Status

বাংলাদেশ একটি পরিপূর্ণ ইসলামী রাষ্ট্র হতে যাচ্ছে -এ এম এম বাহাউদ্দীন

বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি ও দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেছেন, ‘বাংলাদেশ একটি পরিপূর্ণ ইসলামী রাষ্ট্র হতে যাচ্ছে। এদেশে ওলামা-মাশায়েখ, পীর-আউলিয়া, সুফি-দরবেশদের হাত ধরে ইসলামের প্রসার হয়েছে-হচ্ছে। সোনাকান্দা দরবার শরীফ সে কাজটি করে যাচ্ছে। এ অঞ্চলের ঘরে ঘরে তারা ইসলামের আলো পৌঁছে দিচ্ছেন।’

গত বুধবার রাতে কুমিল্লার মুরাদনগরে সোনাকান্দা দারুল হুদা দরবার শরীফের বার্ষিক ওয়াজ ও ইছালে ছাওয়াব মাহফিলের প্রথম দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন দরবারের গদ্দিনশীন পীর ও বাংলাদেশ তা’লিমে হিযবুল্লাহ’র আমীর শাহ সুফি মাওলানা মাহমুদুর রহমান।

ইনকিলাব সম্পাদক বলেন, ‘ইসলামের ইতিহাসে ওলি-আওলিয়া ব্যাপক মর্যাদা ও সম্মানের স্থান দখল করে আছেন। তারা ইসলামের মহান বাণী নিয়ে দেশে অসংখ্য আল্লাহর ওলি আগমন করেছিলেন। হজরত শাহজালাল (রহ.), হজরত শাহপরান, খানজাহান আলী (রহ.) সহ আরো বিশ্ববিখ্যাত অনেক ওলি রয়েছেন যাদের খেদমতের বদৌলতে বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে জনসংখ্যার দিক থেকে এবং মুসলমান রাষ্ট্র্র হিসেবেও তৃতীয় বৃহত্তম দেশ। এই দেশে ১৮ কোটি মুসলমানের বসবাস। ইসলামী সমাজ, ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থার দিকে দেশকে এগিয়ে নিতে আলেম সমাজের ভূমিকাও অগ্রগণ্য। আমাদের দেশে অনেক দরবার রয়েছে, যারা ইসলামের খেদমতে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।’ তিনি বলেন, ‘উগ্রবাদী ও লেবাসধারীদের হাতে এদেশের ইসলাম কখনো নিরাপদ নয়। যারা ইসলাম নিয়ে ব্যবসা করে তারা কখনো ইসলামী মূল্যবোধের রাষ্ট্র্র, সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখতে পারে না। ইসলামী চিন্তা-চেতনা লালন করা দলের হাতেই আগামীর বাংলাদেশ নিরাপদ ও সমৃদ্ধ হয়ে ওঠবে। সামনে নির্বাচন, আমাদেরকে বুঝেশুনে এগোতে হবে। আলেম সমাজকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আবেগ নয়, বাস্তববাদী হতে হবে।’

এ এম এম বাহাউদ্দীন আগামী নির্বাচন নিয়ে নিজের অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমি সাংবাদিকতা করি, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি- নির্বাচন নিয়ে যে যত নাটক করুক, কোনো নাটকে কাজ হবে না। ইসলামের জন্য কাজ করবে, দেশের আলেম সমাজকে প্রধান্য দেবে- এমন একটি রাজনৈতিক দল বিএনপি আগামী জাতীয় নির্বাচনে সুনিশ্চিতভাবে তারেক রহমানের নেতৃত্বেই ক্ষমতায় আসবে, ইনশাআল্লাহ।’ এ সময় তিনি মুরাদনগরের সাবেক মন্ত্রী শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদকে মানবিক ও ইসলামী মূল্যবোধ রক্ষার একজন অগ্রগণ্য ভূমিকার নেতা উল্লেখ করে বলেন, ‘কায়কোবাদ সাহেব একজন পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ। সামাজিক ও মানবিক কাজে এই মানুষটির ভূমিকা নিঃসন্দেহে প্রসংশনীয়। ইসলামের কাজে, দ্বীনের খেদমতে কায়কোবাদ সাহেব ও তার পরিবার দীর্ঘসময় ধরে নিয়োজিত রয়েছেন। এ অঞ্চলের মানুষ তার কাজের সঠিক মূল্যায়ন করলে তিনি আগামীতে এমপি হবেন, এমনকি মন্ত্রীও হবেন।’

