ভারত থেকে আর কুকুর আমদানি নয়, স্বনির্ভর হচ্ছে বিজিবি


নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কুকুর প্রজনন ও প্রশিক্ষণ দেবে কে-৯ ইউনিট
বর্তমানে দেশের ৩০টি বিজিবি ব্যাটালিয়নে কুকুর আছে
সীমান্ত এলাকায় মাদক চোরাচালান ও বিস্ফোরক শনাক্তে কাজে লাগানো হয় কুকুরগুলো

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এখন থেকে আর প্রশিক্ষিত কুকুর আমদানির জন্য বিদেশিদের ওপর নির্ভর করবে না। বিজিবির নিজস্ব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং বিশেষায়িত কে-৯ ইউনিটে (ডগ স্কোয়াড) নিজস্ব কুকুর প্রজনন কার্যক্রম পরিচালনা করবে। প্রশিক্ষণও দেবে তারা।

এতদিন বিজিবির কে-৯ ইউনিট সীমান্তে নিরাপত্তা অনুসন্ধান অভিযানের জন্য বিভিন্ন জাতের প্রশিক্ষিত কুকুর ভারত থেকে আমদানি করা হতো।

২০১৫ সালে বিজিবির ডগ স্কোয়াড প্রতিষ্ঠার পর থেকে ৭৯টি কুকুর কেনা হয়, যার মধ্যে রয়েছে জার্মান শেফার্ড, ল্যাব্রাডর, গোল্ডেন রিট্রিভার এবং ভারতের রাজাপালায়ম জাতের কুকুর। প্রতিটি কুকুরের দাম ৩০ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকা।

শনিবার (১ মার্চ) উখিয়া ব্যাটালিয়ন, স্টেশন সদরদপ্তর, গার্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ও কে-৯ ইউনিট ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে উদ্বোধন করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। অনুষ্ঠানটি কক্সবাজার ব্যাটালিয়ন (৩৪ বিজিবি) প্রশিক্ষণ মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বিজিবি মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী এবং নবগঠিত ইউনিটগুলোর পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।

উদ্বোধন শেষে বিজিবির কে-৯ ইউনিট ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল একেএম মঞ্জুর এলাহী কুকুর আমদানির প্রসঙ্গ টেনে জাগো নিউজকে বলেন, ‘বর্তমানে, দেশের ৩০টি ব্যাটালিয়নে কুকুরগুলো মোতায়েন আছে। এগুলো প্রধানত আন্তর্জাতিক সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ পয়েন্ট এবং সীমান্ত এলাকায় মাদক চোরাচালান ও বিস্ফোরক শনাক্তকরণের কাজে ব্যবহার করা হয়। এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমে বিজিবি আরও স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে।’

আরও পড়ুন

এটা ছাড়া গার্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নও আলাদা ইউনিট হিসেবে কার্যক্রম শুরু করেছে। এই ব্যাটালিয়নের মূল তিনটি দায়িত্ব হবে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, অভ্যন্তরীণ ঘটনা ও দুর্ঘটনার তদন্ত এবং ভিআইপি ও ভিভিআইপি নিরাপত্তা ও প্রটোকল নিশ্চিত করা।

গার্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের পরিচালক মো. ইফতেখার হোসেন এই ব্যাটালিয়নের কার্যক্রম সম্পর্কে ব্যাখ্যা দেন। নতুনভাবে উদ্বোধন করা উখিয়া ব্যাটালিয়ন দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তের নিরাপত্তা রক্ষা এবং মানবপাচার ও মাদক চোরাচালান প্রতিরোধে কাজ করবে।

বর্তমানে দেশের ৩০টি ব্যাটালিয়নে কুকুরগুলো মোতায়েন আছে। এগুলো প্রধানত আন্তর্জাতিক সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ পয়েন্ট এবং সীমান্ত এলাকায় মাদক চোরাচালান ও বিস্ফোরক শনাক্তকরণের কাজে ব্যবহার করা হয়। এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমে বিজিবি আরও স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে।- লেফটেন্যান্ট কর্নেল একেএম মঞ্জুর এলাহী

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম জানান, ৬৪ বিজিবি (উখিয়া) ব্যাটালিয়নের পাশাপাশি মোট চারটি নতুন ব্যাটালিয়ন বিজিবিতে যুক্ত হয়েছে। এই সম্প্রসারণের মাধ্যমে বিজিবির সক্ষমতা কিছুটা বাড়ানো হয়েছে এবং আরও উন্নয়নের প্রচেষ্টা চলছে।

পাশাপাশি তিনি বিজিবির সক্ষমতা প্রতিবেশী দেশের তুলনায় বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, এই এলাকাটি মাদক চোরাচালানের অন্যতম প্রধান রুট, পাশাপাশি রোহিঙ্গা সমস্যাও রয়েছে। নতুন ব্যাটালিয়ন মাদক চোরাচালান রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। প্রয়োজনে ভবিষ্যতে আরও ব্যাটালিয়ন যুক্ত করা হবে, যাতে সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় এবং জনগণের শান্তি বজায় রাখা সম্ভব হয়।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নবগঠিত ইউনিটগুলোর কর্মকর্তা, জুনিয়র কমিশনড অফিসার, সৈনিক ও বেসামরিক কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, উখিয়া ব্যাটালিয়ন (৬৪ বিজিবি) প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সীমান্ত নিরাপত্তার ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি নজরদারি আরও জোরদার করা যাবে। একইসঙ্গে, এটি টেকনাফ ও উখিয়ায় রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ এবং মাদক চোরাচালান প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

নতুন ইউনিটগুলো যে কোনো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারে উল্লেখ করে তিনি আশ্বাস দেন, সব ধরনের সীমাবদ্ধতা দ্রুত সমাধানের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি সব সদস্যকে প্রাথমিক অসুবিধাগুলো কাটিয়ে ওঠার আহ্বান জানিয়ে বলেন, তারা যেন জাতীয় স্বার্থে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যায়। সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে নবগঠিত ইউনিটগুলো শিগগির অত্যন্ত দক্ষ ও দৃষ্টান্তমূলক সেবাদানকারী বাহিনীতে পরিণত হবে।

পতাকা উত্তোলনের পর, নবগঠিত উখিয়া ব্যাটালিয়ন, গার্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন এবং বিজিবি ডগ স্কোয়াড কে-৯ ইউনিটের সমন্বয়ে একটি সুসজ্জিত ও চৌকস দল মনোমুগ্ধকর প্যারেড প্রদর্শন করে।

টিটি/এএসএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।



Source link

Exit mobile version