
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের বাজে পারফরম্যান্সের পর তাদের অবসর নিয়ে অনেক কথাই হয়েছে। জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু, খালেদ মাহমুদ সুজন ও হাবিবুল বাশাররা বলেছেন, অবসরের সিদ্ধান্ত একান্তই একজন ক্রিকেটারের। তিনিই ভালো জানেন, বোঝেন ও বলতে পারবেন, কখন খেলা ছাড়তে হবে।
মোহাম্মদ আশরাফুলও তিন পূর্বসূরীর সঙ্গে সুরে সুর মিলিয়ে কথা বলেছিলেন। তবে একটি ‘লেজ’ জুড়ে দিয়েছিলেন দেশের ক্রিকেটের এ অসামান্য ব্যাটিং প্রতিভা।
মুশফিককে ওয়ানডে ছেড়ে দিয়ে টেস্টে মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন আশরাফুল। তার আশা, এতে মুশফিকের নিজের এবং বাংলাদেশ টেস্ট দলের কল্যাণ ও মঙ্গল হবে।
আশরাফুলের প্রত্যাশা, মুশফিক প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে ১০০তম টেস্ট খেলবেন মুশফিক। তাকে চাপমুক্ত পরিবেশে দেশের হয়ে প্রথম ১০০ টেস্ট খেলার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য বিসিবির প্রতি উদাত্ত আহ্বান আশরাফুলের।
সাবেক এ ক্রিকেটার বলেন, ‘আমি আশা করবো যে, এখন আর মুশফিককে কোনোরকম চাপ না দিয়ে ১০০ টেস্ট খেলার সুযোগ করে দেওয়া উচিত।’
বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশের কোনো ক্রিকেটারের শততম টেস্ট খেলার সৌভাগ্য হয়নি। কারো সেই কৃতিত্ব নেইও। মুশফিকের সামনে আছে সেই হাতছানি। তার টেস্ট সংখ্যা ৯৪টি। মানে, ১০০ টেস্টের মাইলফলক ছুঁতে হতে মুশফিকের দরকার আর মাত্র ৬টি টেস্ট।
আশরাফুল বলেন, ‘আমার মনে হয়, এ বছরই হয়তো মুশফিকের শততম টেস্ট পূর্ণ হয়ে যেতে পারে। আমি আশা করবো, মুশফিককে সে সুযোগটা দিবে বিসিবি। যদি বিসিবি মুশফিককে চাপমুক্ত হয়ে টেস্ট খেলতে দেয়, তাহলে মুশফিকই হবে ১০০ টেস্ট খেলা প্রথম বাংলাদেশি।’
বলে রাখা ভালো, ২০২৫ সালে বাংলাদেশের পূর্ব নির্ধারিত সূচীতে ৬টি টেস্ট খেলার কথা। এর মধ্যে আগামী এপ্রিল মাসে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঘরের মাঠে ২টি, জুন-জুলাইতে শ্রীলঙ্কায় ২টি। তারপর এইচটিপিতে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষেও ২টি টেস্ট খেলার কথা বলা আছে। সেটা এখনও পুরোপুরি নিশ্চিত হয়নি।
আশরাফুলের অনুভব, মুশফিক একজন অনুকরণীয় ক্রিকেটার। তার কথা, ‘ক্রিকেটের প্রতি মুশফিকের যে ভালোবাসা, অনুরাগ, ত্যাগ, অনুপ্রেরণা ও ভালো করার দৃঢ় সংকল্প- সেটা আসলে অনুকরণীয়।’
সাদা বল ছেড়ে মুশফিকের লাল বলে খেলাকে স্বাগত জানিয়ে আশরাফুল বলেন, ‘সাদা বল ছেড়ে লাল বলে মনোনিবেশ করতে পারবে, সেটা টিম বাংলাদেশের টেস্ট টিমের জন্য ভালো।’
মুশফিককে তার নিজের জীবনে দেখা একজন ‘সবচেয়ে সুশৃঙ্খল’ ব্যক্তিত্ব বলে মনে হয়েছে। আশরাফুলের ব্যাখ্যা, ‘আমি তাকে অভিষেক থেকে দেখেছি।’
‘একদম ২০০৫ ইংল্যান্ড সফর থেকে দেখেছি মুশফিককে। ওর মতো সুশৃঙ্খল মানুষ পাওয়া দায়। আমার দেখা ক্রিকেটারই শুধু নয়, মানুষ মুশফিকও দারুণ সুশৃঙ্খল।’
আশরাফুল আরও বলেন, ‘তার মতো ডিসিপ্লিন্ড মানুষ দেখেছি খুব কমই আছে। একজন মানুষ প্রতিদিন রাত ১০টার সময় ঘুমিয়ে যায় । এ যুগে এমন মানুষ পাওয়া খুব কঠিন। আমার মনে হয় না, ক্রিকেটাঙ্গনে এত শৃঙ্খলা মেনে চলা ক্রিকেটার আরও আছে।’
মুশফিককে সবচেয়ে ‘ডিসিনপ্লিন্ড’ মানুষ আখ্যা দেওয়ার পাশাপাশি আশরাফুল মনে করেন, বাংলাদেশের জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের মধ্যে অন্যতম পরিশ্রমী ক্রিকেটারও মুশফিক।
আশরাফুল বলেন, ‘অনেক খেলোয়াড়ই আসছে, দেখেছি, এক সঙ্গে খেলেছি। কিন্তু মুশফিকের মতো এত কঠোর পরিশ্রমী ক্রিকেটারও খুব কম দেখেছি। আমাদের আগের প্রজন্মের মধ্যে পাইলট (খালেদ মাসুদ) ভাই আর রফিক ভাই (মোহাম্মদ রফিক) ছিলেন পরিশ্রমী। আর এখনকার দিনে মুশফিকও অনেক পরিশ্রমী।’
ব্যাটসম্যান মুশফিকের মূল্যায়ন করতে গিয়ে আশরাফুলের ব্যাখ্যা, ‘অসাধারণ টেকনিক। টেকনিক্যালি অনেক ভালো। আমার দেখা বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ব্যাটার মুশফিক। সব ফরম্যাটে বাংলাদেশের সেরাদের অন্যতম সেরা ব্যাটার মুশফিক।’
এআরবি/এমএইচ/