বিএমইটিতে তুঘলকি কাণ্ড বিনা নোটিশে ম্যানুয়াল পদ্ধতির ছাড়পত্র বন্ধ

বিএমইটিতে এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তাদের ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগে বহির্গমন ছাড়পত্র ইস্যু কার্যক্রম মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। বিএমইটিতে কতিপয় অসাধু রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক প্রতিনিধিদের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি পাওয়ায় বৈধ বহির্গমন ছাড়পত্রের ফাইল গত এক সপ্তাহেও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। বিএমইটির ইমিগ্রেশন বিভাগের অসাধু কর্মকর্তাদের ঘুষ না দিলে কোনো ফাইল নড়াচড়া করছে না বলেও একাধিক ভুক্তভোগী অভিযোগ তুলেছেন। বিএমইটির ডিজি সালেহ আহমেদ মোজাফফরের চরম উদাসীনতা এবং অদূরদর্শিতার দরুণ হঠাৎ মঙ্গলবার বিনা নোটিশে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে বহির্গমন ছাড়পত্র ইস্যুর ফাইল জমা নেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে হাজার হাজার সৌদিগামী কর্মী বহির্গমন ছাড়পত্র ইস্যু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েন।
বিএমইটিতে আবারও সিন্ডিকেট চক্রের আনাগোনা বাড়ছে। পরিস্থিতি এমন দিকে গড়াচ্ছে যে এসব দেখার কেউ নেই।আজ বুধবারও ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে বহির্গমন ছাড়পত্র ইস্যুর ফাইল জমা নেওয়া হয়নি। এতে গত দু’দিনে প্রায় ১০ হাজার সৌদী গমনেচ্ছু কর্মীর বহির্গমন ছাড়পত্র ইস্যু কার্যক্রম আটকা পড়েছে। এতে সৌদিগামী অনেক কর্মীর বিমানের টিকিট বাতিল হচ্ছে। বিএমইটিতে আগত বায়রার সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে গতকাল বুধবার ইনকিলাবকে বলেন, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের ব্যক্তিগত সহকারী সরওয়ার আলমের যোগসাজশে বিএমইটির পরিচালক বহির্গমন মামুন মিয়া বিভিন্ন নিয়ম চালু করে বহির্গমন ছাড়পত্র ইস্যুতে বাধার সৃষ্টি করেন। নানা শর্তের কারণে বিএমইটি থেকে বহির্গমন ছাড়পত্রের কৃত্রিম জটিলতার সৃষ্টি করে ১৫ হাজার টাকা থেকে ২০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে ছাড়পত্র ইস্যু করা হয়। এতে শত শত রিক্রুটিং এজেন্সি সৌদী গমনেচ্ছু কর্মীর ছাড়পত্র যথাসময়ে না পেয়ে বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়।
বিএমইটির এসব তুঘলকি কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ এবং বহির্গমন ছাড়পত্র ইস্যুর বিভাগের অসাধু কর্মকর্তাদের ঘুষ বাণিজ্য বন্ধ এবং পরিচালক (ইমিগ্রেশন) মামুন মিয়ার দ্রুত অপসারণের দাবিতে আজ দুপুর ১২টার দিকে বায়রা ও রিক্রুটিং এজেন্সির শত শত মালিক প্রতিনিধি বিএমইটির ডিজির কার্যালয় ঘেরাও করে বিভিন্ন শ্লোগান দেন। বায়রার সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মো. ফখরুল ইসলামের নেতৃত্বে বায়রার নেতৃবৃন্দ বিএমইটির ডিজি সালেহ আহমেদ মোজাফফরের সাথে সৃষ্ট সমস্যা দ্রুত নিরসনের লক্ষ্যে দীর্ঘ ৪ ঘণ্টা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সৌদী আরবসহ বিভিন্ন দেশে কর্মী দ্রুত পাঠানোর ক্ষেত্রে বিএমটি ক্লিয়ারেন্স পূর্বের ন্যায় সম্পন্ন করার জন্য দাবি উত্থাপন করা হয়।
