বুক চিতিয়েই লড়লো আফগানিস্তান

আগের ম্যাচে রূপকথার এক জয়ে শক্তিশালী ইংল্যান্ডকে বিদায় করে সেমিফাইনালের স্বপ্ন চাঙ্গা করেছে আফগানিস্তান। প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলতে এসে এমন বীরত্ব গাঁথার পর অনেকেই তাদের দেখছেন আসরের শেষ চারে। তাদের সেই স্বপ্নের সামনে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে অপ্রতিরোধ্য অস্ট্রেলিয়া। তাদের হারাতে পারলেই ইতিহাস গড়া হয়ে যাবে যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশটির। জয় ছাড়া বিকল্প নেই, সেমিফাইনালে ওঠার সেই স্বপ্ন সঙ্গী করে গতকাল জোড়া হাফসেঞ্চুরি আর দুটি পঞ্চাশোর্ধ্ব জুটিতে লড়াকু পুঁজিই পেয়েছে হাশমতউল্লাহ শহীদির দল। তিনে নামা সেদিকউল্লাহ অটল শুরুতে দলকে টেনে থামলেন সেঞ্চুরির খুব কাছে গিয়ে, দুইশর নিচে সপ্তম উইকেটের পতনের পরে আফগানদের এগিয়ে নিলেন আজমতউল্লাহ ওমরজাই। লক্ষ্য তাড়ায় নেমে অস্ট্রেলিয়াও দিচ্ছিলো মোক্ষম জবাব। রিপোর্টটি লেখা পর্যন্ত (রাত ১০টা) ১২.৫ ওভারে মাত্র এক উইকেট খুইয়ে ১০৯ রান তুলে ফেলেছে অজিরা। তবে ঠিক তখনই বাধ সাধে বৃষ্টি, থমকে যায় খেলা।
এর আগে লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে ‘বি’ গ্রুপের ম্যাচে শেষ বল পর্যন্ত খেলে ২৭৩ রানে অলআউট হয়েছে আফগানিস্তান। অটল ৯৫ বলে ৮৫ রানের ইনিংসে মারেন ৬ চার ও ৩ ছক্কা। ৫ ছক্কার সঙ্গে ১ চারে ৬৩ বলে ৬৭ করে থামেন ওমরজাই। আফগানিস্তানের আর কোনো ব্যাটার ত্রিশোর্ধ্ব রান করতে পারেননি। অতিরিক্তের সুবাদে তারা পেয়েছে ৩৭ রান। ৯ ওভারে ৪৭ রানে ৩ উইকেট নিয়ে বল হাতে অজিদের সেরা পারফর্মার পেসার বেন ডোয়ারশিস। দুটি করে উইকেট পান আরেক পেসার স্পেন্সার জনসন ও লেগ স্পিনার অ্যাডাম জ্যাম্পা। গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ও ন্যাথান এলিসের ঝুলিতে ঢোকে একটি করে উইকেট।
এদিন টস জিতে ব্যাট করতে নেমে চ্যালেঞ্জিং কন্ডিশনের মুখোমুখি হয় আফগানিস্তান। মেঘলা আকাশ ও ফ্লাডলাইটের নিচে মুভমেন্ট পান অস্ট্রেলিয়ার পেসাররা। প্রথম ওভারেই ইনসুইং ইয়র্কারে রহমানউল্লাহ গুরবাজকে ০ রানে বোল্ড করেন জনসন। স্বস্তিতে না থাকলেও আর কোনো উইকেট না হারিয়ে ৫৪ রানে পাওয়ারপ্লে শেষ করে আফগানরা। মাঝেমধ্যে সুইং নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে ওয়াইড দেয় অজিরা। অতিরিক্ত খাতেই প্রথম ১০ ওভারে আফগানিস্তান পেয়ে যায় ১৭ রান। কঠিন সময় কাটিয়ে ওঠা ইব্রাহিম জাদরান এরপর তার উইকেট ¯্রফে বিলিয়েই দেন। জ্যাম্পার বেশ বাইরের বল তাড়া করে পয়েন্টে অনায়াস ক্যাচ দেন তিনি। ২৮ বলে ২ চারে ইব্রাহিম ফেরেন ২২ রান করে। এরপর রহমত শাহ এসে ২১ বলে ১২ রানে আউট হয়ে যান। ৯১ রানে তৃতীয় উইকেট হারিয়ে ফেলে আফগানরা।
অটল একপ্রান্তে স্বাচ্ছন্দ্যে খেলে ফিফটি পূর্ণ করেন ৬৪ বলে। অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ অবশ্য অন্যপ্রান্তে খোলসে আটকে যান। তার মন্থর ব্যাটিং পুষিয়ে দিতে অটল আগ্রাসী মনোভাবে খেলতে থাকেন। বাঁহাতি এই ব্যাটারকে ৭৪ রানে ফিরতে হতো প্যাভিলিয়নে। তবে এলিসের বলে এলবিডব্লিউ হয়েও বেঁচে যান অস্ট্রেলিয়া রিভিউ নেয়নি বলে। কিছুক্ষণ পরই অবশ্য জনসনের বলে কভারের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফিরেন অটল। ১৫৯ রানে চতুর্থ উইকেট তখন হারায় আফগানিস্তান। শহিদির ভোগান্তিময় ইনিংসের শেষ হয় ৪৯ বলে ২০ রানে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে মোহাম্মদ নবি রানআউট হয়ে ফিরে যান মাত্র ১ রানে। জশ ইংলিসের হাত থেকে বল ফসকে গেলে রান নিতে বের হন নবি। তিনি ক্রিজে ফেরার আগেই অজি উইকেটরক্ষকের থ্রোতে স্টাম্প ভেঙে দেন বোলার জনসন।
এক অঙ্কে গুলবদিন নাইবও আউট হয়ে গেলে ১৯৯ রানেই ৭ উইকেট চলে যায় আফগানিস্তানের। এলিসের বলে পুল করতে গিয়ে ডানহাতি এই ব্যাটার ক্যাচ দেন কিপারের হাতে। এরপর ওমরজাই ব্যাট হাতে আলো ছড়ান। প্রথমে রশিদ খানের সঙ্গে ৩৩ বলে ৩৬ ও পরে নুর আহমেদের সঙ্গে ২৫ বলে ৩৭ রানের জুটি গড়েন তিনি। ১৯ বলে ২ চারে ১৭ রানের ক্যামিও খেলে আউট হন রশিদ। একা ইনিংস এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন ওমরজাই। তিনি নিজের ফিফটি পূর্ণ করেন ৫৪ বলে। শেষমেশ ডোয়ারশিসের বলে ডিপ কাভারে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন ৫০তম ওভারের চতুর্থ বলে। ইনিংসের শেষ বলে নুর উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিলে অলআউট হয় আফগানরা।
বল হাতে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে বেন ডও’র্সহুইস নেন সর্বোচ্চ ৩ উইকেট, জোড়া শিকার অ্যাডাম জাম্পা ও স্পেন্সার জনসনের। অপর দুটি ভাগাভাগি করে নিয়েছেন নাথান ইলিস ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েলরা।