মাগুরায় শিশু ধর্ষণের ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসছে সারাদেশ


মাগুরায় ধর্ষণের শিকার আট বছরের শিশুর চিকিৎসা চলছে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ)। তার ওপর পাশবিক নির্যাতনের ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসছে গোটা দেশ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও চলছে তীব্র প্রতিবাদ।

শনিবার (৮ মার্চ) মধ্যরাতে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গঠিত হয় ‘ধর্ষণবিরোধী মঞ্চ। ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে এ ঘটনায় জড়িতদের প্রকাশ্যে শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।

গত বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) মাগুরা শহরে ঘটনাটি ঘটে। বোনের শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া আট বছরের শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয় বলে মামলার এজাহারে অভিযোগ করেন তার মা। তিনি অভিযোগ করে বলেন, মেয়ের স্বামীর সহায়তায় তার বাবা (শ্বশুর) শিশুটিকে ধর্ষণ করেন। বিষয়টি মেয়ের শাশুড়ি ও ভাসুরও জানতেন। তারা ঘটনা ধামাচাপা দিতে শিশুটিকে হত্যাচেষ্টা চালান বলেও অভিযোগ আনা হয় এতে।

ঘটনার দিন অবস্থার অবনতি হলে ফরিদপুর মেডিকেল থেকে শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। শুক্রবার (৭ মার্চ) তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান খান বলেন, শিশুটির শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। পরে শনিবার বিকেল ৫টার দিকে তাকে সিএমএইচে নেওয়া হয়।

আরও পড়ুন:

শিশুটির এমন অবস্থার প্রতিবাদে মধ্যরাতে রাস্তায় নামেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা। ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করতে আলটিমেটাম দেন তারা। এসময়ের মধ্যে দাবি মানা না হলে রোববার (৯ মার্চ) রাতে ফের রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করবেন তারা। শনিবার (৮ মার্চ) দিনগত রাত আড়াইটার দিকে ছাত্রীদের পক্ষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা এ ঘোষণা দেন। এরপর তারা দুই ঘণ্টার বেশি সময় বিক্ষোভ সমাবেশ করে রাজু ভাস্কর্য ছেড়ে আবাসিক হলে ফিরে যান।

উমামা ফাতেমা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার নারীদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। পুলিশ-সেনাবাহিনীসহ কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছেন না। মাগুরায় আট বছরের শিশুকে ধর্ষণের মতো অমানবিক ও নৃশংস ঘটনার পরও এখনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ধর্ষককে আদালতে উপস্থাপন করেনি। বাধ্য হয়ে আমরা মধ্যরাতে রাস্তায় নেমে এসেছি।

আরও পড়ুন:

উমামা ফাতেমা আরও বলেন, আমাদের স্পষ্ট ঘোষণা, মাগুরায় শিশু ধর্ষণের ঘটনায় ধর্ষকসহ জড়িতদের অবিলম্বে আদালতে হাজির করতে হবে। আমরা ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিচ্ছি।

এসময় শিক্ষার্থীরা ‘জাস্টিস জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, ধর্ষকের ফাঁসি চাই’, ‘ধর্ষকের গদিতে আগুন জ্বালো একসাথে’, ‘এক দুই তিন চার, জাহাঙ্গীর গদি ছাড়’, ‘স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ চাই’, ‘জাহাঙ্গীর করে কী, খাই দাই ঘুমায় নাকি’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন। ধর্ষণ, যৌন হয়রানি ও নারী নিপীড়নের ঘটনার দ্রুত বিচার নিশ্চিতের দাবি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ধর্ষণবিরোধী মঞ্চ’ গঠন করা হয়।

ধর্ষকদের বিচার দাবিতে মধ্যরাতে উত্তাল হয়ে ওঠে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। মাগুরাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনার প্রতিবাদে এবং দোষীদের বিচারের দাবিতে মধ্যরাতে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। শনিবার দিনগত রাত ৩টার দিকে তারা এ বিক্ষোভ করেন।

শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের জব্বারের মোড় থেকে মিছিল শুরু করে উপাচার্যের বাসভবন, কৃষি কন্যা হল ও কে আর মার্কেট প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের হ্যালিপ্যাডে এসে শেষ করেন। এতে প্রায় আড়াইশ শিক্ষার্থী অংশ নেন। এসময় শিক্ষার্থীরা ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস, নো মোর রেপিস্ট’, ‘একটা একটা ধর্ষক ধর, ধইরা ধইরা বিচার কর’, ‘আমার বোনের কান্না আর না, আর না’, ‘আমার বোন ধর্ষিত কেন? ইন্টারিম জবাব চাই’, ‘ফাঁসি ফাঁসি, ফাঁসি চাই, ধর্ষকের ফাঁসি চাই’, ‘ধর্ষকের শাস্তি মৃত্যু, মৃত্য’, ‘ধর্ষকের ঠিকানা, এই বাংলাদেশে হবে না’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।

মেজবাউল হক নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘মাগুরায় আট বছরের শিশু বড় বোনের বাড়িতে বেড়াতে এসে বোনের শ্বশুরের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়। এ ধরনের বর্বরতা, নিষ্ঠুরতা-মধ্যযুগীয় কায়দায় একজন শিশুকে ধর্ষণ করা কল্পনাতীত।’

দেশের বিভিন্ন স্থানে শিশুসহ ক্রমাগত ধর্ষণের বিচারের দাবিতে মধ্যরাতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। শনিবার দিনগত রাত আড়াইটায় এই অবরোধ করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা।

এর আগে ২টায় বিভিন্ন হল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। পরে সেখান থেকে একটি মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীহলসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে এসে প্রায় ৩০ মিনিট অবরোধ করে রাখেন তারা। এসময় শিক্ষার্থীরা ‘ধর্ষকদের গদিতে, আগুন জ্বালো একসাথে’, ‘জাস্টিস জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘হলে হলে খবর দে, ধর্ষকদের কবর দে’, ‘চব্বিশ এর বাংলায়, ধর্ষকদের ঠাঁই নাই’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।

আরও পড়ুন:

ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও। ধর্ষক ও নিপীড়কদের সর্বোচ্চ শাস্তি কার্যকর করে নারীসহ জনসাধারণের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। শনিবার সন্ধ্যা ৭টায় ক্যাম্পাসের জোহা চত্বর থেকে শুরু হয়ে পশ্চিমপাড়া ছাত্রীদের হল প্রদক্ষিণ করে ফের জোহা চত্বরে এসে বিক্ষোভে মিলিত হন। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে নারীদের ওপর হওয়া দমন নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠেন শিক্ষার্থীরা।

বিক্ষোভ মিছিল চলাকালে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী নিশা আক্তার বলেন, ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন করা হচ্ছে অথচ এ দেশে কি না নারীরা অরক্ষিত। যেখানে আট বছরের শিশুকে ধর্ষণ করা হচ্ছে এবং ধর্ষকের কোনো শাস্তি হচ্ছে না। রাতে আমরা টিউশন করে ফিরতে গেলে রিকশাওয়ালা আমাদের দেখে ইভটিজিং করে, বাসে আমরা হয়রানির শিকার হই, আমরা আসলে কোথাও নিরাপদ না। আমরা চাই নারীরা জেগে উঠুক এবং আমাদের ভাইয়েরা আমাদের সাহায্য করবে যাতে আমরা অনিরাপদ বোধ না করি এবং আমরা চাই ধর্ষকের একমাত্র শাস্তি হোক মৃত্যুদণ্ড।’

এদিকে, এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও।

আরও পড়ুন:

মাগুরার ওই ঘটনায় মামলার কথা নিশ্চিত করে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আইয়ুব আলী জানান, দুপুরে নির্যাতনের শিকার শিশুটির মা মামলা করলে তা আমলে নেয় পুলিশ। এরইমধ্যে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলায় ওই শিশুর বোনের শ্বশুর হিটু শেখ, বোন জামাই সজিব শেখ, দেবর রাসুল শেখ ও শাশুড়ি জায়েদা খাতুনকে আসামি করা হয়েছে।

এসএনআর/এমএমএআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।



Source link

Exit mobile version