বাউফলে কাজ ফেলে ঠিকাদার লাপাত্তা

পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার মদনপুরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একটি পাঁচতলা ভবনের কাজ অসমাপ্ত রেখেই লাপাত্তা হয়ে গেছেন ঠিকাদার। তিন বছর ধরে ভবনটির কাজের কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় শ্রেণির সংকটের অভাবে ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান করছেন শিক্ষার্থীরা। এতে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম। শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে ভবন নির্মাণকাজ শেষ করার জোর দাবি জানিয়েছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা।
জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৫তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর। এতে ব্যয় ধরা হয় ৪ কোটি ১২ লাখ ৮৮ হাজার ৬৮১ টাকা। দরপত্রে কাজটি পায় বরিশালের ‘মের্সাস রূপালী কনস্ট্রাকশন’ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০২০ সালের ৫ জানুয়ারি ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেয়া হয়। চুক্তি অনুযায়ী ২০২১ সালের ১২ জুলাই কাজ শেষ করার কথা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখ যায়, পাঁচ তলা ভবনের তিন তলা পর্যন্ত ছাদ ঢালাইয়ের কাজ শেষ হলেও চারপাশে কোনো নিরাপত্তা দেয়াল নেই। ভবনের চারপাশে বের হয়ে আছে ছাদের রড। শিক্ষার্থীরা এই পরিবশেইে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান করছেন।
বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, পুরাতন টিনশেড ভবন ভেঙে নতুন ভবনের কাজ শুরু হয়। অর্ধেক কাজ ফেলে রেখে ঠিকাদার লাপাত্তা হয়ে যায়। বিকল্প শ্রেণি কক্ষ না থাকায় নির্মাণাধীন ভবনে ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান করানো হচ্ছে। চারপাশের নিরাপত্তা দেয়ালনা থাকায় বর্ষা মৌসুমে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হয়।
৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. জিয়াদ হোসেন বলেন, ভবনের চারপাশে কোনো দেয়াল না থাকায় আমাদের ক্লাস করতে খুব ভয় হয়। এছাড়াও একটু জোরে বৃষ্টি হলে আমরা ভিজে যাই।
১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী উম্মে কুলসুম লিয়া বলেন, পুরাতন ভবন ভাঙার সময়ে শৌচাগারও ভেঙে ফেলা হয়েছে। নতুন ভবনে শৌচাগারের কাজ শেষ হয়নি। এতে আমরা মেয়েরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. গোলাম মস্তফা বলেন, ‘তিন বছর ধরে কাজ বন্ধ। ঠিকাদারের কোনো খোঁজ নেই। বিষয়টি লিখিত ভাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে একাধিক বার জানিয়েছি। শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। ভবন নির্মাণ বন্ধ থাকায় শ্রেণি কক্ষের জন্য যে আসবাবপত্র দেয়া হয়েছে তাও এখন নষ্ট হওয়ার পথে। সবচেয়ে সমস্যা হয় বর্ষা মৌসুমে। বৃষ্টির পানিতে শিক্ষার্থীরা ভিজে যাওয়ার কারণে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি সংখ্যা কম হয়। তাই বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার আগে ভবনটির কাজ শুরু করার দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে জানতে মের্সাস রূপালী কনস্ট্রাকশনের মালিক অমল ঘোষের মুঠোফোনে কল করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তার প্রতিনিধি মো. ছগির হোসেন বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।
এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোশাফিকুর রহমান বলেন, চুক্তি অনুযায়ী কাজ শেষ না করায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি বাতিলের জন্য সুপারিশ করে প্রকল্প পরিচালকের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। নতুন ঠিকাদার নিয়োগ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে অসমাপ্ত কাজ শেষ করা হবে।