বাবুগঞ্জের আখের গুড়ের চাহিদা বরিশালজুড়ে

রমজান এলেই ব্যস্ততা বেড়ে যায় বরিশালের বাবুগঞ্জের আখচাষিদের। ব্যতিক্রম হয়নি এবারও। ক্ষেতেই ভেজালমুক্ত গুড় তৈরি করা হয় বলে এখানকার গুড়ের চাহিদা বেশি। চাহিদা অনুযায়ী গুড় সরবরাহ দিতে দিনভর কাজ করে যাচ্ছেন চাষিরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আখের গুড় তৈরি হয় বাবুগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। সেখানে ক্ষেতের পাশেই স্থানীয় পদ্ধতিতে উৎপাদন করা হয় গুড়। গুড় উৎপাদন ও বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা।
উপজেলার চাঁদপাশা ইউনিয়নের বায়লাখালি গ্ৰামের বাসিন্দা আব্দুল হাকিম জানান, তিনি দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে নিজ হাতে ভেজালমুক্ত আখের গুড় তৈরি করে বাজারে বিক্রি করছেন। বিশেষ করে রমজান মাসের আগে এ গুড়ের চাহিদা অন্যান্য সময়ের চেয়ে অনেক বেশি থাকে। তাই রমজান মাসকে ঘিরে তাদের এখন দম ফেলার ফুরসত নেই।
সম্পূর্ণ ভেজালমুক্ত গুড় হওয়ায় তাদের তৈরি করা গুড়ের চাহিদা অনেক বেশি থাকে জানিয়ে আব্দুল হাকিম বলেন, গতবছর প্রায় তিন লাখ টাকার ভেজালমুক্ত গুড় বিক্রি করা হয়েছে। এবারও প্রতিকেজি ভেজালমুক্ত আখের রসের তৈরি গুড় ২০০-২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে।
গুড় তৈরির প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রথমে সরাসরি ক্ষেত থেকে আখ সংগ্রহ করে মাড়াই মেশিনে দিয়ে রস সংগ্রহ করা হয়। পরে রস বিশেষ এক বালতিতে করে বড় পাত্রে ঢেলে মাটির চুলায় জ্বাল দেওয়া হয়। টানা ৪০-৪৫ মিনিট জ্বাল দিয়ে তৈরি করা হয় গুড়। একেক পাত্রে ৩০-৩৫ কেজির মতো গুড় তৈরি করা হয়।
আরেক আখচাষি সুলতান খা বলেন, ‘আমাদের তৈরি গুড় ভেজালমুক্ত হওয়ায় এখন অনেকেই সরাসরি এখানে এসে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের কাছেও একটা বড় প্রাপ্তির যে, ক্রেতাদের ভেজালমুক্ত আখের গুড় খাওয়াতে পারছি। এক্ষেত্রে লাভের চেয়ে প্রাপ্তির বিষয়টি অনেক।’
সরাসরি ক্ষেত থেকে গুড় কিনতে আসা নাসির উদ্দিন বলেন, ‘এ উপজেলায় আখের রস দিয়ে গুড় তৈরির ঐতিহ্য প্রায় শত বছরের পুরোনো। তাছাড়া বাবা-দাদার আমল থেকেই উপজেলার বিভিন্ন স্থানে আখের রস থেকে ভেজালমুক্ত গুড় তৈরির বিষয়টি দেখে আসছি। সবচেয়ে বড় কথা হলো এখানে তৈরি গুড়ে কোনো ধরনের হাইড্রোজ বা কেমিক্যাল দেওয়া হয় না। গুড় তৈরির সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া চোখের সামনে দেখে কেনা যায়।
আরেক ক্রেতা আসাদ বলেন, মাটির চুলার আগুনের তাপে তৈরি গুড় খুব সুস্বাদু হয় এবং এখানে গুড় তৈরির পুরো কাজটি প্রাকৃতিক নিয়মে হয়।
এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বরিশালের (খামারবাড়ি) উপ-পরিচালক মুরাদুল হাসান বলেন, আমরা আখচাষিদের ক্ষেতের মধ্যেই ভেজালমুক্ত গুড় উৎপাদনের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। তাদের কয়েকজনকে ডিজেল ইঞ্জিনের মাড়াই মেশিন দেওয়া হয়েছে। তারা এখন বাণিজ্যিকভাবে সফল হয়েছেন। আশা করি আগামী বছর আখ উৎপাদনে বিপ্লব ঘটবে এ অঞ্চলে।
শাওন খান/এসআর/জেআইএম