মালয়েশিয়ায় রমজানে মূল্যবৃদ্ধি রোধে জনকল্যাণকর পদক্ষেপ সরকারের


সিয়াম সাধনা ও সংযমের মাস পবিত্র রমজান। প্রতি বছর এ মাস আসার সঙ্গে সঙ্গে মালয়েশিয়ার বাজারে খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়। তবে এই চাহিদার সুযোগ নিয়ে অসাধু ব্যবসায়ী মূল্যবৃদ্ধির পাঁয়তারা করেন, যা সাধারণ মানুষের জন্য দুঃসহ হয়ে ওঠে। বিশেষ করে প্রবাসীদের জন্য এ ধরনের মূল্যবৃদ্ধি আর্থিক চাপে ফেলে দেয়।

মালয়েশিয়ার সরকার এ সমস্যা মোকাবিলায় এ বছর জনকল্যাণকর অনেকগুলো পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে অন্যতম উদ্যোগ হলো; জাতীয়ভাবে মালয়েশিয়াজুড়ে ৯৫টি লোকেশনে রমজানের ‘রাহমা বাজার’ চালু করেছে, যা এই রমজানে মুসলিমদের সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য কিনতে সহায়তা করবে।

মালয়েশিয়ার বেশ কয়েকটি গণমাধ্যম জানিয়েছে, মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার। এ বছর মূল্যবৃদ্ধি রোধে কঠোর নজরদারিও চালাচ্ছে তারা। মালয়েশিয়ার অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য ও জীবনযাত্রার ব্যয় সংক্রান্ত মন্ত্রণালয় (কেপিডিএন) জানিয়েছে, রমজান মাসে খাদ্যদ্রব্যের দাম বৃদ্ধি ঠেকাতে বাজার নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পরিদর্শকও নিয়োগ করা হয়েছে।

এছাড়া ২০২৫ সালজুড়ে চলবে ডিসকাউন্ট কর্মসূচি, যা বড় সুপারমার্কেট ও অন্যান্য খুচরা বিক্রেতাদের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমানোর লক্ষ্যে, দেশের ২২২টি সংসদীয় এলাকার মধ্যে এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে।

এই কর্মসূচির অধীনে যেসব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়ে বিক্রি করা হচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে- মুরগি, মাছ ও সামুদ্রিক খাদ্য, মুরগির ডিম, পরিশোধিত চিনি, বোতলজাত ভোজ্য তেল, গমের আটা, চাল, শাকসবজি ও ফলমূল, ব্যক্তিগত পরিচর্যার সামগ্রী, ঘরোয়া পরিষ্কারের পণ্য, ডিসপোজেবল ডায়াপার, শিক্ষাসামগ্রী, ওষুধ এবং অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী।

বিশেষ করে রমজানের সময় বিভিন্ন খাদ্যবাজারে ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত ভাড়া ও লাইসেন্স ফি দিয়ে ব্যবসা করতে হয়, যা শেষ পর্যন্ত সাধারণ ক্রেতাদের ওপর বোঝা হয়ে পড়ে। এ সমস্যা দূর করতে সরকার সরাসরি ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স প্রদান করছে এবং অযথা মধ্যস্থতাকারীদের বাজার থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এতে করে অতিরিক্ত মুনাফা লাভের প্রবণতা কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।

মালয়েশিয়ার দি স্টার জানিয়েছে, মূল্যবৃদ্ধি রোধে সরকার দেশজুড়ে ৯৫টি লোকেশনে জাতীয়ভাবে ‘রমজানের রাহমা বাজার’ চালু করেছে। এসব বাজারে সাশ্রয়ী মূল্যে বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় রমজানের পণ্য পাওয়া যাবে, যেন সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। রমজানের রাহমা বাজারে চাল, আটা, তেল, মাংস, শাকসবজি, এবং অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বাজারের তুলনায় ১০%-৩০% কম দামে বিক্রি করা হয়ে থাকে। এই বাজারগুলো মূলত সরকার ও বিভিন্ন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে পরিচালনা করে, যেখানে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য সরাসরি সরবরাহ করা হয়।

এ উদ্যোগ বাংলাদেশি শ্রমিকসহ অন্যান্য নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য একটি স্বস্তির খবর। এ ধরনের বাজার থেকে তারা সাশ্রয়ী দামে খাবার কিনতে পারবেন, যা রমজানে তাদের আর্থিক চাপ কিছুটা লাঘব করবে। রাহমা মেনুর অধীনে ৫ রিঙ্গিত বা তার কম মূল্যে ইফতার সামগ্রী পাওয়ার সুবিধা থাকায় অনেকেই অতিরিক্ত ব্যয় ছাড়াই ভালো মানের খাবার কিনতে পারবেন। পাশাপাশি, ব্যবসায়ীদের জন্যও এটি লাভজনক, কারণ তারা সরকারের সহায়তায় কম মূল্যের স্টল পরিচালনা করতে পারছে। এটি সামগ্রিকভাবে একটি কল্যাণমূলক পদক্ষেপ, যা রমজান মাসে বাজার পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করবে।

রমজান মাসে মালয়েশিয়ায় মূল্যবৃদ্ধি একটি বড় সমস্যা হলেও সরকারের কঠোর পদক্ষেপ ও ‘রমজানের রাহমা বাজার’ উদ্যোগ তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

এমআরএম/জেআইএম

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি,
স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা
পাঠানোর ঠিকানা –
[email protected]



Source link

Exit mobile version