
মাদার অফ মাফিয়া খ্যাত ফ্যাসিস্ট হাসিনা ভারতে পালিয়েছে সাত মাস আগে। তার অলিগার্ক চোর ছেচ্চর, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, দুর্নীতিবাজ, লুটেরারা আত্মগোপনে গিয়ে অতিষ্ঠ করে তুলেছে সারাদেশের মানুষকে। দিল্লির সেবাদাসী হাসিনা পালানোয় মানুষ খুশি। কিন্তু তার দোসরদের অপতৎপরতায় প্রাত্যহিক যাপিত জীবনে আসেনি স্বস্তি।
মানুষ কোথাও স্বস্তি পাচ্ছে না। সম্প্রতি দেশব্যাপী বেড়েছে অপরাধপ্রবণতা। তবে সেই তুলনায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা। এতে করে তাদের ওপর আস্থা হারাচ্ছে মানুষ। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রায়ই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন জেলা-উপজেলার প্রান্তিক পর্যায়ে ডাকাত আতঙ্ক বিরাজ করছে।
কিছুদিন ধরে দিনে-রাতে ডাকাতি যেন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। হাট-বাজার-পথঘাট-যানবাহন কোথাও নিরাপত্তা নেই। সর্বত্রই ছিনতাই-ডাকাতির ভীতি আতঙ্ক। শত শত মানুষের সামনেই জিম্মিদশা সৃষ্টি করে ডাকাতরা সব কিছু লুটে নিয়ে যাচ্ছে। রাজধানী ঢাকায় ছিনতাই, চাঁদাবাজি কার্যত ওপেন সিক্রেট।
অন্যদিকে, দেশজুড়ে যেসব অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে বাস্তবের চেয়ে আরো বহুগুণ বাড়িয়ে প্রচার করছে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও তার দোসররা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেদারসে চালানো হচ্ছে রাষ্ট্রবিরোধী প্রোপাগান্ডা। সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে এসব প্রোপাগান্ডা মোকাবেলায় দেখা যাচ্ছে না কার্যকর কোন পদক্ষেপ। ফলে সংশ্লিষ্ট খাতে বিপুল পরিমাণ বরাদ্দ কোথায় ব্যয় হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতা নিয়েও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে জনমনে।
দেশের চলমান পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে দেশব্যাপী সড়কের মোড়ে মোড়ে তল্লাশি করছে যৌথবাহিনী। রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টেও সেনাবাহিনী ও পুলিশকে যৌথ তল্লাশি অভিযান চালাতে দেখা গেছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, তারা সব ঠিক রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন। যৌথ বাহিনীর চেকপোস্ট বসানোসহ চলছে একাধিক বিশেষ অভিযান। প্রায় প্রতিদিনই আসামিরা ধরা পড়ছে। কিন্তু এরপরেও কেন প্রত্যাশিত ফল আনছে না তা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছেই।
এদিকে, যৌথ বাহিনী তৎপর হওয়ায় অনেকটা স্বস্তি ফিরলেও প্রত্যাশিত ফল না আসায় আলোচনা ও সমালোচনা চলছে নেট দুনিয়ায়। অনেকে এ অভিযানকে সাধুবাদ জানিয়েছেন এবং তল্লাশি কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। আবার চলমান তল্লাশি কার্যক্রম থেকে বড় ধরনের অস্ত্র উদ্ধারের মতো কাঙ্ক্ষিত ফল না আসায় অনেকেই ক্ষোভ জানিয়ে সমালোচনা করেছেন।
সেনা সদস্যদের যানবাহন আটকিয়ে তল্লাশি চালাতে গিয়ে প্রায় অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটনা ঘটতে দেখা যাচ্ছে। অনেক জায়গায় সাধারণ নাগরিকদের সাথে অযথা তর্কে জড়াতেও দেখা গেছে ঘোর সঙ্কটে মানুষের আস্থার প্রতীক সেনাবাহিনীর সদস্যদের। এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন সচেতন মহল।
যৌথবাহিনীর অব্যাহত এসব মাদকবিরোধী অভিযানের অনেকেই প্রশংসা করলেও ছোটখাটো অপরাধ দমনে গুরুত্ব দেওয়ায় দাগী অপরাধীরা ছাড় পেয়ে যাচ্ছে মন্তব্য করে অনেকে চরম হতাশা প্রকাশ করেছেন। অভ্যুত্থানের সময় দেশের থানাগুলো থেকে লুট হওয়া অস্ত্র এখনও উদ্ধার না হওয়ায় উদ্বেগ জানিয়েছেন অনেকে। আগের মত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কেন শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারছে না তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। অথচ ৫ আগস্টের পরপর যখন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় ছিল তখন সারাদেশে সচেতন জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে আইনশৃঙ্খলা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকতে দেখা গেছে।
সম্প্রতি মধ্যরাতে এক অভিনেত্রীর গাড়ি তল্লাশি করতে গিয়ে তার সাথে তর্কে জড়াতে দেখা যায় সেনাবাহিনীর সদস্যদের। যদিও সেই তল্লাশিতে কিছুই উদ্ধার করতে দেখা যায়নি। তল্লাশির মুখে রেগে যেতে দেখা যায় সেই অভিনেত্রীকে। যা ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। অনেকেই তল্লাশিতে যৌথবাহিনীকে যথাযথভাবে সহযোগিতা না করাই অভিনেত্রীর সমালোচনা করেছেন। আবার কেউ কেউ ফলহীন এমন তল্লাশির সমালোচনা করেছেন।
কয়েক মাস আগেও ‘মধ্যরাতে যে কারণে সেনাবাহিনীর হাতে আটক সুন্দরী তরুণী!’- এমন চটকদার শিরোনামে একটি তল্লাশির লাইভ দেখানো হয়। ফলে দ্রুতই তা ভাইরাল হয়। অভিযুক্ত একজন নারীকে নিয়ে কথিত ওই সাংবাদিকের অপেশাদ্বার আচরণ নিয়েও সমালোচনায় মাতেন নেটিজেনরা। এতে ওই নারী অপরাধ প্রমাণ হওয়ার আগেই সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্য হয়েছেন বলে মনে করেন তারা। এছাড়াও আরো কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা সমালোচনার জন্ম দেয় তল্লাশি কার্যক্রম নিয়ে।
পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, ছোটখাটো তল্লাশি কার্যক্রম পরিচালনা ও কাগজপত্র যাচাইয়ের জন্য উপযুক্ত পুলিশ বাহিনী। কেননা তাদেরকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সেনা সদস্যদের দিয়ে ছোটখাটো এসব কাজ না করিয়ে পুলিশকে দিয়ে করালে তা আরও যথাযথ হবে। কাগজপত্র সঠিক পেলে অথবা বেআইনি কিছু না পেলে হয়রানি না করে সাধারণ জনগণের গাড়ি ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন নেটিজেনরা।
অন্যদিকে, রাজধানীর চুরি-ছিনতাই এর মত অপরাধের চিহ্নিত হটস্পট গুলোতে তেমন কোন অভিযান পরিচালিত না হওয়ায় অপরাধ প্রত্যাশিতভাবে নিয়ন্ত্রণে আসছে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে তল্লাশি কার্যক্রম চালানো হচ্ছে সাধারণ পাবলিক স্পটগুলোতে। যে কারণে অবৈধ অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য উদ্ধার ও অপরাধীরা উল্লেখযোগ্য হবে গ্রেফতার হচ্ছে না বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
এরআগে অন্যান্য যেকোনো সময় সারা দেশে মোতায়েনকালে এবং অপারেশন ক্লিন হাট অভিযানে সেনাবাহিনী আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সফল হয়েছিল। সেই সফলতা দৃশ্যত এবার দেখা যাচ্ছে না। দেশ প্রেমিক সেনাবাহিনীকে আবারো সেই সফল ভূমিকায় দেখতে চান জনতা।
