বেবিচকের হাবিবুরের বিরুদ্ধে রুল, চুক্তিতে নিয়োগ দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ


সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামরিক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকের সঙ্গে ৮১২ কোটি টাকা দুর্নীতির চারটি মামলার আসামি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) প্রধান প্রকৌশলী হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে কেন বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।

একই সঙ্গে হাবিবুর রহমানকে চাকরি থেকে কেন বরখাস্ত করা হবে না তা-ও জানতে চেয়েছেন আদালত। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। এ সংক্রান্ত বিষয়ে জারি করা রুলের সার্টিফাইট কপি মঙ্গলবার (৪ মার্চ) হাতে পেয়েছেন রিটকারী আইনজীবী।

এ বিষয়ে করা রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও মুবিনা আশরাফের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রুল জারি করেছিলেন।

হাইকোর্টের রুলের পরেও বেবিচকের প্রধান প্রকৌশলী হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টো তাকে প্রধান প্রকৌশলী পদে এক বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় বলে জানান রিটকারী আইনজীবী।

আরও পড়ুন

গত ৩ মার্চ বেবিচকের বোর্ড সভায় হাবিবুর রহমানের নিয়োগ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এক বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের প্রস্তাবনায় সই করেন বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবীর ভুঁইয়া। পরে তিনি নিজেই সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন। আগামী ২৩ মার্চ বেবিচকের বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী হাবিবুর রহমানের অবসরে যাওয়ার কথা রয়েছে।

বেবিচকের প্রধান প্রকৌশলী হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে ও তাকে বরখাস্ত করতে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. সোলায়মান তুষার গত ১০ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় ছয় আইনজীবীর পক্ষে রিটটি দায়ের করেন। রিটে বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বেবিচক চেয়ারম্যান, পরিচালক (প্রশাসন) ও প্রধান প্রকৌশলীকে বিবাদী করা হয়।

এর আগে বেবিচকের প্রধান প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ৬ ফেব্রুয়ারি সংশ্লিষ্টদের আইনী নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় রিট দায়ের করা হয়।

রিটকারীরা হলেন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. সোলায়মান তুষার, ব্যারিস্টার মাহদী জামান (বনি), অ্যাডভোকেট বায়েজীদ হোসাইন, অ্যাডভোকেট নাঈম সরদার, অ্যাডভোকেট মো. শাহেদ সিদ্দিকী ও অ্যাডভোকেট খায়রুল বাশার।

নোটিশে একদিনের মধ্যে বেবিচকের প্রধান প্রকৌশলীকে তার পদ থেকে সরাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছিল। অন্যথায় সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে রিট দায়েরসহ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছিল।

নোটিশে বলা হয়, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশের বিমানবন্দরগুলোতে শত শত কোটি টাকার দুর্নীতি ও লুটপাট হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন তাদের অনুসন্ধানে এ লুটপাটের সঙ্গে বেবিচকের প্রধান প্রকৌশলী হাবিবুর রহমানের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পায়। তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নয়নের নামে ৮১২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে হাবিবুরসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে চারটি মামলা দায়ের করে দুদক।

নোটিশে আরও বলা হয়, হাবিবুর রহমান প্রধান প্রকৌশলীর মতো পদে থাকলে স্বাভাবিকভাবেই তদন্ত কাজ ব্যাহত হবে। তিনি সাক্ষীদের প্রভাবিত করতে পারেন। মামলার গুরুত্বপূর্ণ আলামত ধ্বংস বা সরিয়ে ফেলতে পারেন। তিনি পদে থাকলে স্বার্থের দ্বন্দ্ব থাকাটাও স্বাভাবিক। তাই তাকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়াটা জরুরি। দুদক মহাপরিচালক আক্তার হোসেনের আশঙ্কা, হাবিবুর রহমান প্রধান প্রকৌশলীর পদে থাকলে তদন্ত কাজ বাধাগ্রস্ত বা প্রভাবিত হতে পারে।

নোটিশে বলা হয়, প্রধান প্রকৌশলী হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে দুদকে অনিয়ম-দুর্নীতির আরও একাধিক অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে। তার বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে দেশের সব বিমান ও স্থলবন্দরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ঘুসের টাকা ফেরত চেয়ে তার বিরুদ্ধে জিডি করেন এক ভুক্তভোগী। তারপরও তার বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

আরও পড়ুন

বেবিচকের বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের মামলায় এরই মধ্যে আসামি হয়েছেন- সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামরিক উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক বিমান সচিব মহিবুল হক, যুগ্মসচিব জনেন্দ্রনাথ সরকার, বেবিচকের সাবেক চেয়ারম্যান মফিদুর রহমান, সাবেক প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল মালেক ও বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান।

বেবিচকের আওতাধীন দেশের বিমানবন্দরগুলোর উন্নয়নের নামে লুটপাট হয়েছে। এরই মধ্যে থার্ড টার্মিনালসহ দেশের আটটি বিমানবন্দরে ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার প্রকল্পে দুর্নীতির তদন্ত করছে দুদক। ৯০০ কোটি টাকার দুর্নীতি নিয়ে মামলা হয়েছে।

রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার সোলায়মান তুষার বলেন, বেবিচকের প্রধান প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে হাইকোর্ট রুল জারি করেছেন। বিবাদীপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন, এমনটাই প্রত্যাশা করছি।

এফএইচ/এমকেআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।



Source link

Exit mobile version