এ সময়ে বায়রা নেতৃবৃন্দ বহির্গমনের পরিচালক মামুন মিয়াসহ অসাধু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের দ্রুত অপসারণের জোর দাবি জানান। বৈঠকে বিএমইটির ডিজি পরিচালক মামুন মিয়ার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। এ সময়ে বিএমইটির এডিজি আব্দুল হাই এবং প্রবাসী উপদেষ্টার ব্যক্তিগত সহকারী সরওয়ার আলম উপস্থিত ছিলেন। বায়রার পক্ষে আরও উপস্থিত ছিলেন মো. মোজাম্মেল হক, রেহানা পারভীন, হক জহুরুল জো, জাহাঙ্গীর আলম, মইনুদ্দিন তিতাস, মাহবুবুল করিম সিদ্দিকী জাফর, আজাদুর রহমান। বায়রার শীর্ষ নেতা মো. ফখরুল ইসলাম উপস্থিত গণমাধ্যমকে বলেন, বিএমইটির ইমিগ্রেশন বিভাগের পরিচালক মামুন মিয়া ঘুষ ছাড়া কোনো ফাইল ছাড়েন না। আমরা বিএমইটির দুর্নীতিবাজ পরিচালক মামুন মিয়ার দ্রুত অপসারণ এবং পূর্বের নিয়মেই বহির্গমন ছাড়পত্র ইস্যু কার্যক্রম চালু রাখার দাবি জানাচ্ছি। তিনি জনশক্তি রফতানির স্বার্থে বিএমইটির বহির্গমন ছাড়পত্র অনলাইন ও অফলাইনে জমা নেওয়ার বিধি চলমান রাখার দাবি জানান। তিনি বিএমইটিকে সিন্ডিকেটমুক্ত ও দুর্নীতিমুক্ত বহির্গমন ছাড়পত্র বিভাগ প্রতিষ্ঠার দাবি জানান।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, সৌদী আরবে ১ থেকে ২৪ পর্যন্ত দূতাবাসের সত্যায়ন ব্যতিরেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সম্পন্ন হওয়া সকল ওকালা এবং ভিসার বিএমইটির ক্লিয়ারেন্স পূর্বের ন্যায় প্রদান করা হবে। বিএমইটির ক্লিয়ারেন্স অনলাইন এবং অফলাইন উভয়ভাবে আবেদন করা যাবে। ইন্ডিভিজুয়াল বিএমইটি ক্লিয়ারেন্স লাইসেন্সের মাধ্যমেও করা যাবে। বিএমইটির ক্লিয়ারেন্সের যাবতীয় খোঁজখবর নেওয়ার জন্য হেল্প ডেস্ক করা হবে।
বহির্গমন পরিচালক মামুন মিয়ার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিএমইটির অনুবাদ দ্রুত করার জন্য জনবল বৃদ্ধি করা হবে। এদিকে, ভুক্তভোগী পীস ওভারসীজের স্বত্বাধিকারী নোভেল ক্ষোভ প্রকাশ করে ইনকিলাবকে বলেন, বিএমইটির ইমিগ্রেশন বিভাগে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি সৌদিগামী কর্মীদের বহির্গমনের ফাইল জমা দিয়েও কোনো সাড়া পাচ্ছি না। ইমিগ্রেশন বিভাগের জনমুক্তি জরিপ কর্মকর্তা তানিয়া তাসলিম বিকাশ, নগদ এবং ক্যাশে ঘুষের টাকা না পেলে সৌদিগামী কর্মীদের বহির্গমন ছাড়পত্রের ফাইল ছাড়ে না। দুর্নীতিবাজ তানিয়া তাসলিমের চাহিদানুযায়ী ঘুষ না দিতে পারায় গত ২ মার্চ সৌদিগামী ৪ কর্মীর বিমানের টিকিট বাতিল হয়েছে। এতে প্রতিটি টিকিট বাবদ ৮০ হাজার টাকা করে গচ্চা দিতে হয়েছে। এ ব্যাপারে আজ রাতে ইমিগ্রেশনের তানিয়া তাসলিমের মোবাইলে একাধিক বার যোগাযোগ করা হলে তিনি মোবাইল ধরেননি। এছাড়া একই বিভাগের সৈয়দা মিমি পারভীন ঘুষ না খেলেও কর্মীর বহির্গমন ফাইল কয়েক দিন পর্যন্ত আটকে রেখে চরম হয়রানি করছে।
ইমিগ্রেশন বিভাগের পরিচালক মামুন মিয়ার পিএ নজরুল ইসলাম বহির্গমন ছাড়পত্রের ফাইল আটকে কর্মী প্রতি মোটা অঙ্কের ঘুষ দেদারসে হাতিয়ে নিচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠছে। শিখা টেড ইন্টার ন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী জাহাঙ্গীর আলম আজ রাতে ইনকিলাবকে জানান, সৌদিগামী কর্মীদের বহির্গমন ছাড়পত্র ইস্যুতে নতুন নতুন নিয়ম চালু করে শ্রমবাজার সম্প্রসারণে ভয়াবহ বাধার সৃষ্টি করা হচ্ছে। এতে জনশক্তি রফতানিতে বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গতকাল বায়রার নেতৃবৃন্দ বিএমইটির ডিজির সাথে দীর্ঘ বৈঠকে একটা ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবারের মধ্যেই সৃষ্ট সংকট নিরসনের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি জনশক্তি রফতানি এবং রেমিট্যান্স প্রবাহের গতি বৃদ্ধির লক্ষ্যে কতিপয় নতুন নতুন শর্ত প্রত্যাহার করে সৌদীর শ্রমবাজার সহজীকরণের বাস্তবমুখী উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান।