Facebook Bio Status

যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশেও অদম্য বাংলার নারী


পুরুষের সঙ্গে সমানতালে এগিয়ে যাচ্ছেন দেশের নারী পুলিশ সদস্যরা। এরই মধ্যে আসীন হয়েছেন বাহিনীটির বিভিন্ন উচ্চপদে। নেতৃত্ব দিচ্ছেন বেশ কয়েকটি ইউনিটের। বোমা কিংবা অস্ত্রের ঝনঝনানিতেও তারা অকুতোভয়। কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোতে অংশ নিচ্ছেন জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে। সেখানেও অদম্য তারা।

বাংলাদেশ পুলিশে নারীর অগ্রযাত্রা শুরু হয় ১৯৭৪ সালে মাত্র ১৪ জন সদস্য নিয়ে। বর্তমানে পুলিশের সব ইউনিট মিলে কাজ করছেন ১৭ হাজারেরও বেশি নারী। চ্যালেঞ্জ নিয়ে তারা সমানতালে এগিয়ে যাচ্ছেন পুরুষ সহকর্মীদের সঙ্গে। থানা থেকে ট্রাফিক, কন্ট্রোলরুম থেকে মাঠের অপরাধ দমন ও নিরাপত্তা- সবখানেই তাদের পদচারণা। পিছিয়ে নেই জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনেও।

বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্ক (বিপিডব্লিউএন) সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন সম্পন্ন করেছেন এখন পর্যন্ত এক হাজার ৯২৫ নারী পুলিশ সদস্য। বর্তমানে ৭৩ জন জাতিসংঘ মিশনে বিভিন্ন দেশে দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশের নারীরা কাজ করছেন দারফুর, মালি, ডিআর কঙ্গো, দক্ষিণ সুদান ও জাতিসংঘ সদর দপ্তরসহ জাতিসংঘের তিনটি শান্তিরক্ষা অপারেশনে।

যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশেও অদম্য বাংলার নারী

এছাড়া লিঙ্গ সমস্যা, নারী ও শিশু বিষয়ক ক্ষেত্রে জাতিসংঘের নির্দেশনা বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ পুলিশ কঙ্গোতে একজন নারী কর্মকর্তাকে পাঠিয়েছে।

দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনেও উজ্জ্বল ভূমিকায় নারী পুলিশ সদস্যরা। পুরুষ সদস্যদের মতোই তারা সমানতালে, সমান চ্যালেঞ্জে এগিয়ে যাচ্ছেন। পুলিশে নারীরা পেয়েছেন অভাবনীয় সাফল্য। মিলেছে স্বীকৃতিও।– পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর

বিপিডব্লিউএন জানায়, যুদ্ধ থেকে শান্তিতে রূপান্তরে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নারী পুলিশ কর্মকর্তাদের অবদান অনস্বীকার্য। বাংলাদেশের নারী শান্তিরক্ষীরা লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা, সংঘাত ও সংঘর্ষ কমাতে, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের জন্য নিরাপত্তা, স্থানীয় এলাকায় নারী পুলিশ কর্মকর্তাদের পরামর্শ দিয়ে চলেছে। এভাবে সংশ্লিষ্ট দেশে নারীর ক্ষমতায়ন ও সামাজিক উন্নয়নে নিজেদের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছেন নারীরা।

দেশের নারী পুলিশ সদস্যরা মিশনের কমিউনিটিতে রোল মডেল হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ফলে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ নারী পুলিশ কর্মকর্তার চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।

যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশেও অদম্য বাংলার নারী

বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা ও মানবতার কল্যাণের অঙ্গীকারে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ পুলিশের পদযাত্রা সূচিত হয় ১৯৮৯ সালে। নারী পুলিশ সদস্যরা এ কার্যক্রমে যোগ দেন ২০০০ সালে। সেই থেকে বাংলাদেশ পুলিশ জাতিসংঘের নীল পতাকার পাশে বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়েছে এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকা আর আফ্রিকা মহাদেশের দুর্গম বিভিন্ন প্রান্তরে।

বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারির দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতেও দৃঢ় মনোবলের সঙ্গে বাংলাদেশ পুলিশের শান্তিরক্ষীরা ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, মালি, দারফুর, সুদান, দক্ষিণ সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। বিশ্ব শান্তিরক্ষার মহান দায়িত্ব পালনকালে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ পুলিশের ২৩ জন সদস্য আত্মোৎসর্গ করেছেন।

যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশেও অদম্য বাংলার নারী

বাংলাদেশ পুলিশ হাইতির ভূমিকম্প বিধ্বস্ত অসহায় মানুষের পাশে থেকে মানবিক সহায়তা দিয়েছে, আবার আফ্রিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে পুলিশি সেবা প্রদান, পুলিশের প্রতিষ্ঠানিক কাঠামো পুনর্বিন্যাস ও পুনর্গঠন এবং সক্ষমতা বাড়াতে অনন্য সাধারণ ভূমিকা রেখেছে, যা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে।

এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর জাগো নিউজকে বলেন, ‘পুলিশের সব ইউনিটে কাজ করছেন ১৭ হাজার ২৮০ জন নারী পুলিশ সদস্য। চ্যালেঞ্জ নিয়ে তারা এগিয়ে যাচ্ছেন পুরুষ সদস্যদের সঙ্গে সমানতালে। যোগ্যতা ও সুযোগ অনুযায়ী বড়, গুরুত্বপূর্ণ পদেও দায়িত্ব সামলাচ্ছেন তারা। শুধু তাই নয়, দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনেও উজ্জ্বল ভূমিকায় নারী পুলিশ সদস্যরা। পুরুষ সদস্যদের মতোই তারা সমানতালে, সমান চ্যালেঞ্জে এগিয়ে যাচ্ছেন। পুলিশে নারীরা পেয়েছেন অভাবনীয় সাফল্য। মিলেছে স্বীকৃতিও।’

যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশেও অদম্য বাংলার নারী

তিনি বলেন, ‘১৯৮৯ সাল থেকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ করছে বাংলাদেশ পুলিশ। বিগত তিন দশকে শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ পুলিশের পেশাদারত্ব ও কর্মদক্ষতা আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসা অর্জন করেছে। ২০০৫ সাল থেকে শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ পুলিশের ফর্মড পুলিশ ইউনিট পাঠানো হয়। এরপর ২০১১ সাল থেকে কঙ্গোতে নারী ফর্মড পুলিশ ইউনিট পাঠানো হচ্ছে। ২০১৯ সাল থেকে বাংলাদেশ পুলিশের কর্মকর্তারা মিশনটিতে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন।’

অনেক প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করেই পুলিশের নারী সদস্যরা আজকের এই অবস্থানে। ১৯৭৪ সালে নিয়োগ পাওয়ার পর প্রায় দুই বছর পর্যন্ত পুলিশের নারী সদস্যদের জন্য কোনো নির্ধারিত ইউনিফর্মই ছিল না। তারা ইউনিফর্ম পায় ১৯৭৬ সালে। ১৯৮৬ সালে প্রথম সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে ফাতেমা বেগমের যোগদানের মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশে উচ্চপর্যায়ে (বিসিএস) শুরু হয় নারীদের নিয়োগ।

যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশেও অদম্য বাংলার নারী

এখন পুলিশ সদর দপ্তর থেকে শুরু করে পুলিশের সব ইউনিটেই নারী সদস্যরা কাজ করছেন। কয়েকটি ইউনিটের নেতৃত্বেও আছেন নারীরা। সারাদেশের আটটি ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার এবং ডিএমপির উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন পরিচালনা করছেন নারী সদস্যরাই। সার্কেল এএসপি ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন কয়েকটি জেলায়।

বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্কের তথ্যমতে, বর্তমানে বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে কর্মরত মোট নারীর সংখ্যা ১৭ হাজার ২৮০। এর মধ্যে বিসিএসে ৩০৮ জন এবং এর বাইরে ১৬ হাজার ৯৭১ জন নারী রয়েছেন।

যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশেও অদম্য বাংলার নারী

বর্তমানে নারী পুলিশের বিভাজন

ডিআইজি ৫ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি ৩৮ জন, পুলিশ সুপার ৮০ জন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ১২১ জন, এএসপি ৬৫ জন, ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) ১৩০ জন, সাব-ইন্সপেক্টর ৯৭৭ জন, সার্জেন্ট ৯৩ জন, এএসআই ১ হাজার ১৭৮ জন, এটিএসআই ১১ জন, এএসআই ১১৬ জন, নায়েক ৪২৯ জন ও কনস্টেবল ১৪ হাজার ৩৭ জন।

টিটি/এএসএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।



Source link

Back to top button