
মাহে রমজানে সিয়াম সাধনার গুরুত্ব ও ফজিলত অনেক বেশি। এতদ প্রসঙ্গে বিশ্বনবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করেছেন। হাদিসের গ্রন্থাবলিতে তাঁর প্রদত্ত তথ্যপূর্ণ বাণীসমূহের উদ্ধৃতি লক্ষ করা যায়। তন্মধ্য হতে কতিপয় বাণী আমরা সহৃদয় পাঠক ও পাঠিকাদের সামনে উপস্থাপন করতে প্রয়াস পাবো। আসুন, এবার এ দিকে নজর দেয়া যাক।
১. বিশিষ্ট সাহাবি হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : প্রিয় নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, ‘তোমাদের নিকট রমজান মাস উপস্থিত। এটি এক অত্যন্ত বরকতময় মাস। আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত এ মাসে তোমাদের প্রতি রোজা ফরজ করেছেন। এ মাসে আকাশের দরজাসমূহ উন্মুক্ত হয়ে যায়, এ মাসে জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয় এবং এ মাসে বড় বড় ও সেরা শয়তানগুলো আটক করে রাখা হয়। আল্লাহর জন্যে এ মাসে একটি রাত আছে, যা হাজার মাসের চেয়েও অধিক উত্তম। যে লোক এই রাত্রির মহা কল্যাণ লাভ হতে বঞ্চিত থাকল, সে প্রকৃতই বঞ্চিত ব্যক্তি। (সুনানে নাসাঈ : হাদিস-৪/২১০৬)।
২. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) হতে বর্ণিত, সাইয়্যেদুল মুরসালিন মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, ‘সাওম ও কুরআন রোজাদার বান্দার জন্য শাফায়াত করবে। রোজা বলবে, হে আল্লাহ! আমি এ ব্যক্তিকে দিনে খাদ্য ও পানীয় এবং অন্যান্য কামনা বাসনা থেকে বিরত রেখেছি। আপনি আমার সুপারিশ কবুল করুন। আর কুরআন বলবে, হে আল্লাহ! আমি এ ব্যক্তিকে রাতের নিদ্রা হতে ফিরিয়ে রেখেছি। আপনি আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। মহান আল্লাহ তাআলা তাদের সুপারিশ গ্রহণ করবেন।’ (বায়হাকি শুয়াবুল ঈমান : হাদিস-৩/১৮৩৯)।
৩. হযরত সাহল ইবনে সাদ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, প্রিয় নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, ‘জান্নাতের একটি দরজা আছে তাকে রাইয়্যান বলা হয়। এই দরজা দিয়ে কিয়ামতের দিন একমাত্র রোজাদার লোকেরাই জান্নাতে প্রবেশ করবে। তাদের ছাড়া অন্য কেউ এই পথে প্রবেশ করবে না। সে দিন এই বলে ডাক দেয়া হবে, রোজাদার লোকেরা কোথায়? তারা যেন এই পথে প্রবেশ করে। এভাবে সকল রোজাদার ভেতরে প্রবেশ করার পর দরজাটি বন্ধ করে দেয়া হবে। অতঃপর এ পথে আর কেউ প্রবেশ করবে না।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস-৩/১৮৯৬)।
৪. হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা এবং তদানুযায়ী আমল পরিত্যাগ করল না, তবে এমন ব্যক্তির পানাহার পরিত্যাগ করার আল্লাহ তাআলার কোনো প্রয়োজন নেই।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস-৩/১৯০৩)।
আর সিয়াম সাধনার ফজিলত সম্পর্কে রাহমাতুল্লিল আলামিন মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা:) বহু অমীয় বাণী রেখে গেছেন। কালের খাতায় ইতিহাসের পাতায় তা ভাস্বর হয়ে ফুটে রয়েছে। আসুন, এবার সেদিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করা যাক।
১. হযরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি একদিন আল্লাহর পথে রোজা রাখবে, আল্লাহ পাক তার মুখম-ল জাহান্নাম হতে ৭০ বছর দূরে সরিয়ে রাখবেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস-৪/২৮৪০)।
২. হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসের রোজা রাখবে ঈমান ও আন্তরিক চেতনা সহকারে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ হয়ে যাবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস-১/৩৮)।
অতএব সিয়াম সাধনার ফজিলত ও গুরুত্ব ইসলামী জীবন জিজ্ঞাসার সুবিশাল অঙ্গনকে পরিপ্লুত করে রেখেছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। মহান আল্লাহ পাক আমাদেরকে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে পরকালীন মুক্তি ও নিষ্কৃৃতি লাভের তাওফিক এনায়েত করুন, আমিন!