Facebook Bio Status

বাবার কথা রাখতে পেরেছিলেন আজম খান


বাংলা পপ গান গেয়ে এদেশের সাধারণ মানুষের মন জয় করা যে সময় বেশ কঠিন ছিল, সেই সময়ে দুঃসাধ্য কাজটি করে এদেশের সংগীতপ্রেমীদের ভালোবাসা পেয়েছিলেন আজ খান। শুধু তাই নয়, তিনি এ ঘরানার গান গেয়ে ‘পপ সম্রাট’ উপাধি পেয়েছিলেন। সবাই তাকে গুরু বলেও সম্বোধন করতেন। বাংলা পপ গানের এ দিকপাল কিংবদন্তিতুল্য গায়ক আজম খানের আজ (২৮ ফেব্রুয়ারি) জন্মদিন। ১৯৫০ সালের এমন দিনে তিনি পৃথিবীতে এসেছিলেন।

গান গেয়ে সব শ্রেণির শ্রোতাদের মাত করা পপ তারকা আজম খান রাজধানীর আজিমপুরের ১০ নম্বর কলোনিতে জন্মেছিলেন। তার শৈশব কেটেছে আজিমপুর ও কমলাপুরে। শৈশব-কৈশোরের দিনগুলো পেরোনোর সময় ভাষা আন্দোলনের উত্তাপ তার গায়ে লেগেছিল। এ বিষয়টি শিল্পীর গানের অঙ্গনে আসার ব্যাপারে প্রভাব রেখেছে। সেই বয়সে ঘরের জানালার বাইরে দেখেছেন মায়ের ভাষা বাংলার জন্য মানুষের সুতীব্র দাবির জনসমাবেশ। সেই সময়ে ‘ওরা আমার মুখের ভাষা কাইড়া নিতে চায়’ এমন গান তাকে আলোড়িত করেছে। স্কুলের পিটিতে সবার সঙ্গে গান পরিবেশন করতেন। এসব গান মনে রাখতে পারতেন আজম খান।

বাবার কথা রাখতে পেরেছিলেন আজম খান

অসাধারণ প্রতিভাধর মানুষ ছিলেন আজম খান। একবার শোনার পর যে গান ভালো লাগতে সেটাই কয়েকবার শুনতেন। এভাবে প্রিয় গানগুলো পরে হুবহু গাইতে পারতেন। এক সাক্ষাৎকারে আজম খান বলেছিলেন, ‘আমি গান শুনে হুবহু গাইতে পারতাম। অনেকের কাছে এটা বিস্ময়কর ছিল। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গান, আবদুল আলিম, শ্যামলের গান তাদের মতো করেই গাইতাম। পরে মহল্লার বন্ধু-সমবয়সীদের সঙ্গে আড্ডায় বানিয়ে গান গাইতাম। এভাবেই একদিন গানের দিকে ঝুঁকে পড়ি। গানের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা আমার ছিল না।’

আজম খান ক্লাস নাইনের ছাত্রাবস্থায় অনুধাবন করতে পেরেছিলেন পাকিস্তানি শাসকরা বিভিন্নভাবে দেশের মানুষকে অনেক নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে। এমন অনুভব শক্তি আজম খানকে বিপ্লবী চিন্তার মানুষে পরিণত করে। সেই সময় তিনি জানতে পারেন ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠীর কথা। গণসংগীতের চর্চা করতেন এই শিল্পীগোষ্ঠীর সদস্যরা। বন্ধুদের সঙ্গে এই শিল্পীগোষ্ঠী সংগীত পরিবেশন করতে থাকেন আজম খান।

বাবার কথা রাখতে পেরেছিলেন আজম খান

ধীরে ধীরে মানুষের প্রশংসা পাওয়ার পর এই শিল্পীগোষ্ঠী ঢাকার বাইরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গাওয়া শুরু করেন। তাদের সাধারণ মানুষের জীবনের অভাব ও বঞ্চনার কথা তুলে ধরা হতো গানে গানে। প্রতিবাদী গান গাওয়ার জন্য পুলিশের লাঠির বাড়িও খেয়েছেন আজম খান। গণ–আন্দোলনের সময়গুলোতেও গান করে গেছেন আজম খান।

আজম খান একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি নিয়ে তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘দেখতে দেখতে দেশে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলো। পাকিস্তানি আর্মিদের গাড়ি দেখে দেওয়াল টপকে একবার আজিমপুর আবার কমলাপুর, এভাবে চলছিল। দেশের মানুষকে নির্বিচারে হত্যা শুরু করে পাকিস্তানিরা। তখন মনে হলো মরছিই যখন, মেরেই মরব।’

আজম খান বন্ধুদের সঙ্গে পরিকল্পনা করে যুদ্ধে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। যে করেই হোক না কেন, দেশ স্বাধীন করতে হবে। একদিন সকালে মাকে বললেন, ‘আমি যুদ্ধে যেতে চাই।’ মা কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললেন, ‘তোর বাবাকে বল।’ তার বাবা ছিলেন গম্ভীর প্রকৃতির মানুষ। আজম খান বাবাকে ভয় পেতেন।

বাবার কথা রাখতে পেরেছিলেন আজম খান

কিন্তু মাতৃভূতিকে শত্রুমুক্ত করার স্বপ্ন যে মানুষ দেখতে পারে তাকে তো কোনো ভয় আকটাতে পারে না। সাহস সঞ্চয় করে বাবার কাছে যুদ্ধে যাওয়ার অনুমতি প্রার্থনার জন্য যান। তারা এ কথা শুনে কিছু সময় চুপ করে থাকেন। এরপর বলেন, ‘যুদ্ধে যাবি যা, কিন্তু দেশ স্বাধীন করেই তবে ঘরে ফিরবি।’এরপর আর ঠেকায় কে। বাবাকে সালাম করে দুই বন্ধুকে নিয়ে ভারতে ট্রেনিংয়ের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন আজম খান। সত্যিই বাবার কথা রাখতে পেরেছিলেন। দেশ স্বাধীন করেই ঘরে ফিরেছিলেন আজম খানরা।

আজম খানের গাওয়া অনেক জনপ্রিয় গান এখনো মানুষের মুখে মুখে ফেরে। তার গাওয়া জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘এত সুন্দর দুনিয়ায়’, ‘অভিমানী’, ‘অনামিকা’, ‘পাপড়ি’, ‘আলাল ও দুলাল’, ‘আসি আসি বলে তুমি আর এলে না’, ‘আমি যারে চাইরে’, ‘রেললাইনের ওই বস্তিতে’, ‘হাইকোর্টের মাজারে’, ‘জ্বালা জ্বালা’, ‘ও চাঁদ সুন্দর’, ‘বাধা দিয়ো না’, ‘ও রে সালেকা ও রে মালেকা’ও ‘জীবনে কিছু পাব না রে’।

সব সময় আনন্দে থাকতে পছন্দ করতেন আজম খান। সদাহাস্য এ মানুষটি মরণব্যাধি ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করে মৃত্যুর কাছে পরাজিত হন। ২০১১ সালের ৫ জুন এ গায়ক অসংখ্য ভক্ত-অনুরাগীকে শোক সাগরে ভাসিয়ে অনন্তের পথে পাড়ি জমান।

এমএমএফ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।



Source link

Leave a Reply

Back to top button