ করেই দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে বিএনপি।