Status

মামলা দিবেন না টাকা যত চান দেবো

রাত তখন সাড়ে ৮টা। ওই সময় নিজ কক্ষ থেকে উদ্ধার করা হয় স্কুল শিক্ষার্থী নূর-ই-সাবা অধরার ঝুলন্ত লাশ। এর ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই অধরাদের উত্তরার বাসায় ছুটে যান উত্তরার ডন বস্ক স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রিন্সিপাল মিসেস শামসুন্নাহার ওরফে লস্কর নাহার। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, চরিত্র নিয়ে তার অশ্রাব্য মন্তব্য করার অপমান সইতে না পেরেই আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয় তারই স্কুলের শিক্ষার্থী অধরা। এজন্য শামসুন্নাহার নিজের দোষ স্বীকার করে অধরার বাবাকে সান্ত¦নার পাশপাশি ক্ষমাও চেয়েছিলেন। শুধু তা-ই নয়, অধরার বাবাকে অনুরোধ করে বলেছিলেন, ‘যত টাকা লাগে নিনÑশুধু মামলা দিবেন না’। শামসুন্নাহার যখন এ প্রস্তাব দেন তখন একটি কক্ষে ছিল চাদরে মোড়ানো আদরের সন্তান অধরার লাশ। অন্য গুলোতে আত্মীয়-স্বজন, অধরার সহপাঠী ও অন্যান্য শিক্ষক-শুভানুধ্যায়ী। সবাই শোকাহত। এরকম পরিবেশে ছাত্রীর আত্মহত্যায় অভিযুক্ত শামসুন্নাহারের প্রস্তাবে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন অধরার বৃদ্ধ বাবা রবিউল ইসলাম। পিতা হিসেবে শুধু রবিউলই নন, শামসুন্নাহারের নিজ মুখে অধরার মৃত্যুর দায় স্বীকার করায় ক্ষিপ্ত ছিলেন সেখানে উপস্থিত অনেকেই। এ রকম পরিস্থিতিতে পুলিশ প্রহরায় ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন প্রিন্সিপাল শামসুন্নাহার। অধরার পরিবারকে ম্যানেজ করতে না পেরে শামসুন্নাহার তৎকালীন একজন প্রভাবশালী মন্ত্রীকে ব্যবহার করে থানা কন্ট্রোল করেন। আওয়ামী লীগের ওই প্রভাবশালী নেতার কারণেই তখন অধরার মৃত্যুর ঘটনায় মামলা গ্রহণ করেনি থানা কর্তৃপক্ষ। একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে পাগলপ্রায় বাবা রবিউল ইসলামের কাছ থেকে কৌশলে একটি সাক্ষর নিয়ে তাতে অপমৃত্যুর সাধারণ ডাইরি করেন পুলিশ। থানায় মামলা করতে না পেরে আদালতের আশ্রয় নেন রবিউল। একমাত্র আসামি করেন শামসুন্নাহারকে। এই মামলাটি সিআইডিতে তদন্তাধীন। সন্তান হারানো রবিউল থানা, পুলিশ ও আদালতের দ্বারে দ্বারে ঘুরে আজ ক্লান্ত। তবুও আশায় বুক বেঁধে আছেন মৃত্যুর আগে হলেও দেখে যেতে পারবেন প্রাণের চেয়ে প্রিয় সন্তানের মৃত্যুর জন্য দায়ী প্রিন্সিপালের বিচার। এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে তিনি প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে অভিযোগ, আক্ষেপ, ক্ষোভ, হতাশা ও প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেন।
