
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) পোলট্রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ইলিয়াস হোসেনের গবেষণা প্রতিবেদনে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সিস্টেমের (বাউরেস) অর্থায়নে পরিচালিত এ গবেষণায় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসেসিং প্ল্যান্ট স্থাপনের তথ্য দিলেও ক্যাম্পাসে এমন কোনো প্ল্যান্টের অস্তিত্ব নেই বলে জানা গেছে।
২০২৪ সালের এপ্রিলে অনুষ্ঠিত বাউরেসের বার্ষিক কর্মশালায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পোলট্রি খামারে প্রসেসিং প্ল্যান্ট স্থাপনের তথ্য উপস্থাপন করেছিলেন অধ্যাপক ইলিয়াস হোসেন।
বাউরেসের কর্মশালার প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপে তিনি জানান, প্রকল্পের কার্যক্রম দুটি ধাপে সম্পন্ন হয়েছে। প্রথমত, ময়মনসিংহের স্থানীয় বাজারে পোলট্রি জবাই এলাকার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা এবং স্থানীয় বাজার ও প্রক্রিয়াকরণ ইউনিট থেকে উৎপাদিত মুরগির মাংসের জীবাণু গুণাগুণ মূল্যায়ন করা। দ্বিতীয়ত, বাকৃবির পোলট্রি খামারে একটি মিনি প্রসেসিং প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছিল। সেই খামারে ১৫০ বর্গফুটের একটি খোলা-পার্শ্বযুক্ত প্রক্রিয়াকরণ প্ল্যান্ট প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বলে উল্লেখ করেন অধ্যাপক ড. ইলিয়াস হোসেন।
অধ্যাপক ইলিয়াসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সেই মিনি প্রসেসিং প্ল্যান্ট গতবছর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। তবে সরেজমিন দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের পোলট্রি খামারে সম্পূর্ণ কোনো প্রসেসিং প্ল্যান্ট নেই। সেখানে ছাদ ও দেওয়ালবিহীন একটি কাঠামো রয়েছে।
পোলট্রি খামারের অফিসার-ইন-চার্জ তানভীর আহমেদ জানান, খামারে কোনো প্রসেসিং প্ল্যান্ট নেই। তবে একটি প্রসেসিং প্ল্যান্ট তৈরির কাজ চলছে।
এদিকে বাউরেসের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. পরেশ কুমার শর্মা নিশ্চিত করেছেন প্রকল্পটি ২০২৪ সালে শেষ হয়ে গেছে।
বাউরেসের নিয়ম অনুযায়ী, গবেষণা শেষে ফলাফল যাচাই করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটিতে পশু প্রজনন ও কৌলিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. রুহুল আমিন, পশুপুষ্টি বিভাগের অধ্যাপক ড. খান সাইফুল ইসলাম এবং অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আল-মামুন সদস্য ছিলেন।
কোনো প্রকার প্রসেসিং প্ল্যান্ট ছাড়াই কীভাবে গবেষণা ফলাফল জমা পড়েছে, জানতে চাইলে কমিটির সদস্য ড. খান মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ওই গবেষণার যাচাই টিমে আমি ছিলাম। তবে যাচাই টিমের কাজ হলো গবেষণা প্রবন্ধের ফাইন্ডিংস, অবজারভেশন অর্থাৎ গবেষণা সংক্রান্ত বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করে মূল্যায়ন করা। আর্থিক মনিটরিংয়ের কাজ আমাদের নয়, এটি করে থাকে বাউরেস।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রসেসিং প্ল্যান্টের বিষয়ে ওই গবেষণা প্রবন্ধে কিছু ছিল কিনা সেটা আমরা দেখি না। এসব বিষয় নিয়ে কাজ করে থাকে বাউরেসের ফিন্যান্সিয়াল কমিটি। আমাদের কাজ হলো কী নিয়ে গবেষণা হয়েছে, কীভাবে করেছে, রেজাল্ট কী এসব বিবেচনা করা।’
গবেষণা যাচাই কমিটির আরেক সদস্য ড. মোহাম্মদ আল-মামুনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যাযনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘আমার গবেষণার লক্ষ্য ছিল বাকৃবির পোলট্রি খামার থেকে যত মুরগি বের হবে, সবগুলো প্রসেসিং প্ল্যান্ট হয়ে বের করা, যাতে পরিচ্ছন্নতা ও হাইজিন পরিপূর্ণভাবে মেনে চলা যায়। তবে জায়গা ও বিভাগের অন্যান্য শিক্ষকের পোলট্রি শেড তৈরির কারণে সময়মতো মিনি প্রসেসিং প্ল্যান্টটি তৈরি সম্ভব হয়নি। পরবর্তী সময়ে বিভাগের আলোচনায় পোলট্রি খামারের ভেতরে অবস্থিত পুকুরের শেষ মাথায় জায়গা ঠিক করা হয়। বিভাগ দায়িত্ব নিয়ে প্ল্যান্ট তৈরির কাজটি তদারকি করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গতবছর প্ল্যান্ট তৈরির কাজ শুরু হলেও বর্ষাকালে কাজ করতে বেগ পেতে হয়েছে। পানি সরানো, মাটি ভরাটসহ বিভিন্ন কারণে সময় লেগেছে। বর্তমানে কাজের ৮০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। প্ল্যান্টের পিলার ওঠানো শেষ, শুধু ছাদ ও টিনশেডের কাজ করলেই কাজটি শেষ হবে।’
বাকৃবির পোলট্রি বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. বাপন দে বলেন, ওই অধ্যাপকের প্ল্যান্টের কাজ শুরু হয়েছে। বর্তমানে প্ল্যান্টটির কাজ চলমান। তবে সময়ের সঙ্গে তুলনা করতে গেলে কাজটি আসলে সম্পন্ন হয়নি, এটা সত্য কথা।
বিষয়টি নিয়ে বিশদভাবে জানতে চাইলে বাউরেসের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. হাম্মাদুর রহমান বলেন, ‘যাচাই করা তো আমাদের কাজ না, এটা যাচাই কমিটির কাজ। যাচাই কমিটি এ ব্যাপারে কোনো অভিযোগ দিলে তারপর আমরা ব্যবস্থা হিসেবে উপাচার্যের নেতৃত্বে একটি কমিটি আছে, তাদের অবগত করবো। পরবর্তী সময়ে তারাই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন।
এ বিষয়ে জানতে বাকৃবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়ার সঙ্গে ফোন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
আসিফ ইকবাল/এসআর/এমএস