
মৌসুমি ফল তরমুজ কিনতে এসে দরকষাকষি করছিলেন জায়িদা খাতুন। পিস হিসেবে নিতে চাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু পিস হিসেবে বিক্রি করতে রাজি হচ্ছিলেন না বিক্রেতা। বলছিলেন কেজি হিসেবে নিতে হবে। প্রতিকেজির দাম ৯০ টাকা। এ হিসেবে সবচেয়ে কম ওজনের (৪ কেজি) তরমুজের এক পিসের দাম আসে ৩৬০ টাকা। ফলে তরমুজ না কিনেই বাড়ি ফেরেন জায়িদা খাতুন।
মঙ্গলবার (৪ মার্চ) দুপুরে ময়মনসিংহ শহরতলির ঐতিহ্যবাহী শম্ভুগঞ্জ বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বাজারে তরমুজের অভাব নেই। কোনো বিক্রেতা ৮০ টাকা পিস, আবার কোনো বিক্রেতা ৯০ টাকা পিস হিসেবে বিক্রি করছেন। তবে এই দামকে বেশি মনে করছেন ক্রেতারা। গুটি কয়েকজন পুষ্টিসমৃদ্ধ এই ফল কিনলেও অনেকে ইচ্ছা থাকলেও দামাদামি করে ফিরে যাচ্ছেন। এতে বিক্রিও কম হচ্ছে। তবুও পিস হিসেবে দাম কমিয়ে বিক্রি করছেন না বিক্রেতারা।
জায়িদা খাতুনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তার স্বামী জেলার ভালুকায় একটি কারখানায় চাকরি করেন। জায়িদা দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে শম্ভুগঞ্জ বাজারের কিছুটা দূরে রাঘবপুর এলাকায় থাকেন। স্বামীর পাঠানো টাকায় চলে সংসার। দেবরদের আলাদা সংসার। ফলে বাধ্য হয়ে জায়িদাকেই বাজার করতে হয়।
আরও পড়ুন:
জায়িদা খাতুন জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাচ্চাদের লাইগ্যা তরমুজ কিনবার আইছিলাম, লগে কিনবাম খেজুর। ভাবছিলাম, ২০০ ট্যাহার (টাকা) মধ্যে একটা তরমুজ কিনবার পারবাম। আইয়্যা দেহি ৯০ ট্যাহা কেজি দরে তরমুজ বেচতাছে। সবচাইতে ছোট্ট তরমুজের দামও ৩২০ ট্যাহা। পরে তরমুজ না কিন্যা এক কেজি খেজুর কিনছি।’
মো. জহির নামের আরেকজন ক্রেতা বলেন, ‘বাজারে একেক বিক্রেতা একেক দামে তরমুজ বিক্রি করছেন। ৮০ টাকা কেজি হিসেবে তরমুজ কিনলে মান ভালো হয় না। ৯০ টাকা কেজি হিসেবে কিনলেও ভেতরে সাদা থাকে। তারপরও বিক্রেতারা ন্যায্য দামে বিক্রি করছেন না।’
বাজারের পাশেই বসবাস করেন বয়োবৃদ্ধ আব্দুল হান্নান। ক্ষুব্ধ কণ্ঠে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নিয়মিত বাজার মনিটরিং করেন না। ফলে যে যার মতো দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালালে তরমুজের দাম সহনীয় পর্যায়ে আসবে। এতে পুষ্টিসমৃদ্ধ তরমুজ নিম্ন আয়ের মানুষও ইচ্ছামতো কিনে খেতে পারবেন।’
বেশি দামে তরমুজ বিক্রির কারণ সম্পর্কে বিক্রেতা রুহুল আমিন জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের কাছে পাইকাররা পিস হিসেবে বেশি দামে বিক্রি করছে। পিস হিসেবে কিছু লাভে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করলে ক্রেতারা দাম বেশি মনে করে। তাই কেজি দরে বিক্রি করছি। এতে তরমুজকের ক্রেতা কমেছে। কিন্তু আমাদের কিছু করার নেই।
আরও পড়ুন:
তরমুজ বিক্রি করছিলেন ফরহাদ মিয়া। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার এখানে সর্বনিম্ন ৪ কেজি থেকে সর্বোচ্চ ৬ কেজি ওজনের তরমুজ আছে। সবাই কেজি হিসেবে বিক্রি করায় আমিও কেজি হিসেবে বিক্রি করছি। ১৫ দিন আগে থেকেই তরমুজ বিক্রি শুরু করেছি। তবে ক্রেতার সংখ্যা খুবই কম। তারপরও দাম কমানো যাবে না। কারণ, প্রতিবছর এই সিজনে তরমুজ বিক্রি করার অপেক্ষায় থাকি আমরা। বছরে একবার অন্যান্য ফলের চেয়ে তরমুজ বিক্রি করে কিছুটা বেশি লাভ করা যায়।’
এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ময়মনসিংহের সহকারী পরিচালক আব্দুস সালাম বলেন, অভিযান চালিয়ে বিক্রেতাদের তরমুজ কেনার রসিদ চেক করা হবে। ক্রেতা ঠকানোর প্রমাণ মিললে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কামরুজ্জামান মিন্টু/এসআর/এমএস