মামলার সূত্র মতে, উত্তরা ৪ নং সেক্টরের ১৬ নং রোডের ১২ নং হোল্ডিংস্থ ২/সি ফ্ল্যাটের বাসিন্দা রবিউল ইসলামের একমাত্র কন্যা ছিলেন অধরা। লেখাপড়া করতেন উত্তরা ৪ নং সেক্টর ১৩ নং রোডের ডন বস্ক স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজি মাধ্যমের ৮ম শ্রেণিতে। সে ছিল অত্যন্ত মেধাবী। প্রতিটি শ্রেণিতে তার অবস্থান ছিল ১ থেকে ৩-এর মধ্যে। পাশাপাশি কালচারাল প্রগামে স্কুলের পক্ষে পাওয়া পদকের ৮০ ভাগই অধরার অর্জিত। মেধাবী এ শিক্ষার্থীকে পুঁজি করেই প্রিন্সিপাল স্কুলিটিতে ছাত্র-ছাত্রীর ভর্তিতে আকৃষ্ট করতো।
কিন্তু স্কুলে কোচিং না পড়া, বিজ্ঞান বিভাগে যোগ না দেয়া এবং বখাটেদের কটূক্তির প্রতিবাদ করায় প্রিন্সিপাল শামুসন্নাহারের রোষানলের শিকার হয়ছিলেন মাত্র ১৩ বছরের কিশোরী অধরা।
ঘটনাটি ২০২৩ সালের ২১ মার্চের। সেদিন স্কুলে গেলেও কোনো ক্লাস না থাকায় শিক্ষকদের অনুমতি নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে স্কুল সংলগ্ন উত্তরার ৪ নং সেক্টরের পার্কে ঘুরতে গিয়েছিল অধরা। বিষয়টি জানতে পেরে বিকেলে শামসুন্নাহার মোবাইলে কল করেন অধরার মাকে। এ সময় শামসুন্নাহার অধরার চরিত্র নিয়ে এমন সব অশ্রাব্য মন্তব্য করেন, যা লাউড করা মোবাইল ফোনে শুনতে পারেন অধরা। মায়ের ফোনে প্রিন্সিপালের এসব অশ্রাব্য মন্তব্য করার অপমান সইতে না পেরে কিছুক্ষণ পরই নিজ রুমে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে অধরা।
রবিউল বলেন, ঘটনার রাতেই পুলিশ প্রকৃত ঘটনা আড়াল করে তার একটি সাক্ষর নেয়, যা দিয়ে অপমৃত্যুর জিডি করা হয়। সেখানে রহস্যজনক কারণে এসআই পলাশ অধরার বিষয়ে মেন্টাল শব্দটি ব্যবহার করে। একদিন পর উত্তরা (পূর্ব) থানার তৎকালীন ওসি জহিরুল ইসলাম অন্যত্র বদলি হয়ে যান। এর পরদিন নতুন ওসি নাসির উদ্দিন যোগদান করেন। তিনি আমার দায়ের করা অভিযোগ মামলা আকারে গ্রহণের আশ্বাস দিয়েও দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করেন। পরে আদালতে একটি মামলা করি। (সিআর মামলা নং-৫৫৯/২০২৩, দ:বিধি ৩০৬/৩০২৭)। মামলাটি উত্তরা ডিবি পুলিশের একজন কর্মকর্তার পর বর্তমানে ডিবি উত্তরের এসআই মামুনের তদন্তাধীন।
স্পর্শকাতর মামলা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এসআই মামুন ইনকিলাবকে বলেন, প্রকাশ্যে এবং গোপনে তিনি মামলাটি গুরুত্বের সাথে তদন্ত করেছেন। এখন পর্যন্ত তদন্তে অধরার আত্মহত্যার পেছনে তার প্রিন্সপাল শামসুন্নাহারই একমাত্র দায়ী বলে নিশ্চিত হয়েছেন। অভিযুক্ত প্রিন্সিপাল শামসুন্নাহারই অধরাকে মানসিকভাবে পর্যুদস্ত করে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। তদন্ত কর্মকর্তা আরো বলেন, খুব শিগগিরই এ মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে পাঠানো হবে।
তবে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে প্রিন্সিপাল শামসুন্নাহার ইনকিলাবকে বলেন, অধরার মৃত্যুর খবর পেয়ে আমি পুলিশের সঙ্গেই ওই বাসায় যাই। আবার চলে আসি। অন্য কিছু আমার জানা নেই। ডিবিতে তদন্তাধীন মামলার বিষয়েও কিছু জানা নেই আমার।

 

Source link

Leave a Reply

Back to top button