ফেসবুকে আব্দুল্লাহ মজুমদার লিখেছেন, ৫ই আগস্ট পরবর্তী থানার লুণ্ঠনকৃত অস্ত্রগুলো এখনো সিকি ভাগ উদ্ধার হয়নি অথচ ছোটখাটো অভিযানে দেশ প্রেমিক সেনাবাহিনীর মত সুসংগঠিত শক্তিশালী বৃহৎ প্রশিক্ষিত বাহিনীকে লাগিয়ে একটি ব্যাপক রাষ্ট্রীয় অপচয় করা হচ্ছে।এছাড়াও ব্যাংকলুটেরা এবং খাদ্যপণ্য সিন্ডিকেট মাফিয়া ও অনেক কুশিলবেরা এখনো প্রকাশ্য দিবালোকে ঘুরে বেড়ালেও তাদের ব্যাপারে তেমন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।দেশ প্রেমিক সেনাবাহিনী যদি এক্ষেত্রে মনোনিবেশ করে খুব দ্রুতই এ ধরনের মাফিয়ারা আইনের আওতায় চলে আসবে। এতে সেনাবাহিনীর মর্যাদা ব্যাপক বৃদ্ধি পাবে এবং জনগণের প্রত্যক্ষ উপকার হবে।
ক্ষোভ প্রকাশ করে মোঃ ইব্রাহিম লিখেছেন,
এটা বাড়াবাড়ি হচ্ছে।এতে সাধারণ মানুষের কোন উপকার হবে না। পারলে ফ্যাসিবাদের দোসর, জুলাই-আগস্টের খুনি ও ব্যাংক লুটেরাদের গ্রেফতার করে দেখান।গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে খুনি হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলেও আত্মগোপনে চলে যায় ছাত্র-জনতার চিহ্নিত খুনি ও পতিত স্বৈরাচারের দোসররা। এখন পর্যন্ত তাদের গ্রেফতারে তেমন কোন সফলতা নেই।
ইমরান হোসেন লিখেছেন, এগুলো করে কতটুকু সুফল আসবে? ছাত্র-জনতার গণহত্যাকারীদের এখনও গ্রেফতার করা হয়নি, দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারকারী ও ব্যাংকলুটেরা এখনও বহাল তবিয়তে আছে সেখানে নিছক এসব অভিযানে সেনাবাহিনীর মতো সুসংগঠিত একটি বাহিনী নিয়োজিত রাখা হয়েছে তা বুঝে আসে না!!
আবুল কালাম আজাদ লিখেছেন, এটা বাড়াবাড়ি, ছিনতাইকারী ধরার নাম নেই। সাধারণ মানুষকে হয়রানি এরা ক্ষমতা দেখাচ্ছে। এখানে যতটুকু সময় অপচয় করছে ততক্ষণে দুই চারটা ছিনতাইকারী ধরলে বেশি ভালো হতো।
আশরার আহমেদ লিখেছেন, রাজধানীর চিহ্নিত ক্রাইম হট স্পটগুলোতে নিয়মিত ওৎ পাতা অভিযান ইত্যাদি পরিচালনা না করে সন্ত্রাসী যদি গাড়ির ভেতরে খোঁজে তাহলে মানুষের বিরক্তি উৎপাদন ছাড়া আর কি হবে।
গোলাম কিবরিয়া লিখেছেন, বড় বড় জায়গায় হাত দেন। যারা অবৈধ সম্পদ অর্জন করে বাগানবাড়ি বানিয়েছে সেই সব জব্দ করে এবং নিলাম করে দেশের উন্নয়নে কাজে লাগান।
অন্যদিকে, বাবুল সরকার সেনাবাহিনীর প্রশংসায় লিখেছেন, ধন্যবাদ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এরা দেশ-জাতি, সমাজের বিষাক্ত পয়জন এদের মত পয়জন সমাজ থেকে মুছে দিতে না পারলে এদেশে সভ্য সমাজ গড়া অসম্ভব। ঝালটা একটু বেশি একে আইনের আওতায় এনে কঠিন শাস্তি হওয়া উচিত।
মোঃ শাহিন লিখেছেন, বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী সত্যিই মহান কাজ করে চলেছেন। পুলিশের পক্ষে যা সম্ভব ছিল না তারা তা করে দেখাচ্ছেন। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সাহসিকতার সাথে নিরলসভাবে কাজ করছেন। সেনাবাহিনী ছিল বলেই আজ আমরা শান্তিতে ঘুমোতে পারছি। ধন্যবাদ প্রাণের বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
সামিয়া পারভীন লিখেছেন, মাঝরাতে এক অভিনেত্রী/মডেলকে বহনকারী গাড়ি তল্লাশির সময় তার আচরণ সন্তোষ জনক ছিল না!! আপনারা যদি যৌথ বাহিনীকে সহায়তা না করেন তাহলে কিভাবে দেশের অপরাধ কমবে?