রমজান মাস : ইবাদতের বসন্তকাল-১

রমজান মাস। এখন জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়েছে। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করা হয়েছে। শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়েছে। আল্লাহর পক্ষ থেকে ঘোষক ঘোষণা করছেÑ ‘ওহে কল্যাণ-অন্বেষী! নেকীর পথে তুমি আরো অগ্রসর হও। ওহে অকল্যাণের পথিক! তুমি নিবৃত্ত হও, নিয়ন্ত্রিত হও।’ (জামে তিরমিযী-৬৮২) চারিদিকে কেবল ক্ষমা ও মাগফিরাতের ঘোষণা- রোযা রাখো, পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেব। তারাবী-তাহাজ্জুদ আদায় করো, ক্ষমা লাভে ধন্য হও। লাইলাতুল কদরে ইবাদত করো, মাগফিরাতের সাগরে অবগাহন করো। ইফতারের সময় ক্ষমা করা হয়, রাতে ক্ষমা করা হয়, দিনে ক্ষমা করা হয়। চারিদিকে ক্ষমা ক্ষমা রব। এমন সুযোগ যেন আমার হাতছাড়া না হয়। এজন্য সতর্ক হবো রমজানের শুরুতেই।
রমজান শেষে আফসোস নয়; সচেতন হই শুরুতেই। রমজানের একেবারে শেষ প্রহরে আমরা আফসোস করে বলিÑ হায়, রমজান চলে গেল, কিছুই করতে পারলাম না; জানি না মাগফিরাতের নিআমত লাভ করতে পারলাম কি না! সুতরাং শুরুতেই সচেতন হই, সাধ্যমতো কাজে লাগাই রমজানকে। (যদিও আল্লাহর নেক বান্দারা সাধ্যমতো আমল করার পরও আফসোস করেন।) স্মরণ রাখি নবীজীর এ হাদিস। জাবের (রা.) থেকে বর্ণিতÑ ‘একবার নবী কারীম (সা.) মিম্বারে আরোহণ করলেন। প্রথম ধাপে উঠে বললেন, আমীন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপে উঠেও বললেন, আমীন। সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন, আল্লাহর রাসূল! আপনাকে (এভাবে) তিনবার আমীন বলতে শুনলাম?’
তখন নবীজী বললেন, আমি যখন মিম্বারের প্রথম সিঁড়িতে আরোহণ করলাম তখন জিবরীল আগমন করলেন এবং বললেন, ওই ব্যক্তি হতভাগা, যে রমজান মাস পেল, আর রমজান গত হয়ে গেল, কিন্তু তার গুনাহ মাফ হলো না। আমি বললাম, আমীন।… (আল আদাবুল মুফরাদ, বুখারী-৬৪৪)
নবীজী তো কখনো আমাদের ধ্বংস চাইবেন না; তিনি চেয়েছেন- এমন অবারিত সুযোগকে যেন আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করি। তাই আসুন, রমজানের শুরুতেই পরিকল্পনা গ্রহণ করি। রমজানের গুরুত্ব অনুধাবন করে একে যথাযথ কাজে লাগাই।
রোজার মাধ্যমে পূর্বের সকল সগীরা গুনাহ মাফ হয়ে যায়। রমজান মাসের রোযা এতটা মহিমান্বিত একটি আমল, যার মাধ্যমে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বান্দার অতীতের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেনÑ ‘যে ব্যক্তি ঈমান ও ইহতিসাব তথা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও সওয়াবের প্রত্যাশা রেখে রমজান মাসে রোযা রাখবে, তার পূর্বের গুনাহগুলো মাফ করে দেওয়া হবে।’ (সহিহ বুখারী-৩৮)
আল্লাহ তাআলার নিকট বান্দার রোযা অত্যন্ত প্রিয়। এর প্রতিদান আল্লাহ নিজে দেবেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, মানুষের প্রত্যেক আমলের প্রতিদান বৃদ্ধি করা হয়। একটি নেকীর সওয়াব দশ গুণ থেকে সাতশ’ গুণ পর্যন্ত। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন, কিন্তু রোযা আলাদা; কেননা তা একমাত্র আমার জন্য এবং আমি নিজেই এর বিনিময় প্রদান করব। বান্দা একমাত্র আমার জন্য নিজের প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং পানাহার থেকে বিরত থাকে। (সহিহ মুসলিম-১১৫১)
আমার রোজা যেন আমার জন্য ঢাল হয়। হাদিস শরীফে রোজাকে ঢাল বলা হয়েছে। জাহান্নাম থেকে ঢাল। তবে আমার দায়িত্ব এ ঢালকে অক্ষুণœ রাখা; বিদীর্ণ হওয়া থেকে রক্ষা করা। ইরশাদ হয়েছেÑ ‘রোজা ঢালস্বরূপ, যতক্ষণ না তা বিদীর্ণ করে ফেলা হয়। (মুসনাদে আহমাদ-১৬৯০) আরেক বর্ণনায় এসেছে, নবীজীকে জিজ্ঞেস করা হলো, কীভাবে তা বিদীর্ণ হয়? নবীজী বললেন, মিথ্যা অথবা গীবতের মাধ্যমে। (আল মুজামুল আওসাত, তবারানী-৪৫৩৬)
হাদিস শরীফে আরো এসেছে, যে মিথ্যা কথা ও কাজ এবং মূর্খসুলভ আচরণ ছাড়ল না, তার পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই। (সহিহ বুখারী-৬০৫৭)