Status

ব্যাংকের সুদহার নিয়ে গভর্নরের কড়া বার্তা চাটুকারিতা করে বিদেশ থেকে ঋণ নেব না :গভর্নর ড. মনসুর

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নও ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, আমাদের ব্যালেন্স অব পেমেন্ট (লেনদেনের ভারসাম্য) খুবই ইমপ্রুভ হয়েছে, বর্তমানে আমাদের ফরেন সেভিংস পজিশন খুবই স্ট্রং, আমরা বিদেশে থেকে চাটুকারিতা করে ঋণ আনব না।

গতকাল দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড আয়োজিত ব্যাংকখাতের পুনরুদ্ধার নিয়ে গোলটেবিল আলোচনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, আমাদের সরকারি ঋণ যে চক্রের মধ্যে রয়েছে, তাতে চাটুকারিতা করে বিদেশ থেকে টাকার আনার পক্ষে আমি নই। উই হ্যাভ ইসুজ ওয়ার্কিং অন আইএমএফ, তবে আমরা কম্প্রোমাইজ করব না। বাংলাদেশের বৈদেশিক আর্থিক অবস্থান এখন খুবই শক্তিশালী বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, আমাদের সরকারের বাজেট ঘাটতি মেটাতে রাজস্ব আদায়ই হলো একমাত্র সমাধান। রেভিনিউ বাড়াতে পাড়লে আমাদের আইএমএফ এর দিকে তাকাতে হবে না। আমি ইতোমধ্যে আইএমএফকে বলেছি আমাদের আইএমএফ’র টাকা দরকার নেই। তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরে আমাদের প্রবাসী আয় হবে প্রায় ২৯ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া রফতানি আয় যদি আমাদের ৫০ বিলিয়নও হয়— তারপরও আমাদের আমদানি বাবদ পরিশোধ করে ১০ বিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত থাকবে। বর্তমানে আমাদের সমস্যা হচ্ছে ব্যাংকের আমানতের প্রবৃদ্ধি বাড়াতে পারছি না। বেসরকারি খাতের সেভিংস বাড়ছে না। তবে আমরা যদি লেনদেনের ভারসাম্যকে ইমপ্রুভ করতে পারি, দ্যাট ইজ হেল্প আওয়ার সেভিং গ্রেস। দ্যাটস ইজ ওয়ান ওয়ে টু গ্রো সেভিংস। আমাদের ব্যালেন্স অব পেমেন্ট আগের সরকারের আমলে নেগেটিভ ছিল- এখন পজিটিভে চলে এসেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর বলেন, আমাদের ফরেন সেভিংস (বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়) বেড়েছে, যার কারণ আমাদের কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স (চলতি হিসাবের ভারসাম্য) ইতিবাচক রয়েছে। আর্থিকখাতের ইতিবাচকতার জন্য বিদেশ থেকে প্রবাসীদের আমানত আরও বাড়াতে হবে।

আমাদের বেসরকারিখাতের ওপর কাজ করতে হবে; বিশেষ করে ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্টের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে। সেটা হতে পারে স্টক মার্কেটে, হতে পারে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট (ওবিইউ) এর মাধ্যমে। ব্যাংকগুলো ওবিইউ এর মাধ্যমে ক্যাশ ফ্লো ইনজেক্ট করা, ডিপোজিট মোবিলাইজেশন করতে পারবে। আমাদের অনাবাসী বাংলাদেশী আছে, তাদের ডিপোজিট দেশে আনতে দেশের ব্যাংকগুলো তৎপরতা বাড়াতে হবে। এটা করতে পারলে আমাদের ব্যালেন্স অব পেমেন্টে আরও পজেটিভ হবে।

এদিকে ব্যবসায়ীরা চাপ দিলেই যে সুদহার কমিয়ে দেব তা হবে না। আগে মূল্যস্ফীতি কমবে তারপর পলিসি রেট, আস্তে আস্তে কমানো হবে। গভর্নর বলেন, আমি চাই পলিসি রেট বাস্তবিক অর্থে ইতিবাচক হোক। একেবারেই না হলে মূল্যস্ফীতি দ্রুত কমবে না। বাস্তবিক অর্থে ইতিবাচক হতে হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আমেরিকা, ভারতকে দেখুন সব জায়গাতে উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক নীতি সুদহার আছে। তো আমাকে ওইটাতে আনতে হবে। আমি এখনও ওইখানে যাইনি। তবে সুদহার কাঠামো ও মূল্যস্ফীতি সঠিক দিকে আগাচ্ছে। সময়মতো এটা অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আমাদের তাড়াহুড়োর দরকার নেই। আমাকে ব্যবসায়ীরা চাপ দিলেই সুদহার কমিয়ে দেব তা হবে না। মূল্যস্ফীতি, ট্রেজারি বিল, ইন্টারেস্ট পলিসি সব রেট কমবে, তখন আমি পলিসি রেট আস্তে আস্তে কমাবো, এর আগে না।

ব্যাংকিং খাত নিয়ে ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, আমরা দ্রুত এগিয়ে যেতে চাই এবং আর্থিক খাতকে নতুনভাবে গড়ে তুলতে চাই। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে শক্তিশালী করার কাজ জোরেশোরে চলছে। প্রধান উপদেষ্টা এ বিষয়ে যথেষ্ট আগ্রহী। এক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংকও আমাদের বিশ্বব্যাপী সেরা ব্যবস্থা বা নীতিমালা খুঁজে পেতে সহায়তা করছে। আন্তর্জাতিক মানদ- অনুযায়ী নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠন করা হচ্ছে। আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পুনর্গঠনে কাজ করছি। ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, আমরা চলতি বছরের জুলাই-আগস্টের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে চাই। আমরা এর ভিত মজবুত করতে চেষ্টা করব, তবে সব সংস্কার অন্তর্বর্তী সরকার করতে পারবে না। যখন পরবর্তী সরকার ক্ষমতায় আসবে, তখনও এই সংস্কার প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।

গভর্নর বলেন, গৃহিণী, স্ত্রী ও মেয়েকে ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে বসিয়ে দিচ্ছি। তাদের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা নেই। আমরা এসব চাই না। ব্যাংকের পরিচালক হতে ফিট অ্যান্ড প্রপার টেস্ট (অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতা পরীক্ষা) পর্যালোচনা করা হচ্ছে। যারা এখন পরিচালক আছেন, তারাসহ সবাইকে এই যাচাই-বাছাইয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। ব্যাংকের পরিচালক হওয়ার গুণাবলি থাকতে হবে। ব্যাংকের মালিকদেরও এই যাচাই-বাছাইয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। যোগ্যতা থাকলে মালিকেরা পরিচালক হবেন, যোগ্যতা না থাকলে হবেন না। সিটি ব্যাংক-এনএ’র মালিক কারা, তা কেউ জানেন না।

Source link

Leave a Reply

Back to top button