Status

মুবারক হো মাহে রমজান

<p>বছর ঘুরে আবার আমাদের মাঝে এসেছে বরকমতয় মাহে রমযান। এ মাসের সিয়াম সাধনাকে মহান আল্লাহ পাক মুমিন মুসলমানদের উপর ফরজ করেছেন। ‘সাওম’ বা ‘সিয়াম’ শব্দটি আরবী। বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত রোযা শব্দটি মূলতঃ ফার্সী শব্দ। আরবী সাওম শব্দের অর্থ হলো বিরত থাকা, দূরে থাকা, কঠোর সাধনা, আত্মসংযম ও অবিরাম চেষ্টা। ইসলামী পরিভাষায় সুবহে সাদিক হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোযার নিয়তের সঙ্গে পানাহার ও সকল প্রকার যৌন সম্ভোগ থেকে বিরত থাকাকে সাওম বলা হয়। বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ মোস্তাফা আহমাদ মুজতাবা (সা.) হিজরতের পর মদীনা মুনাওয়ারা ইহুদীদের মধ্যে আশুরার রোযা পালন করতে দেখে মুসলমানদেরকে উক্ত দিনের রোজা পালন করতে নির্দেশ দেন।</p>
<p>হিজরতের আঠার মাস পর কিবলাহ পরিবর্তনের পরে শাবান মাসে রমযান মাসের রোযা ফরজ হবার নির্দেশ সম্বলিত আল কুরআনের আয়াত নাযিল হয়। তখন থেকে আশুরার রোযা পালনের অপরিহার্যতা নাকচ হয়ে যায়। প্রত্যেক বয়ঃপ্রাপ্ত, সুস্থ, মুকীম ও সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন মুসলিম নর-নারীর উপর রমযান মাসের রোযা ফরজ সাব্যস্ত হয়। তবে, শরীয়ত সমর্থিত সঙ্গত কারণে উক্ত মাসে রোযা না রাখতে পারলে পরবর্তী সময় তা পালন করা ফরজ। তাছাড়া দুর্বল, অসুস্থ ও রোগাক্রান্তদের জন্য কাফফারা আদায়ের বিধানও রয়েছে। মানুষের আর্থিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে পবিত্রতা অর্জনের লক্ষ্যে সিয়াম সাধনা অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে। (তাফসীরে রুহুল বায়ান)</p>
<p>সিয়াম সাধনার নিক নির্দেশনা প্রদান করে আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে : হে মুমিনগণ! তোমাদের জন্য সিয়ামের বিধান দেয়া হলো। যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে দেয়া হয়েছিল, যাতে তোমরা তাকওয়ার অধিকারী হতে পার। (সূরা আল বাকারাহ: আয়াত ১৮৩)। এই আয়াতে কারীমায় মহান আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত তিনটি বিষয়ের কথা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন। প্রথমটি হলো : ‘সিয়াম’। যার শাব্দিক অর্থ ও পারিভাষিক অর্থ আমরা বিবৃত করেছি। সিয়াম সাধনা ইসলামের মূল ভিত্তি বা আরকানের অন্যতম। সিয়ামের অপরিসীম ফযিলত রয়েছে। আর দ্বিতীয়টি হলো মুসলিমদের প্রতি সিয়াম ফরজ হওয়ার নির্দেশটি এটি বিশেষ নজির উল্লেখসহ দেয়া হয়েছে। নির্দেশের সাথে সাথে এটাও উল্লেখ করা হয়েছে যে, সিয়াম শুধুমাত্র তোমাদের প্রতিই ফরজ করা হয়নি। তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মত গণের উপরও তা ফরজ করা হয়েছিল। এর দ্বারা যেমন সিয়ামের বিশেষ গুরুত্ব বুঝানো হয়েছে, তেমনি মুসলিমদেরকে এ মর্মে একটা সান্ত¦নাও দেয়া হয়েছে যে, সিয়াম একটা কষ্টকর ইবাদত সত্য। তবে তা শুধুমাত্র তোমাদের উপরই ফরজ করা হয়নি, তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মত গণের উপরও ফরজ করা হয়েছিল। কেননা সধারণতঃ দেখা যায়, কোন একটা কষ্টকর কাজে অনেক লোক একই সাথে জড়িত হয়ে পড়লে তা অনেকটা স্বাভাবিক এবং সাধারণ বলে মনে হয়। উপরোক্ত আয়াতে কারিমার মধ্যে শুধু বলা হয়েছে যে, সিয়াম যেমন মুসলিমদের উপর ফরজ করা হয়েছে, তেমনি পূর্ববর্তী উম্মত গণের উপরও ফরজ করা হয়েছিল। এ কথার দ্বারা এ তথ্য বুঝায় না যে, আগেকার উম্মত গণের সিয়াম সমগ্র শর্ত ও প্রকৃতির দিক দিয়ে মুসলিমদের উপর ফরজকৃত সিয়ামেরই অনুরূপই ছিল। যেমন, সিয়ামের সময় সীমা, সিয়ামের সংখ্যা এবং কখন তা রাখা হবে এ সব ব্যাপারে আগেকার উম্মতদের সিয়ামের সাথে মুসলিমদের সিয়ামের পার্থক্য থাকতেই পারে। বাস্তব ক্ষেত্রে হয়েছেও তাই। বিভিন্ন সময়ে সিয়ামের সময় সীমা এবং সংখ্যার ক্ষেত্রে পার্থক্য হয়েছে। (তাফসীরে মায়ারিফুল কুরআন)। আর তৃতীয় বিষয়টি হলো এই যে, আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘যাতে তোমরা তাকওয়ার অধিকারী হতে পার’। এ বাক্যে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, তাকওয়া শক্তি অর্জন করার ব্যাপারে সিয়াম সাধনার একটা বিশেষ ভূমিকা বিদ্যমান আছে। কেননা, সিয়াম পালনের মাধ্যমে প্রবৃত্তির তাড়না নিয়ন্ত্রণ করার ব্যাপারে বিশেষ শক্তি অর্জিত হয়। প্রকৃত প্রস্তাবে সেটাই তাকওয়ার ভিত্তি।</p>
<p>আরবী মুত্তাকীন শব্দটি মুত্তাকী এর বহুবচন। মুত্তাকী শব্দের মূল ধাতু তাকওয়া। তাকওয়া অর্থ হলো নিরাপদ থাকা, নিরাপত্তা বিধান করা। শরীয়াতের পরিভাষায় তাকওয়া হলো বান্দাহ যেন আল্লাহর অসন্তুষ্টি ও শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে। আর তা করতে হলে যা করতে হবে তা হলো তার নির্দেশকে পুরোপুরি মেনে নেয়া এবং তাঁর নিষেধকৃত বস্তুকে পুরোপুরি ত্যাগ করা। আর মুত্তাকী হলো সে ব্যক্তি যে আল্লাহর আদেশকে পুরোপুরি মেনে নিয়ে এবং তাঁর নিষেধ থেকে সম্পূর্ণরূপে দূরে থেকে তাঁর অসন্তুষ্টি ও শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে। (তাফসীরে ইবনে কাসির)। মহান আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত সিয়াম সাধনার মাধ্যমে উম্মতে মোহাম্মাদীর সকল সদস্যকে খালেস মুত্তাকী হওয়ার তাওফিক এনায়েত করুন, আমিন।</p>

Source link

Back to top button