
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানি ইউনিলিভার কনজ্যুমার কেয়ার লিমিটেড শেয়ারহোল্ডারদের ৫২০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেবে। কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত বছরের জন্য এ লভ্যাংশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কোম্পানিটির শেয়ারহোল্ডাররা লভ্যাংশ হিসেবে প্রতিটি শেয়ারের বিপরীতে নগদ ৪৪ টাকা করে পাবেন। সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানিটি যে মুনাফা করেছে ঘোষিত লভ্যাংশের পরিমাণ তার থেকে বেশি।
কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বুধবার (৫ মার্চ) প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
‘গ্লাক্সোস্মিথক্লাইন বা জিএসকে’ থেকে নাম বদল হয়ে ‘ইউনিলিভার কনজ্যুমার কেয়ার’ নাম ধারণের পর এটি কোম্পানিটির পঞ্চম লভ্যাংশ ঘোষণা।
লভ্যাংশের বিষয়ে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের নেওয়া সিদ্ধান্ত শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদনের জন্য বার্ষিক সাধারণ সভার (এজিএম) তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ১৫ মে। আর রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ এপ্রিল।
সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) করেছে ৩৪ টাকা ৬২ পয়সা এবং শেয়ারপ্রতি সম্পদ (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১২৬ টাকা ৮৩ পয়সা। অর্থাৎ কোম্পানিটি যে মুনাফা করেছে প্রতিটি শেয়ারের বিপরীতে তার থেকে ১৫ টাকা ৩৮ পয়সা বেশি লভ্যাংশ দেবে।
ডিএসই জানিয়েছে, লভ্যাংশ ঘোষণার কারণে আজ কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বাড়া বা কমার ক্ষেত্রে কোন সার্কিট ব্রেকার থাকবে না। অর্থাৎ শেয়ারের দাম যতখুশি বাড়তে বা কমতে পারবে।
হরলিকস, মালটোভা, গ্ল্যাক্সোজ-ডি, সেনসোডাইন’র মতো পণ্য নিয়ে বাংলাদেশে দাপটের সঙ্গে ব্যবসা করা গ্লাক্সোস্মিথক্লাইন ১৯৭৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়।
কনজিউমার হেলথকেয়ার ও ফার্মাসিটিক্যালস দুই ইউনিটের মাধ্যমে দাপটের সঙ্গে ব্যবসা করলেও লোকসান দেখিয়ে ২০১৮ সালে ওষুধ উৎপাদন কারখানা এবং ফার্মাসিউটিক্যাল বিজনেস ইউনিটের সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় বহুজাতিক কোম্পানিটি।
এরপরেই ইউনিলিভারের কাছে শেয়ার বিক্রির ঘোষণা আসে। এ-সংক্রান্ত প্রথম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় ২০১৮ সালের ৩ ডিসেম্বর। সে সময় ইউনিলিভার ও জিএসকের পক্ষ থেকে দুটি পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ভারত, বাংলাদেশ ও এশিয়ার অন্য ২০টি দেশের বাজারে জিএসকের চলমান কনজিউমার হেলথ ড্রিংকস ব্যবসা কিনে নিচ্ছে অ্যাংলো-ডাচ জায়ান্ট ইউনিলিভার।
প্রথমে সেটফার্স্টের কাছে থাকা জিএসকে বাংলাদেশের সব শেয়ার ইউনিলিভারের মূল কোম্পানি ইউনিলিভার এনভির কাছে বিক্রি করার কথা ছিল। কিন্তু ২০২০ সালের ২২ মার্চ এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ইউনিলিভারের মূল কোম্পানির পরিবর্তে এর সাবসিডিয়ারি ইউনিলিভার ওভারসিজ হোল্ডিংস বিভির কাছে সেটফার্স্টের সব শেয়ার বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এর অংশ হিসেবে ওই বছরের ২৮ জুন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ব্লক মার্কেটের মাধ্যমে জিএসকের শেয়ার কিনে নেয় ইউনিলিভার। ৯৮ লাখ ৭৫ হাজার ১৪৪টি শেয়ারের প্রতিটি কেনা হয় ২ হাজার ৪৬ টাকা ৩০ পয়সা করে। শেয়ার কিনে নেওয়ায় দুদিনের মধ্যে নতুন এমডি নিয়োগ দেয়া হয় প্রতিষ্ঠানটিতে। সেই সঙ্গে ‘গ্লাক্সোস্মিথক্লাইন বা জিএসকে’ নাম বাদ দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির নতুন নাম দেওয়া হয় ‘ইউনিলিভার কনজ্যুমার কেয়ার’।
নাম বদল হলেও ওই বছরের ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত শেয়ারবাজারে আগের নামেই কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হচ্ছিল। তবে ২৬ নভেম্বর থেকে নতুন নামে লেনদেন শুরু হওয়ার পাশাপাশি ক্যাটাগরিও বদলে যায় কোম্পানিটির। ওষুধ ও রসায়ন খাত থেকে কোম্পানিটি খাদ্য খাতের আওতাভুক্ত হয়।
নতুন নামে ও নতুন ক্যাটাগরিতে লেনদেন শুরু হতেই ইউনিলিভার কনজ্যুমার কেয়ার বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে। ক্রেতাদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসায় ২ হাজার ৭৪২ টাকা থেকে কয়েক দফা দাম বেড়ে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ৩ হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত উঠে।
নাম বদলের পর ২০২০ সালের সমাপ্ত বছরে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের ৪৪০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়। তারপর ২০২১ সালে ৪৪০ শতাংশ, ২০২২ সালে ২৪০ শতাংশ নগদ ও ৬০ শতাংশ বোনাস শেয়ার এবং ২০২৩ সালে ৩০০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয় কোম্পানিটি। এ হিসাবে নাম বদলের পর এবার কোম্পানিটি সব থেকে বেশি লভ্যাংশ ঘোষণা করলো।
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, ১৯ কোটি ২৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ১ কোটি ৯২ লাখ ৭৪ হাজার ৩১৮টি। এর মধ্যে ৯২ দশমিক ৮০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে। বাকি শেয়ারের মধ্যে ৩ দশমিক ৪৯ শতংশ সাধারণ বিনিয়োগকারী এবং ৩ দশমিক ৬০ শতাংশ প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে। আর বিদেশিদের কাছে আছে দশমিক ১১ শতাংশ।
এমএএস/জেএইচ