ইনকিলাব সম্পাদক বলেন, ‘সম্পদ রাষ্ট্রকে উন্নত করতে পারে, আবার গরিবও করে দিতে পারে। বিশ্বের অনেক রাষ্ট্র আছে- মেক্সিকো, ব্রাজিল, সাউথ আফ্রিার অনেক দেশ আছে, যেখানে অনেক সম্পদ আছে কিন্তু সেই সম্পদ সেখানকার জনগোষ্ঠীর কোনো কাজে আসছে না, সেই সম্পদের সঠিক ব্যবহার করতে পারছে না তারা। কাজেই আমাদের যে সম্পদ আছে, সেই সম্পদের সুষম ও সঠিক ব্যবহার আমাদেরই করতে হবে। সম্পদ হচ্ছে আল্লাহর নিয়ামত। আমাদের সমুদ্রে নতুন নতুন চর জাগছে। এগুলো প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর। একজন সৎ দেশপ্রেমিক শাসকের প্রয়োজন। তুরস্কের এরদোগান, মালয়েশিয়ার মাহথির মুহাম্মদ- তারা কোনো আলেম বুজুর্গ নন। কিন্তু তারা খাঁটি দেশপ্রেমিক। তাদের হাত ধরে সেই দেশগুলো সমৃদ্ধ হচ্ছে। ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। আমাদেরও এমন একজন রাষ্ট্রনায়কের প্রয়োজন।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে জনসংখ্যা কিন্তু বাড়ছে। আবার আমাদের সম্পদের কিন্তু কমতি নেই। এই বাংলাদেশে চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের উপকূলে বিশাল ভূমি জেগে উঠছে, আরেকটি বাংলাদেশ জেগে উঠছে এবং এর নিচে লাখ লাখ কোটি টাকার খনিজ সম্পদ রয়েছে। আমাদের জনসংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি আল্লাহ তাআলা আমাদের রিজিকের ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। আল্লাহ তাআলা আমাদের এখানে বরকত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। আমাদের সম্পদের অভাব হবে না।’

ইনকিলাব সম্পাদক বলেন, ‘ইসলামী সমাজ গড়ার কারিগর হচ্ছেন আল্লাহর ওলিরা। মালেশিয়া, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়ায় রাষ্ট্রপ্রধানরা আল্লাহর ওলি ছিলেন না, কিন্তু আল্লাহর ওলিরাই নেপথ্যে বা পেছনে থেকে সেখানে শক্তিশালী ইসলামী রাষ্ট্র গঠনে ভূমিকা রেখেছেন। ইনশাআল্লাহ বাংলাদেশ এই অঞ্চলের অনেক বেশি শক্তিশালী রাষ্ট্র হবে। এই রাষ্ট্রর যে ভিত্তিটা এটি ইসলামী সমাজ ব্যবস্থায় গড়ে ওঠবে। এই ইসলামী মূল্যবোধসম্পন্ন সমাজব্যবস্থা সুশৃঙ্খল থাকবে কী থাকবে না, এটি নির্ভর করবে আমাদের দেশের হাক্কানি দরবারসহ যারা ইসলামের খেদমতে কাজ করছেন তাদের ভূমিকার ওপর। মোট কথা, ইসলামী মূল্যবোধসম্পন্ন সমাজ গড়ে তোলা ও তা রক্ষায় আলেম সমাজের বিকল্প নেই। আমাদের আলেমরাই রাষ্ট্র গঠনে সামনের সারির যোদ্ধা।’

এদেশের মুসলমানরা কোনো কিছুতেই ভীতসন্ত্রস্ত নয় উল্লেখ করে ইনকিলাব সম্পাদক বলেন, ‘এদেশের মুসলমানরা একটি স্লোগানে বিশ্বাসী। আর এটি হচ্ছেÑ ‘নারায়ে তাকবির আল্লাহ আকবার’-এই স্লোগান আমাদের সেনাবাহিনীর শক্তি, আমাদের বর্ডার গার্ডের শক্তি। এই স্লোগান বন্দুকের নলকে ভয় করে না।’ 

তিনি বলেন, ‘আজকের তরুণরাই আগামী দিনে আমাদের ইসলামিক চেতনা। জুলাই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে এই তরুণরাই এদেশের শাসন ব্যবস্থায় ভারতীয়দের সুদূরপ্রসারী যে হস্তক্ষেপ ও চক্রান্ত থাকত সেটি ভ-ুল করে দিয়েছে। এই তরুণরাই জীবন দিয়ে, রক্ত দিয়ে ৫৪ বছরের ভারতীয় গোলামি থেকে এদেশকে মুক্ত করেছে।’

এর আগে মাহফিলের সভাপতি সোনাকান্দা দরবারের পীর শাহসুফি মাওলানা মাহমুদুর রহমান তার বক্তব্যে দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদককে সময়ের বিদগ্ধ ও সাহসী সম্পাদক উল্লেখ করে বলেন, ‘তার দিক-নির্দেশনায় দেশ ও জনগণের পক্ষে অনন্য ভূমিকা রাখছে ইনকিলাব। ইসলামের ব্যাপারে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ইনকিলাব অবিচল ও আপসহীন। তার নেতৃত্বে আজকে মাদরাসা শিক্ষক-কর্মচারীদের জীবন-মান উন্নয়নে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন ব্যাপক ভূমিকা রাখছে।’

Source link

Leave a Reply

Back to top button