Status

মুবারক হো মাহে রমজান

মানব দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মধ্যে যে প্রধান পাঁচটি অঙ্গের উপর সব কর্মকা- নির্ভরশীল সেগুলো হলোÑ চোখ, জিহ্বা, পেট, কান ও মন বা অন্তঃকরণ। এই পাঁচটি অঙ্গের হিফাজত ও সংশোধন করা একান্ত আবশ্যক। এই আবশ্যকীয় কাজটি সুসম্পন্ন করার ক্ষেত্রে মাহে রমজানের সিয়াম সাধনার জুড়ি নেই। যথাযথভাবে সিয়াম পালনকারী নারী ও পুরুষের উল্লিখিত পাঁচটি অঙ্গ সিয়াম সাধনার নূরের আলোকে এতখানি স্বচ্ছ ও পবিত্র হয়ে উঠে যে, এগুলোর দ্বারা গর্হিত ও অপরাধমূলক কোনো কাজ সংঘটিত হওয়ার সুযোগ থাকে না।

সে পাঁচটি অঙ্গের মধ্যে চোখই অগ্রগণ্য। কেননা, চোখ দেহের সর্চোচ্চ স্থানে সংস্থাপিত। তবে এ কথা সবারই জানা আছে যে, দুনিয়ার সব কাজের মূল উৎস হলো মন বা অন্তঃকরণ। আর সে মনের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া, স্থিতি ও বিকৃতির বহিঃপ্রকাশ ঘটে চোখের মাধ্যমে। এ জন্যই শেরে খোদা হযরত আলী (রা:) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি চোখকে সামলাতে পারল না তার মনের বা অন্তরের উঠা-নামার কোনোই মূল্য নেই। সিয়াম সাধনার প্রাক্কালে রোজাদার ব্যক্তি সর্বদাই নিজের চোখকে সামলে চলে এবং এর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে।

এরপর হলো জিহ্বার স্থান। জিহ্বা একদিক দিয়ে কল্যাণের মূল। অন্যদিক দিয়ে জিহ্বাই আবার ধ্বংস ডেকে আনে। অসংযত জিহ্বা সব ইবাদত-বন্দেগির সর্বনাশ করে দেয়। জিহ্বার একটি কথায় এক বছর এমন কি ১০ বছরের ইবাদতও ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। মিথ্যা কথা, মিথ্যা ভাষণ, কুৎসা, গিবত অথবা অন্যান্য নানা ধরন ও বিভিন্ন রকম কথার দ্বারা এরূপ হতে পারে। এ জন্যই বলা হয়ে থাকে যে, কয়েদযোগ্য বস্তুগুলোর মধ্যে জিহ্বাই অগ্রগণ্য।

এরপর হলো পেট বা উদরের স্থান। এর হিফাজত এবং সংশোধন করাও অত্যন্ত জরুরি। কেননা, ঈমানদার বান্দার মূল উদ্দেশ্য হলো ইবাদত আর পানাহার হলো তার শক্তি সঞ্চারক বীজ এবং পানি। বীজ যেমন হবে এবং জমিনে সেভাবে পানি সিঞ্চন করা যাবে, ফসল ও ঠিক তেমনি হবে। বীজ খারাপ হলে ফসলও খারাপ হবে। এমতাবস্থায় কৃষক অবশ্যই ফসল ফলানো কাজে সফলতা লাভে ব্যর্থ হবে।

এরপর হলো কান বা শ্রবনেন্দ্রিয়ের কাজ। মানুষের কানে যে শব্দ বা আওয়াজ আঘাত হানে, তার প্রভাবে দেহ ও মন আন্দোলিত হয়, সচকিত ও তৎপর হয়ে উঠে। সিয়াম সাধনারকারীকে অবশ্যই শ্রবনেন্দ্রিয়ের হিফাজত করতে হবে। সব প্রকার মিথ্যা, কটু, অশ্লীল, কুরুচিপূর্ণ কথা, আলোচনা ও বাকবিত-া শ্রবণ এবং উপভোগ করা থেকে কানকে বিরত রাখতে হবে।

এখন থেকে গেল অন্তঃকরণ বা মনের কথাটা। অন্তঃকরণ বা মনই হলো সব কিছুর মূল। মন ঠিক থাকলে সব কিছুই ঠিক থাকে। মন একটি বৃক্ষ স্বরূপ। অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তার শাখা-প্রশাখা সদৃশ। বৃক্ষের মূল সঠিকও সতেজ থাকলে শাখা-প্রশাখা সবই সতেজ থাকে। মনকে স¤্রাট বা বাদশাহ ও মনে করা যায় এবং অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোকে তার অনুগত প্রজার তুল্য কল্পনা করা যায়। রাজা বা বাদশাহ ঠিক থাকলে তার প্রজারাও ঠিক থাকে। এ কথার ওপর ভিত্তি করেই চোখ, মুখ ও পেট ইত্যাদিকে সঠিক দেখলে এ কথা ভাবা যাবে যে, মনও অন্তঃকরণ ঠিক আছে। আর যদি সেগুলোতে গোলমাল দেখা যায়, তাহলে ভাবা যেতে পারে যে, অন্তঃকরণে কোনো অসুবিধার ফলেই সেরূপ ঘটেছে। সুতরাং আপ্রাণ চেষ্টা ও পরিশ্রম করে মনকে নির্দোশ ও নির্মল রাখা প্রয়োজন। মুমিন মুসলমানদের সিয়াম সাধনা এই প্রয়োজনটি পূরণে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করে। মনও অন্তঃকরণ কলুষমুক্ত থাকলে সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নির্মল ও নির্দোষ থাকবে। আর এমনটি হলেই জীবনের সব অঙ্গনে শান্তি ও নিরাপত্তা লাভ করা যাবে। যেহেতু মনের ভেতরই সব প্রকার দ্বিধা, সন্দেহ ও ভাবনা চিন্তার সৃষ্টি হয় এবং তা মানুষের নিয়ন্ত্রণাধীন নয়, তাই মনকে আয়ত্তের ভেতর আনয়ন করা খুবই কঠিন ব্যাপার। মনের নির্দেশ, উপদেশ এবং দাবি-দাওয়া পূরণ থেকে বিরত থাকার জন্য একাগ্র সাধনা চাই। এই সাধনার প্রকৃষ্ট উদাহরণই হলো সিয়াম সাধনা। হযরত সহল তশতরী (রাহ:) বলেছেন, চারটি বিষয়ের মধ্যেই সব কল্যাণ পুঞ্জীভূত। সে বিষয়গুলো অবলম্বনেই মানুষ ওলি-আবদাল হয়ে থাকে। সেগুলো হলো- ১. ক্ষুধার্ত থাকা; ২. মৌনাবলম্বন; ৩. লোকালয় পরিত্যাগ ও ৪. বিনিদ্র থেকে আল্লাহ তাআলার ইবাদত-বন্দেগি করা। জনৈক আরিফ বান্দাহ বলেছেন, সব কল্যাণের ভিত্তিই হলো সিয়াম সাধনা করা বা উপবাস থাকা। অর্থাৎ আমাদের ইবাদতের সুযোগ ও তৃপ্তি এবং এলেম ও আমলের আনন্দ এসব কিছু উপবাস থেকে আল্লাহ তাআলাকে খুশি করার জন্য ধৈর্যাবলম্বনের মাধ্যমে লাভ করে থাকি। মহান আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এর যাবতীয় শুভফল প্রদান করুন। আমিন!

Source link

Back to top button